• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চুয়াডাঙ্গার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে চায়না কমলা

  সেলিম রেজা, চুয়াডাঙ্গা

১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:২২

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নিধিকুন্ড গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক খান। ছোট থেকেই তার নেশা নিত্য নতুন ফলের বাগান করা। দেশি-বিদেশি নানা জাতের নতুন ফল চাষ করে এবার তিনি চায়না কমলা লেবুর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। রীতিমতো সারা দেশে চমকও সৃষ্টি করেছেন তিনি।

শুরুর গল্পটা ২০১৫ সালের শেষ দিকে। বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল খুলনাতে। সেখানে গিয়ে একটি বাড়ির আঙিনায় এ চায়না কমলার গাছ দেখতে পান তিনি। সেখান থেকেই ২০টি ডগা সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে কলম করেন। পরে সে চারা থেকে কলমের মাধ্যমে আরও চারা উৎপাদন করেন তিনি। পরের বছর শুরু করেন গাছের চারা রোপণের কাজ। নিজের পতিত একখণ্ড জমিতে প্রায় ১০০টি গাছের চারা রোপণ করেন এই কমলা চাষি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওমর ফারুককে।

গাছ লাগানোর পরের বছর থেকেই ফল পেতে শুরু করেন তিনি। প্রথমবার আশানুরূপ ফলন না পেলেও তার পরের বছর থেকে ফলে ফলে ভরে ওঠে পুরো কমলার বাগান। এ বছরও প্রত্যাশার তুলনায় ভালো ফল পেয়েছেন তিনি।

চায়না কমলা চাষি ওমর ফারুক খান বলেন, তিনি একজন মৌসুমি সবজি চাষি। আজ থেকে ৬ থেকে ৭ বছর আগে অনেকটাই শখের বসে একটি ছোট্ট অনাবাদী জমিতে একটি নার্সারি শুরু করে। সরকারের কৃষি বিভাগের কোনো শিক্ষা-সহযোগিতা ছাড়াই তিলে তিলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের এই বাণিজ্যিক ‘খান নার্সারি’।

নিজের নেশা থেকে নতুন নতুন ফল উৎপাদন করার প্রচেষ্টায় চায়না কমলার বাণিজ্যিক চাষ করেছেন তিনি। নিজ আগ্রহ ও শখ থেকে তা আজ বড় সফলতায় রূপ নিয়েছে। দেশের কোথাও এক সঙ্গে এত বড় চায়না কমলার বাগান আর না থাকায় দেশের মধ্যে এটিই একমাত্র ও অন্যতম চায়না কমলার বাগান বলে দাবি তার।

তিনি আরও জানান, কমলা চাষে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। একটি গাছে গত বছর গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ কেজি কমলা ধরেছিল। ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা বাগানে এসে কিনে নিয়ে গেছে। তাতে এক‌টি গাছে গড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকার কমলা লেবু বিক্রি হয়েছিল। তবে এ বছর এখনো কমলা বিক্রির উপযোগী হয়নি। আর কিছুদিন পর থেকে বিক্রি শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটা গাছে ঝুলে রয়েছে সবুজ ও হলুদ বর্ণের চায়না কমলা। সুস্বাদু এ ফলের ভারে নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা প্রতিটি গাছের। সবুজ পাতার মধ্যে হলুদ ফলের উঁকি যে কারও দৃষ্টি কাড়ে নিঃসন্দেহে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে উৎসুক লোকজন। বাগান দেখে মুগ্ধতার শ্বাস ফেলছেন তারা।

কমলার বাগান দেখতে আসা লতিফ মোল্লা জানান, তিনি প্রায়ই ভিন্ন ভিন্ন জাতের বাগান পরিদর্শন করে থাকেন। দেশের আর কোথাও এমন বাণিজ্যিকভাবে এত বড় কমলার বাগান দেখেননি তিনি।

স্থানীয় আব্দুল মালেক বলেন, বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বড় চায়না কমলার বাগান। এ বাগান থেকেই এখন দেশের চাহিদাও পূরণ সম্ভব। তাই এ জাতের কমলার নামের আগে চায়না শব্দ ব্যবহার না করে বাংলা কমলা বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগ সবসময়ই এ ধরনের ভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদনে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। ওমর ফারুকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই চায়না কমলা বাগান করতে শুরু থেকেই তাকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার অন্য কৃষকদেরও এরকম ভিন্ন জাতের লাভজনক ফসল ফলানোর জন্য নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড