নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে জামালপুর ও পোরশা থানার গোন্দইল গ্রামের মাঠের প্রায় ৬০ বিঘা জমির আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এতে কৃষকদের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) গভীর রাতে ওই এলাকার ১১ জন আম চাষির প্রায় ৬০ বিঘা জমির প্রায় ১০ হাজার আমগাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তবে কী কারণে আমগাছের সঙ্গে এমন শত্রুতা করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কল্যাণ চৌধূরী ও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর সাপাহার উপজেলা ও পোরশা থানা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। পানির সমস্যার কারণে বছরের একটি মাত্র ফসল বৃষ্টিনির্ভর আমনের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া গত বছর ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে আম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন চাষিরা। বর্তমানে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে সাপাহার উপজেলা। প্রতি বছর এখানে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান গড়ে উঠছে। ধান চাষে লোকসান হওয়ায় চাষিরা জমি ইজারা নিয়ে আমবাগান করছেন।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে জামালপুর ও গোন্দইল গ্রামের মাঠে ১১ আমচাষির প্রায় ৬০ বিঘা জমির প্রায় ১০ হাজার আমগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বুধবার সকালে মালিকরা বাগানে গিয়ে আম গাছের অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কে বা কারা এসব গাছ কেটে ফেলেছে তা অনুমান করতে পারছেন না চাষিরা।
এরপর সংবাদ জানা-জানি হলে এলাকার শত শত উৎসুক জনতা ওইসব বাগান এলাকায় ভিড় জমায়।
কে বা কারা এসব গাছ কেটে ফেলেছে- এ বিষয়ে বাগান মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সামনের মৌসুমে প্রায় সব গাছগুলোতে আম আসত। আমের সিজনের পূর্ব মুহূর্তে কে বা কারা এবং কেন তাদের বাগানের গাছগুলো কেটে ফেলেছে, তা আমাদের জানা নেই। কোনো বাগান মালিকের সঙ্গে হয়তো তাদের শত্রুতা থাকতে পারে। এ অবস্থায় যেন তাদের কেউ শনাক্ত করতে না পারে তাই তারা প্রতিপক্ষের ক্ষতি করতে গিয়ে নিজেদের বাঁচানোর কৌশল হিসেবে অন্যেরও গাছ কেটে ফেলেছে।
উপজেলার আমচাষিদের দাবি, কেটে ফেলা আমগাছগুলো আগামী মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার আম বিক্রি হতো। হঠাৎ করে বিরাট ধরনের ক্ষতি সাধন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আমচাষি ফটিক চন্দ্র রায় বলেন, আমার বাড়ি সাপাহার থানার জামালপুর গ্রামে। কিন্তু আমার আমবাগান পোরশা থানার গোন্দইল গ্রামে। প্রতি বিঘা জমি ১৩ হাজার টাকা হিসেবে চার বিঘা জমি ১১ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। সেখানে আম্রপালির বাগান করেছি। আগামী বছর প্রায় ১ লাখ ২০-৩০ হাজার টাকার মতো আম বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু রাতের মধ্যে সব আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক চাষি রায়হান সিদ্দিক বলেন, ১৪ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ১২ বছরের জন্য ১৮ বিঘা জমি ইজারা নিয়েছি। গত দেড় বছরে আমের পরিচর্যা করতে গিয়ে প্রায় ৯ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানে আম্রপালি ও বারি জাতের আমের গাছ ছিল। তবে আম্রপালি গাছের সংখ্যাই বেশি। আগামী বছর বাগান থেকে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার আম বিক্রি হতো। তবে কী কারণে কারা এমন ক্ষতি করেছে তা বলতে পারছি না।
সাপাহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। রাতের আঁধারে বাগান থেকে অসংখ্য আমগাছ কেটে নষ্ট করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমচাষিরা। তবে বেশিরভাগ বাগানই পোরশা থানার মধ্যে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড