সারাদেশ ডেস্ক
চোখে জল নিয়ে চাঁদাবাজিসহ ব্যবসায়ীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগে বদলি হয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিদায় নিলেন বহুল আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে বিদায়ী সংবর্ধনাকালে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের কাছে তিনি সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় বেলায় তিনি বলেন, সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছি। তদন্তেই বের হয়ে আসবে এটি। এ সময় পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে এসপি হারুন বলেন, ‘আমার কোনো সহকর্মীকে লক্ষ্য করে কেউ পিস্তল তাক করবে, এটা তো হতে পারে না। তাই ওই ব্যক্তি কত বড় সম্পদশালী বা শক্তিশালী তা আমি দেখিনি। কিন্তু উল্টো বলা হয়েছে, আমি চাঁদা দাবি করেছি। মূল বিষয়টা হলো- মামলা হওয়ার পর পুলিশ রেইড দিয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার (শওকত আজিজের) ছেলেকে থানায় আনা হয়েছিল। এ সময় তার মা স্বেচ্ছায় এসেছে। এসব আপনারা সব জানেন। তবুও আমি বিদায় বেলায় এসব আপনাদের জানালাম।’
এটি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নয় উল্লেখ করে এসপি হারুন আরও বলেন, কথায় নয়, বরং আমি মন থেকে যেটা চেয়েছি সেটাই করেছি। এতে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ইমেজও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এসপি হারুন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে থাকাকালীন মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমি কাজ করেছি। নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। কিছু ভুল থাকতেই পারে আমাদের। তবুও যারা ভুল করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিয়েছি। এই ব্যবস্থা গ্রহণকালে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের পক্ষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এমপি-মন্ত্রী কেউ তদবির করেননি। এটা আমাদের অনেক ভালো লেগেছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, র্যাব-১১ এর সিইও কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ, গত শনিবার (১ নভেম্বর) পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের স্ত্রী ও ছেলেকে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে নেওয়া হয়। এর দুই দিনের মাথায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদকে বদলি করা হয়। ওই সময় এক সংবাদ সম্মেলনে হারুন-অর-রশীদ বলেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, এক হাজার ২শ পিস ইয়াবা, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদসহ ৪৮টি বিয়ার ক্যান উদ্ধার করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শওকত আজিজ ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। এ সময় ওই গাড়িতে তার স্ত্রী ও ছেলে ছিলেন। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে।
এর পরদিন রবিবার (২ নভেম্বর) বিকালে শওকত আজিজ অভিযোগ করেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলশ্রুতিতে আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন এসপি হারুন। এ কারণেই নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে আমার অনুপস্থিতিতে স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান তিনি। আর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা ক্লাব থেকে আমার গাড়িটি হারুন-অর-রশীদের লোকজন নিয়ে একটি নাটক সাজায়।
এ দিকে, নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠিত এই সভায় কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড