• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চার ভাইয়ের জীবনযুদ্ধ

  হারুন আনসারী, ফরিদপুর

১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:১৫
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চার ভাই
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চার ভাই (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের আটকানিয়া গ্রামের মৃত আবু বকর মুন্সির চার ছেলেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। জন্মের পর শৈশবেই একে একে তারা দৃষ্টি শক্তি হারান। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই চার ভাইকে পরিণত বয়সে কঠিন জীবনযুদ্ধে সম্মুখীন হতে হয়েছে।

পরিবারের নারী ও শিশুদের সহায়তায় গাভী পালন করে তারা এখনও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কঠিন এই বাস্তবতার সম্মুখীন চার ভাই হলেন- আব্দুল আজিজ মুন্সি (৫৫), ওহিদুজ্জামান (৫২), ইকবাল হোসেন (৪৭) ও জামাল মুন্সি (৪৩)। সোনিয়া আক্তার (৩৯) নামে তাদের এক বোনের কয়েক বছর আগে তার বিয়ে হয়ে গেছে।

আব্দুল আজিজ মুন্সি জানান, জন্মের পর তারা চার ভাই শিশুকালেই একে একে দৃষ্টি শক্তি হারান। তার বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। অর্থের অভাবে কোনো চিকিৎসাই করাতে পারেননি। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ৭ শতাংশ জমির ওপর তারা চার ভাই চারটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। এরই মধ্যে সকলে বিয়ে করেছেন।

তিনি জানান, অন্ধ হওয়ায় তারা কেউই ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে পারেন না। তাই ছোটবেলা থেকে গরু-ছাগল পালন করতে থাকেন। এভাবে তারা চার ভাই এখন চারটি গরুর গোয়ালের মালিক। প্রত্যেকেরই দুটি করে গাভী ও বাছুর রয়েছে। এ থেকে যা আয় হয় তাই দিয়েই কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

আব্দুল আজিজ জানান, মূলত এখন এই গাভী পালনে তাদের স্ত্রী সন্তানেরা অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। ঘাস কাটা ও দুধ দোহানোর কাজে নারী ও শিশুরা অনেক সাহায্য করেন। দুধ দোহানোর পর বাজারে নিয়ে বিক্রি ও টাকা-পয়সা গুনে নেওয়ার কাজে বড় সহায়ক তাদের ছোট ছোট সন্তানেরা। শিশুদের হাত ধরেই বাজারে তারা দুধ বিক্রি করতে যান।

আবু বকর মুন্সির ছোট ছেলে জামাল মুন্সি জানান, আগে একটাই গোয়াল ছিল। সব ভাই মিলে একসঙ্গে গাভী পালতেন। একে একে গোয়ালে গরু-বাছুর বেড়েছে। ভাইদের আলাদা ঘর-সংসার হয়েছে। পরিবারে যুক্ত হয়েছেন নারী সদস্য। তাদেরও সন্তান হয়েছে। এখন তারা পৃথক গোয়াল করে নিয়েছেন।

পরিবারের এই ঘানি টানতে তাদের শিশু সন্তানেরাও এই জীবন সংগ্রামে সামিল হয়েছে। তাদেরও স্কুল কিংবা মাদরাসায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি বাপ-চাচাদের মতোই।

আজিজ মুন্সি বলেন, কষ্টশিষ্টে আমাদের জীবন চলে যাচ্ছে। তবে সন্তানদের ভবিষ্যত তারা গড়ে যেতে পারছি না। আমাদের মতো ওরাও পড়ালেখা করার সুযোগ পায়নি।

এ ব্যাপারে কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, একই পরিবারের চার ভাই এমন অন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সত্যিকারভাবেই অনেক দুঃখকষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার। তবে তাদের জন্য বিশেষ কোনো প্রণোদনা প্রদান করলে কিংবা কোনো মহৎ ব্যক্তি তাদের আরও একটু উন্নত খামারের ব্যবস্থা করতে দিতে পারলে ভাল হতো।

আরও পড়ুন : ভৌতিক বিদ্যুৎ বিলে দিশেহারা সেচ পাম্প মালিকরা

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, সরকার তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছে। তাদের সার্বিক উন্নতির জন্য আমরা চেষ্টা করব। যদি তাদের দৃষ্টি শক্তি ফেরানোর চিকিৎসা সম্ভব হয় তাহলে আমরা তারও উদ্যোগ নেব।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড