• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি (পর্ব- ০৩)

  ক্যারিয়ার ডেস্ক

২৮ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৫
সাইফুল হুদা নাজাত

প্রিলি-রিটেনের রেজাল্টের পর বারবার পিডিএফ ওপেন করে নিজের রোলটা চেক করতাম। আর ৩৭তম চূড়ান্ত ফলের পর তো পরমানন্দে চোখ হতে ঘুমই চলে গিয়েছিল কিছু দিনের জন্যে। সে কী এক অসামান্য আনন্দ তার কিছুটা আজ হয়তো কেউ কেউ টের পাচ্ছেন যারা প্রথমবারের মতো প্রিলি পাস করলেন। তাদের জন্যই আমার এ লেখা।

যারা প্রথমবার রিটেন দিচ্ছেন বা প্রিলি পাস করবেন কিনা নিশ্চিত ছিলেন না, তাদের সম্ভবত তেমন কিছুই পড়াশোনা করা হয়নি। ধরে নিই, কিছুই পড়াশোনা হয়নি। তাহলে সহজে পরামর্শ দেওয়া ও নেওয়া যাবে।

ধরুন, আপনি সর্বোচ্চ চার মাস সময় পাবেন রিটেন প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। এর বেশি সময় পেলে সেটা হবে বোনাস। যেখানে স্ট্র্যাটেজিক মেথডে না এগুলে এই বিশাল সিলেবাসের সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা।

সে কারণেই আপনার প্রিপারেশন নেওয়ার ধরন হতে হবে qualitive, not quantative. বেশি পড়বেন ঠিক আছে তবে বুঝে-শুনে। সবসময় যা পড়বেন, তা খাতায় কিভাবে প্রেজেন্ট করবেন সেটা ভেবে পড়া উচিত।

এখানে আমি বিষয়ভিত্তিক কিছু বইয়ের সাজেশন্স দিব। পাশাপাশি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করব।

★ গণিত ★

বই / গাইড :

(১) ওরাকল/ অ্যাসিউরেন্স গণিত গাইড

(২) নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বই + গাইড

(৩) সম্ভাব্যতা+বিন্যাস+সমাবেশের জন্য এইচ.এস.সি উচ্চতর গণিত প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (ঐচ্ছিক)

যাদের গণিতে ভালো দখল নেই, তাদের জন্য মাত্র ৫০ নম্বরের এই গণিত পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বড় মনে হবে। তারা চাইলে এই গণিত চর্চা করেই দুই-তিন মাস কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনি হয়তো সময় পাবেন সর্বোচ্চ ১২-১৪ দিন। তাই অন্যান্য প্রিপারেশনের ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহে ৪-৫ দিন দুই-এক ঘণ্টা করে গণিতের জন্য বরাদ্দ রাখতেই হবে।

আপনার গণিতে টার্গেট মার্ক কত হবে তা নিয়ে প্রথমেই ভাববার দরকার নেই। বরং বিগত বছরের প্রশ্ন ঘেঁটে বারবার আসা টপিকগুলো একটা একটা করে শেষ করুন।

আপনার প্রথম টপিক হতে পারে- মান নির্ণয় ও উৎপাদক। এ টপিকে কমপক্ষে ০৫ নম্বর থাকবেই। এই টপিকটি প্রথম চর্চা করুন নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই হতে। তারপর বিসিএস গাইড হতে। সবশেষে নবম-দশম উচ্চতর গণিত বই হতে। অন্য পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ৪-৫ দিন সময় নিয়ে এই একটি টপিক আপনি শেষ করতে পারেন।

আপনার পরের টপিক হতে পারে- একঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণ। ৫ নম্বর আশা করা যায় এখান হতে। আগের টপিকের স্টাইলেই পড়ুন। এখানেও অন্য পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ৪-৫ দিন সময় দিতে পারেন।

তারপর চর্চা করতে পারেন-

সেট ও ভেনচিত্র (০৫)

সূচক ও লগারিদম (০৫)

ত্রিকোণমিতি (০৫)

পরিমিতি{ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ} (০৫)

উপর্যুক্ত এ ছয়টি টপিক থেকে ৫টি টপিকে গণিত আসবেই এবং এগুলো সবচেয়ে সহজ টপিক। তো এগুলো চর্চা করেই আপনি গণিতে ২৫ পেয়ে যেতে পারেন।

এরপর লাভ-ক্ষতি, ঐকিক, সুদকষা- এ তিনটি টপিক চর্চা করলে আরও ০৫ নম্বর পাচ্ছেন। এখানে কারও কারও একটু বেশি চর্চা করার প্রয়োজন হতে পারে।

কার্তেজীয় জ্যামিতি (০৫)

সম্ভাব্যতা/বিন্যাস-সমাবেশ (০৫)

উপপাদ্য অনুসরণে প্রমাণ (০৫)

উপর্যুক্ত টপিকগুলো সঠিকভাবে চর্চা করলেই আপনার ৪০-৪৫ নম্বরের নিচে কমন পড়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়গুলোর মাঝে কয়েকটু টপিক আছে কিছুটা জটিল, শ্রমসাধ্য ও সময়সাধ্য। ধৈর্য ধরে প্রস্তুতি নিন।

★ মানসিক দক্ষতা ★

গাইড :

(১) ওরাকল (বাজারে আরো ভালো বই থাকতে পারে, খোঁজ নিন।)

মানসিক দক্ষতার ৫০ মার্কসে কেউ কেউ ৪৫+ পান। আবার অনেকে ৩৫ নম্বরেরও নিচে পান। এর মূল কারণ এ বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেওয়া বা না নেওয়া। সব বিষয়ের বৃহৎ সিলেবাসের চাপে থাকার কারণে অনেকেই মানসিক দক্ষতায় ততটা নজর দেওয়ার সুযোগ পান না।

কিন্তু এখানে সতর্কভাবে একটু বেশি সময় দিলেই স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ নম্বর পর্যন্ত বেশি পাওয়া সম্ভব হবে।

করণীয় :

(ক) বিগত প্রিলি ও রিটেন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমাধান। ৩০-৪০% কোয়েশ্চেন রিপিট হয়ে থাকে।

(খ) বিগত প্রশ্নগুলো এনালাইসিস করে ইম্পর্টেন্ট টপিকগুলো বুঝতে হবে।

(গ) সম্ভবত কনফিডেন্স পাবলিকেশন্সের একটি মানসিক দক্ষতা গাইড আছে। আমি যখন পেয়েছিলাম তাতে ১০০ টেকনিক দেওয়া ছিল। যার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টেকনিক আছে যা চর্চা করলে বেশ কাজে আসবে।

(ঘ) পরীক্ষার হলে বসে সব সমাধান করে ফেলবেন- এমন মনোভাব দূর করে কিছু টাইপ কোয়েশ্চেনের উত্তর মুখস্থ রাখা যেতে পারে। যেমনঃ চিত্রটিতে কয়টি ত্রিভুজ আছে? এই প্রশ্নের ১৫/২০টি কমন ফরম্যাট গাইডে আছে। ঘুরে ফিরে এখান থেকেই কমন পরে।

(ঙ) Verbal Reasoning-এ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন প্রশ্ন আসে, তা নিয়ে টেনসড হবেন না। হুট করে অর্ধেক ডিকশনারি কারোরই মুখস্ত করা সম্ভব না।

★ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ★

বই / গাইড :

(১) ওরাকল

(২) কম্পিউটার শিক্ষা (নবম-দশম শ্রেণির বই)

* এটি কিন্তু আবশ্যিক ICT বই নয়

(৩) নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান

(৪) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ICT গাইড

কেউ যদি শুধু ওরাকল পড়তে চান, তাতেও সমস্যা নেই। বাকি বইগুলো জাস্ট সাপোর্ট হিসেবে নিতে পারেন। যে বিষয়টি গাইড হতে বুঝতে পারছেন না, জাস্ট সেগুলো বোর্ড বই হতে পড়ে সহজে বুঝে নিতে পারেন। প্রয়োজনে গুগলিং বা ইউটিউবিং করেও অনেক ক্রিটিক্যাল জিনিস সহজে বুঝে নিতে পারবেন। যেমনঃ অন্য রকম পাঠশালা(ইউটিউব চ্যানেল)।

টার্গেট মার্কস :

সাধারণ বিজ্ঞান- ৪০-৫০ (৬০)

কম্পিউটার- ২০-২২ (২৫)

ইলেকট্রিক্যাল- ১০-১৩ (১৫)

বিজ্ঞান বিষয়ে সাধারণত ৭০-৯০ নম্বর পর্যন্ত উঠে থাকে। এ বিষয়ে আমি খুব বেশি গাইড লাইন দিব না। কারণ আমি নিজে মানবিক শাখার ছাত্র ছিলাম। তাই আমার স্ট্র্যাটেজি একটু ভিন্ন ছিল। বিজ্ঞান বিষয়েও পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া খুব ডিফিকাল্ট। এলোমেলোভাবে এক মাস পড়লেও মনে হবে কিছুই পড়িনি।

করণীয় :

(ক) বিগত বছরের প্রশ্ন স্টাডি করলেই ৫০% এরও বেশি প্রশ্ন কমন পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে কম্পিউটার ও ইলেকট্রিকে।

(খ) কোয়েশ্চেনের উত্তর টু-দি-পয়েন্ট হওয়া চাই। মনে রাখবেন, শুধু এ বিষয়টিতেই মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা একদম হারাম।

(গ) বেশ কিছু প্রশ্নে চিত্র না চাইলেও চিত্র দিতে হবে। কারণ অনেকেই সেগুলো ব্যবহার করবে। পাশাপাশি কোথাও 'বিক্রিয়া' উপস্থাপন করার থাকলে তা দেওয়া উচিত।

(ঘ) মানবিক শাখার ছাত্ররা বিজ্ঞানের শিক্ষক/ছাত্রদের কাছ হতে ডিফিকাল্ট টপিকগুলো বুঝে নিতে অবহেলা করবেন না।

(ঙ) পরীক্ষায় উত্তর করার সময় আমি কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক পার্ট আগে আন্সার করেছি। কারণ এখানে সৃজনশীল প্রশ্ন হয় না এবং প্রশ্ন কমন পড়লে ৯০% নম্বর তোলা সম্ভব। যা খাতার পরবর্তী অংশের উপরও গুড ইমপ্রেশন ফেলবে।

(চ) বিগত বছরের প্রশ্ন স্টাডি করে কিছু চ্যাপ্টার আছে, যেগুলো একেবারে বাদ দিয়ে দিতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনে সিনিয়রদের পরামর্শ নিন।

(ছ) বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয় নোট করে পড়বেন কারণ গাইডে হয়তো চিত্র নেই, কিন্তু অন্য কোনো বইয়ে হয়তো আছে। বাড়তি বইগুলো হতে উত্তর পছন্দ হলে সেগুলো একটি খাতায় নোট করে নেবেন। তাতে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝাটাও কমবে।

শুভ কামনায়

সাইফুল হুদা নাজাত

৩৭ তম বিসিএস (প্রশাসন)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড