• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ হয়নি ৪ বছরেও

  এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:২৫
জেলা জজ আদালত
ফেনী জেলা জজ আদালত ( ছবি : সংগৃহীত )

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার ৪ বছর পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামিরা। নির্যাতিতা ওই ছাত্রী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার একটি কলেজে অধ্যয়নরত।

ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম দেবপুর গ্রামের মৃত ছবু মিয়ার ছেলে আবুল খায়ের ছোটন ওরফে ছোট্ট মিয়ার সঙ্গে ফুলগাজীর জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয় তার ভগ্নিপতি আবুল বশর। তিনি ফুলগাজী উপজেলার ফেনাপুষ্কনি এলাকার জমিদার মিয়ার ছেলে।

স্কুলছাত্রীর পরিবার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছোটন ও বশর ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। তার শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে ও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। ঘটনার দুদিন পর ফুলগাজী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

এ ঘটনায় ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আক্তারের নেতৃত্বে ঢাকায়ও মানববন্ধন হয়।

পরে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ১৮ দিন পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি মহিপালে রেখে পালিয়ে যায় ছোটন ও আবুল বশর। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি আবুল খায়ের ছোটন, তার ভগ্নিপতি আবুল বশর ও বোন হাসিনা আক্তারকে আসামি করে স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে ফুলগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তে আবুল বশরের ভাবি সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর কাশিমপুর গ্রামের শাহ আলমের স্ত্রী নার্গিস আক্তারের (৪০) সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলে। পুলিশ চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০১৬ সালে ২৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ। আদালত একই বছরের ১২ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করে।

তদন্ত কর্মকর্তা আলোচিত এ মামলায় আবুল বশরকে গ্রেফতার করলেও ১ নম্বর অভিযুক্ত আসামি আবুল খায়ের ছোটন ও তার বোন হাসিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বর্তমানে আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছে। মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তৎকালীন মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কাজী মো. আলমসহ ১২ জনকে সাক্ষী করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বাদী তার মেয়ে ও এক নিকট আত্মীয় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। আগামী ৩ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

এ দিকে স্থানীয়রা জানায়, আবুল বশর ভারতে মানবপাচার ও গরুপাচারের সঙ্গে জড়িত। টাকার প্রভাবে একের পর এক অন্যায় করেও ধামাচাপা দেয়। এতে করে অনেকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন : বাবার সঙ্গে অভিমান করে ছেলের আত্মহত্যা

নির্যাতিতার বোন জানান, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ ও ইনজেকশনের ফলে তার বোনের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে। ঘটনার ৪ বছর পার হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি সে। তার শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখে এখনো আঁতকে উঠে। ঘটনার পর তার মা দুইবার স্ট্রোক করেছে। দরিদ্র কৃষক বাবাও চিকিৎসার খরচ চালাতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন।

তিনি আরও জানান, আবুল বশর নানাভাবে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

ফেনী জজ কোর্টের পিপি হাফেজ আহম্মদ জানান, এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ইতোমধ্যে ৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড