• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তৃতীয় শক্তির উত্থান বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য

বিএনপির নতুন চালিকাশক্তি কামাল-বি. চৌধুরী : আজ বৈঠক  

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ অক্টোবর ২০১৮, ১০:১৩
ছবি : জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া

দেশের অন্যতম বিরোধী শক্তি বিএনপির নতুন চালিকাশক্তি হতে চলেছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। সরকার বিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সামনে রেখে দলটি এখন এর চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। এতে করে দেশে গড়ে উঠতে পারে নতুন নেতৃত্ব ও তৃতীয় শক্তির উত্থান।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের লন্ডনে থাকার কারণে নেতৃত্ব শূন্য দলের অন্যতম চালিকা শক্তিই এখন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।

তবে নেতৃত্বের চেয়ে বর্তমানে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। যে চিন্তাধারায় ইতোমধ্যেই একমত বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। যার লক্ষ্যে একাধিকবার বৈঠক করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণে তৎপর শীর্ষ নেতারা। যদিও নির্বাচনকে ঘিরে নানা পরিকল্পনাও করছে এবং নির্বাচনের আগে একটি জোট গঠনের মাধ্যমে আন্দোলনের মাধ্যমে জয়লাভ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে দলগুলো।

এসব পরিকল্পনার অংশ হিসাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য ঠিক করতে আজ বৃহস্পতিবার আবারও বৈঠকে বসছেন বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতারা।

এ বৈঠকে দাবি ও লক্ষ্যগুলো সামনে রেখে তিন পক্ষ আগামীতে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে কী করণীয়, তা নির্ধারণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় তিন পক্ষের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন।

এ বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচিও ঠিক করা হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন অথবা সমাবেশ ডেকে দাবি, লক্ষ্য ও আন্দোলনের কর্মসূচি তুলে ধরা হবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে দাবি-দাওয়া ঠিক করার পাশাপাশি নির্বাচন-পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ, জোটের নাম এবং কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। জোটের একাধিক নাম বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্যজোট, ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রভৃতি নাম আলোচনায় রয়েছে। আন্দোলনের শক্তি বাড়াতে জামায়াতে ইসলামী বাদে বিএনপির জোটে থাকা বাকি ১৮টি দলকে বৃহত্তর এই ঐক্যে যুক্ত করার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে গড়ে তোলা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন এ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতারা। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা।

এর মধ্যে আটদলীয় বাম জোট ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অন্যতম। এর বাইরে ২০ দলীয় জোটের জামায়াতকে বাদ দিয়ে অন্য ১৮টি দলকেও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এসব দল ও জোট জাতীয় ঐক্যে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও তাদের যুগপৎ কর্মসূচিতে নেওয়ার চেষ্টা করবেন নেতারা। সবকিছুই এ মাসের শেষে দৃশ্যমান হবে বলে জানা গেছে। রাজনীতির দিক নির্ধারণে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য জোট

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বাম জোট কিংবা ইসলামী আন্দোলনকে নিয়ে ওইভাবে তাদের পরিকল্পনা না থাকলেও বিভিন্ন স্তরে কাজ চলছে। একই দাবিতে চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে এক জায়গায় আনার প্রক্রিয়া তাদের শুরু থেকেই রয়েছে। অনেক নেতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও তিনি জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী জানান, তারা দলের আদর্শের বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ঐক্য করার সিদ্ধান্ত এখনও নেননি। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া কোন দিক যায়, তা তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তাদের সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এদিকে যুক্তফ্রন্টের এক নেতা জানান, আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তাদের দেওয়া পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি যুক্ত করে ঐক্য গড়ে উঠেছে। সরকার গঠন করার আশা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নয় দফা লক্ষ্য ও

বিএনপির ঘোষিত ১২ দফা লক্ষ্যকে অভিন্ন লক্ষ্যে পরিণত করার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কাজ সম্পন্ন করার জন্য জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনসহ দু'জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এসব লক্ষ্য নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করে ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থাপন করবেন। এ বৈঠক থেকেই তারা লক্ষ্য চূড়ান্ত করে আগামী দিনের রূপরেখা ও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচির বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এরই মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া একমঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঐক্য এগিয়ে নিতে এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে একের পর এক কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্যে জনসভা, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন যেমন রয়েছে, তেমনি কঠোর কর্মসূচিও তারা গ্রহণ করবেন।

এদিকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সামনে রেখে বিএনপি এখন এর চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আপত্তির কারণে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে বাদ দিয়ে এককভাবে এ ঐক্যে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। তারা ২০ দলীয় জোটকে অটুট রেখে জাতীয় ঐক্য গড়ার কৌশল নিয়ে জোট ও ঐক্যকে সমানভাবে পরিচালিত করছে। আবার জনসমর্থন বিবেচনায় নিজেদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাও জাতীয় ঐক্যের অন্য দলগুলোকে অনেকটা অনুধাবন করাতে পেরেছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এসব দলের শীর্ষ নেতারাও বিএনপিকে বেশ কিছু জায়গায় ছাড় দেওয়ার মনোভাব দেখান।

রবিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নেতাদের মধ্যকার বৈঠকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। এদিন বিএনপির প্রধান দাবি হিসাবে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে তাদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়। বিষয়টি বিএনপির হাই কমান্ড ইতিবাচক হিসাবে মনে করছে। তাদের মতে, তাদের যৌক্তিক দাবি অন্যান্য রাজনৈতিক দল অনুধাবন করায় ঐক্য প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে।

পরদিন যুক্তফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও নেতারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এ বিষয়ে একমত পোষণ করে। তারা সবার অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভাগাভাগির রাজনীতি পরিহার করার বিষয়ে একমত হন।

এ বিষয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেছেন, তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর জন্য আসন বণ্টন কিংবা সরকার গঠন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনায় যেতে চান না।

এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসন বণ্টনের যেসব সংবাদ আসছে, তাও ভিত্তিহীন। তাদের মধ্যে এসব নিয়ে নূন্যতম কোনো আলোচনা হয়নি। জাতীয় ঐক্যের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি রাজনৈতিক দল (অনিবন্ধিত) তাদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। এসব দলকে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত না করে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা হতে পারে।

১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট পাঁচ দফা দাবি এবং দেশ পরিচালনায় নয় দফা লক্ষ্য উপস্থাপন করে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এটি উপস্থাপন করেন। ২২ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে যা অনেকটা চূড়ান্ত রূপ নেয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড