• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আপনার সন্তান যৌন হয়রানির শিকার নয় তো?

  অধিকার ডেস্ক    ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৯

যৌন হয়রানি
আপনার সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন (ছবি: প্রতীকী)

রাইসা গত কয়েকদিন ধরেই চুপচাপ হয়ে গেছে। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া বা লেখাপড়া কনো কিছুতেই তার মন নেই যেন। আগের সেই চঞ্চলতা বা উচ্ছ্বলতা কোনোটাই তার মাঝে নেই। বাসায় কেউ আসলেও সে সামনে আসতে চায় না। চঞ্চল মেয়েকে হঠাৎ এমন থমকে যেতে দেখে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লেন রাইসার বাবা-মা। মেয়ে কী সমস্যার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে সেটা জানার দায়িত্ব নিলেন বাবা-মা নিজেরাই। রাইসাকে যখন সবকিছু জিজ্ঞেস করা হল সে কেঁদে মা-কে জানালো, তাদের বাসায় এক ব্যক্তি আসেন যিনি সম্পর্কে রাইসার মামা হন তার দ্বারা যৌন নিপীড়নের স্বীকার হয়েছে সে।

হতভম্ব রাইসার বাবা-মা কখনো ভাবতেই পারেননি তাদের সাত বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ের সাথে এত ভয়ংকর একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে। মেয়েকে সাথে নিয়েই তারা দ্বারস্থ হলেন পুলিশের।

রাইসার এ ঘটনা কাল্পনিক হলেও এমন ঘটনা অহরহ অনেক রাইসার সাথেই ঘটে যাচ্ছে। সবার কথা আমরা শুনতে বা জানতে পারি না। কিন্তু বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে এ সকল বিষয়ে। শুধু মেয়েরাই নয়, অনেক ছেলে শিশুরাও এখন শিকার হয় যৌন নিপীড়নের। তবে বেশিরভাগ সময়েই বাবা-মা তাদের বকা দেবে এ ভয়ে শিশুরা তাদের কিছু বলতে চায় না।

শিশু হয়ত ভয়ে কিছু বলতে পারছে না কিন্তু তার মাঝে এ সমস্যার কারণে কিছু পরিবর্তন আসবে। যে লক্ষণগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্যেক শিশু কোনো ট্রমার প্রতি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, কিন্তু কিছু পরিচিত বা জানা আচরণ রয়েছে যা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুদের মধ্যে লক্ষ্য করা যেতে পারে।

জেনে নিন শিশুর আচরণগত পরিবর্তনের কোন লক্ষণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিৎ-

হঠাৎ যৌন আচরণ করা

শিশুদের এ ধরনের আচরণের সাথে যৌন নিগ্রহের সংযোগ থাকার সম্ভাবনা বেশি। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত মন্টেফিয়োর মেডিক্যাল সেন্টারের অন্তর্গত দ্য চিলড্রেন’স হসপিটালের জে.ই. অ্যান্ড জেড.বি. বাটলার চাইল্ড অ্যাডভোকেসি সেন্টারের কার্যনির্বাহী পরিচালক কারেল আর. অ্যামারেন্থ বলেন, ‘তারা তাদের শরীর স্পর্শ করার জন্য অন্যের প্রতি আকাঙ্ক্ষা জানাবে, অন্য শিশুদের নিজের শরীর স্পর্শ করতে বলবে অথবা তাদের শরীর স্পর্শ করবে, এমনকি বাবা-মাকেও বলবে শরীর স্পর্শ করার জন্য।’ মূলত এটি তারা করে তাদের সাথে ঘতে যাওয়া ঘটনাকে স্বাভাবিক করার জন্য।

হঠাৎ ভয়ের উদ্রেক হবে

কোনো একজন নির্দিষ্ট লোকের কাছে যেতে ভয় পাওয়া অথবা প্রতিদিনের স্বাভাবিক কোনো কাজ করতে ভয় পাওয়া এটি একটি লক্ষণ হতে পারে। ওয়াশিংটনে অবস্থিত হার্বারভিউ সেন্টার ফর সেক্সুয়াল অ্যাজল্ট অ্যান্ড ট্রমাটিক স্ট্রেসের পরিচালক লুসি বার্লিনার বলেন, কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে যেতে না চাওয়ার তীব্র জেদ উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এ লক্ষণগুলো বোঝায় তাদের সাথে হয়ত খারাপ কিছু হয়েছে।’

শিশুর আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন

চঞ্চল থেকে খুব বেশি শান্ত হয়ে যাওয়া অথবা শান্ত থেকে হঠাৎ করেই খুব বেশি আগ্রাসী হয়ে যাওয়া শিশুর আচরণগত এ পরিবর্তনগুলো থেকে বোঝা যায় শিশু মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

খারাপ আচরণ করা

এ রকম সমস্যায় আক্রান্ত হলে শিশুর অন্যদের প্রতি ক্রোধ বেড়ে গিয়ে খারাপ আচরণ প্রকাশ পায়। পেনসিলভানিয়ায় অবস্থিত লাসাল্লে ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী ডোনা ফিডলারে মতে, ‘সঙ্গীর সাথে খেলার সময় এ ধরনের আচরণ প্রকাশ পেতে পারে। কখনো কখনো তারা অন্যের প্রতি আক্রমণ করে বসতে পারে অথবা ভয় দেখাতে পারে।’

কিশোর বয়সে এ সমস্যায় জর্জরিত হলে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে।

ঘুমে সমস্যা দেখা দিতে পারে

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমানো অথবা একদম না ঘুমানো- শিশুর বেলায় দুটোই সমস্যা। ফিডলার বলেন, এ সময় শিশুরা নিজেদের গোপনীয়তা বা প্রাইভেসি রক্ষার প্রতি অত্যধিক আসক্ত হবে। বিশেষ করে তারা ঘরের দরজা আটকে রাখবে সব সময়।

অস্বাভাবিক চিত্রাঙ্কন

অনেক শিশুরা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষণ্নতার লক্ষণ প্রকাশ করে ছবি আঁকার মাধ্যমে। মুখে বলে না বুঝাতে পারলেও ছবি এঁকে তারা এসব প্রকাশ করতে চায়।

খাবারের প্রতি হঠাৎ অনীহা

যেমন- অতিরিক্ত খাওয়া অথবা কম খাওয়া। অ্যামারেন্থ বলেন, যেসব কিশোরী যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন তারা খাওয়া কমিয়ে দিতে পারেন অথবা মেদবহুল হতে চাইতে পারেন যাতে তাদেরকে যৌন নিগ্রহকারীর কাছে কম আকর্ষণীয় মনে হয়।

স্বাভাবিকের চেয়ে খাবার বেশি অথবা কম খাওয়া। অ্যামারেন্থ বলেন, যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া কিশোরীরা হঠাৎ খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে অথবা খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে মেদবহুল হওয়ার চেষ্টা করতে পারে কারণ তারা যৌন নিগ্রহকারীর কাছে নিজেকে কম আকর্ষণীয় বলে প্রকাশ করতে চায়।

লক্ষ্য করুন যৌন নিপীড়নের শারীরিক লক্ষণ আছে কিনা

পেনিস বা যোনি থেকে তরল ক্ষরণ, যৌনাঙ্গে ব্যথা, শরীরে কালশিটে বা কাটা বা ক্ষত বা আঁচড়, শরীরে অস্বাভাবিক দাগ, ঘনঘন মূত্রত্যাগ অথবা মূত্রত্যাগ করতে সমস্যা। যদি এসব লক্ষণের কোনো একটি দেখা যায় তাহলে শিশুকে অবিলম্বে পেডিয়াট্রিশিয়ানের কাছে নিয়ে যান।

আচরণে অস্বাভাবিক এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন

শিশুর ব্যক্তিত্ব, অভ্যাস, আচরণ ও পছন্দ-অপছন্দে অস্বাভাবিক এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। যেমন- খেলাধুলা, নাচের ক্লাস অথবা স্কাউটিং ইভেন্ট। শিশুরা এ ধরনের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এটা জানতে পারলে বাবা-মা’র পক্ষে শান্ত থাকা কঠিন। তবু সন্তানের ভালোর জন্য শান্ত থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যৌন নিগ্রহকারীর ব্যাপারে।

সন্তানের এ সমস্যার জন্য কে দায়ি সেটি জানার পর তার সাথে নিজেদের এবং সন্তানের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিন।

অ্যামারেন্থ বলেন, যদি বুঝতে পারেন আপনার শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বিশেষ করে তারা এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলে তাহলে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন। এ বিষয়ে শিশু প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে সেটিও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

যদি মনে করেন, আপনার সন্তান আপনাকে কিছু বলতে পারছে না তাহলে তাকে কোনো একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে যান যেন সে সব কথা খুলে বলতে পারে।

মনে রাখবেন, আপনার সন্তানের মানসিক সুস্থতা আপনার হাতেই। তার সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা আপনিই। তাই সন্তানের সাথে এমন কিছু হলেও শান্ত থেকে পরিস্থিতি সামলে নিন।

তথ্যসূত্র : ওয়েব এমডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড