• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৬২ বছর বয়সেও যেন দুঃখের অন্ত নেই ছালমা খাতুনের

  চন্দনাইশ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

২৮ অক্টোবর ২০১৯, ২০:২১
ছালমা খাতুন
অসহায় বৃদ্ধা কৃষি শ্রমিক ছালমা খাতুন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কৃষক বললে এখনো বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন পুরুষের ছবিই অধিকাংশ মানুষের চোখে ভেসে ওঠে। তবে গ্রামে বসবাসরত প্রতিটি নারীই নিজ নিজ পরিবারে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। প্রত্যক্ষভাবে কৃষি জমিতে কাজ করা নারীর সংখ্যা কম হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক নারীকে এই খাতে শ্রম দিতে হয়। হতদরিদ্র, অসহায় ও ধারদেনা করে চলা পরিবার চালিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন কাজে অংশ নেন। নারীদের এই রোজগার পরিবারের অভাব অনটন ঠেকাতে সহায়তা করে।

তেমনই একজন নারী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া এলাকায় বসবাসরত কৃষি শ্রমিক বৃদ্ধা ছালমা খাতুন। ৬২ বছর বয়সেও তাঁর দুঃখের যেন কোনো শেষ নেই।

চার সদস্যের পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খর স্রোতা শঙ্খনদী তীরের চরে সবজি চাষ করেন তিনি। ওই সবজি চাষে ক্ষেতে হাড়ভাঙা খাটুনির পর যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

প্রখর রৌদ্রতেজ উপেক্ষা করে কাজ করার সময় শঙ্খচরে কথা হয় ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধা নারী ছালমা খাতুনের সঙ্গে। আলাপকালে জানা যায়, বৃদ্ধা ছালমা খাতুনের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান ইউছুফ আলী বিগত দশ বছর আগে মারা যায়। এর দুই বছর পর স্বামী জরিফ আলীও মারা যান। এরপর একমাত্র কন্যা হোসনে আরা ও মৃত ছেলের দুই সন্তান মো. জিহান উদ্দীন এবং মোহাম্মদ হৃদয়কে নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

জীবিকার তাগিদে বেছে নেন কৃষি শ্রমিকের মত হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ। প্রতিদিন খুব ভোরে ক্ষেতে চলে যান। ক্ষেত তৈরি করা, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, চারাগাছ বাড়ার সময় পরিচর্যা করাসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে শঙ্খচরে কাজ না থাকায় ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়। এক সময় কৃষি কাজে লজ্জা ও কষ্ট হলেও এখন আর তেমন লজ্জা হয় না তবে কষ্ট সয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটায় বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলেও অর্থাভাবে ভাঙাচোরা ঘরটি দীর্ঘদিন যাবত মেরামত করতে না পারায় বর্ষা মৌসুমে ঘরে থাকতে খুব কষ্ট হয়। তিনি বলেন, ঘরে বিবাহযোগ্য একটি মেয়ে আছে। কৃষি শ্রমিকের কাজ করে যে মজুরি পাই তা দিয়ে চার সদস্যের পরিবারের আহার যোগাব নাকি ঘর মেরামত করবো।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে ১৯৫৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া ছালমা খাতুন এ বছর বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন। তিনি বলেন, অর্থাভাবে মেয়েকে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়াতে পারিনি। বিবাহযোগ্য মেয়েকে ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিতে গেলেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পিতৃহীন দুই নাতি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে এখন রাজ মিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন। যে বয়সে তাদের হাতে থাকার কথা বই, খাতা ও কলম সেই বয়সে রাজ মিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে পরিবারের হাল ধরতে হচ্ছে এতিম দুই শিশুকে। ভাঙাচোড়া ঘরটি মেরামত করতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন অসহায় বৃদ্ধা কৃষি শ্রমিক ছালমা খাতুন।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড