ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আমাদের নির্যাতন করে, মালিকরা টাকা দেয় না ঠিকমতো। কিছু বললেই মালিক-মহাজনরা বলে তোমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছ, তোমাদের টাকা কীসের। তোমরা চলে যাও, তোমরা মুসলমান হিন্দুস্থানে থাকতে পারবা না। এমন বলে।
গেল এক মাসের বেশি সময় ধরে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ঝুপিতে থাকা অবস্থায় আমাদের ধরে নিয়ে যায় স্থানীয়রা, অনেক সময় ওই দেশের পুলিশ মারধর করে। এমন কষ্টের কথা জানান বিজিবির হাতে আটক কয়েকজন অুপ্রবেশকারী।
তাদের মতো নানা ধরনের সমস্যার শিকার হয়ে ক্রমেই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাড়ছে নাগরিকত্ব বিহীন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা।
বিজিবির তথ্য মতে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের মাটিলা, লেবুতলা, মকধ্বরপুর, বাশবাড়ি, পলিয়ানপুরসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরু, কর্নাটক, উত্তর প্রদেশ ও আসামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০৩ জন অনুপ্রবেশকারী বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আটককৃতদের কেউ ২ বছর, কেউ ৫ থেকে ১০ বছর কেউবা তার অনেক আগে পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল।
সীমান্তের লেবুতলা ও পলিয়ানপুর এলাকার মানুষ জানান, ভারত থেকে সবসময়ই মানুষ আসে। মাঝরাত্রি ও সকালের দিকে বেশি লোক ভারত থেকে দেশে আসে ইছামতি নদী পার হয়ে কাঁটাতার বিহীন এলাকা দিয়ে। তবে বিকালের দিকেও মাঝে মধ্যে লোক আসে। বিজিবি যে পাশে থাকে বিপরীত পাশ দিয়ে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে লোক ঢুকে পড়ে। ভারত থেকে এভাবে যদি লোক আসে সেটা তো আমাদের সমস্যাই।
সীমান্তের মাটিলা মসজিদের ইমাম নুরুননবী জানান, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লোক আসে ভারত থেকে। অনেক সময় তারা সীমানা ক্রস করে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কেউ ধরা পড়ে কেউ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এরা মূলত এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে।
বিজিবির হাতে আটক আদালতে সোপর্দ হওয়া কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী জানান, আমাদের কোনো নাগরিকত্ব ছিল না। ভারতেও গিয়েছিলাম পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায়। এখন দালাল ধরে চলে এসেছি। কারণ মালিকরা আমাদের টাকা পয়সা দেয় না।
এ বিষয়ে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল আলম জানান, আটক অনুপ্রবেশকারীদের বিজিবি থানায় এনে মামলা দিয়ে আমাদের কাছে দিয়ে দিচ্ছে। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের মুখপাত্র আমিনুর রহমান টুকু জানান, আমরা জেনেছি বিজিবির সঙ্গেও কথা বলেছি। এনআরসি অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিকত্ব ঘোষণার পর থেকে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ছে। এরা সাধারণত মুসলমান নাগরিক। তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ অবশ্যই ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও এর সামাধান করা যেতে পারে। তা না হলে এ দেশে এসে সহায়সম্বলহীন মানুষগুলো নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেছে নেবে। অনেক নারীই হয়তো সেখানে যৌন পেশায় ছিল। তারা যদি কোনো রোগব্যাধী নিয়ে আসে তাহলে সেটা তো বড় সমস্যা তৈরি করবে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, এটি অত্যন্ত আতঙ্কজনক বিষয়। আমরা জেনেছি, জেলখানায় আটক অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। মূলত ভারতে থাকা অবস্থায় ওই দেশেরই বিভিন্ন পর্যায়ের লোক খোঁজাখুঁজি করছে কারা নাগরিকত্ব বিহীন অবস্থায় আছে এবং অন্য দেশের নাগরিক আছে কি না। এ ধরনের লোকদের তাড়িয়ে দিতে বাড়ির মালিক কিংবা যাদের অধীনে তারা কাজ করছে তাদের চাপ সৃষ্টি করছে, ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর সমাধান খুবই কঠিন যেহেতু তাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ-৫৮ বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান জানান, দিনে ও রাতে বিভিন্ন সময় আমরা অনুপ্রবেশকারীদের আটক করছি। এখন পর্যন্ত যারা এ দেশে এসেছে তাদের বেশির ভাগই মুসলমান। তারা জানিয়েছে মূলত এনআরসি বা ভারতীয় নাগরিক পুঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আতঙ্কে ভারত ও বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত ক্রস করছে। বিষয়টি হেড কোয়ার্টারকে জানিয়েছি।
তিনি আরও জানান, অনেকেই আছে যারা অনেক বছর আগে এ দেশে সহায়সম্বল বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল, অনেকেরই পারিবারিক আত্মীয়স্বজন কিংবা কিছু সম্পদ এদেশে আছে। তো যাদের কিছু নেই তারা কোথায় থাকবে, কী খাবে, কী করবে এটা তো ভাবারই বিষয়। আমরা তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর সতর্ক অবস্থানে আছি। সীমান্ত এলাকায় মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
এ দিকে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্ম বিভাগের শিক্ষক তিনেশ্বরী দেবী জানান, এনআরসি সম্পূর্ণই বড় রাজনৈতিক ব্যাপার। ভারতে অনেক মানুষ আছে যাদের নাগরিকত্ব নেই। এনআরসি না পাওয়া তাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার, এর মধ্যে কাঁটাতার বিহীন এলাকা রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার। কাঁটাতার বিহীন এলাকা দিয়েই বেশি অনুপ্রবেশ করছে। আটক অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশেরই বাড়ি বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, মাদারীপুর কিংবা খুলনা এলাকায় বলে জানা গেছে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড