• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাসপাতালই যেন ময়নার শেষ ঠিকানা!

  মমিনুল ইসলাম বাবু

১১ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৫০
কুশিন সিনড্রোম
কুশিন সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ময়না

হাসপাতালই যেন ময়নার শেষ ঠিকানা। এক সময় স্বামী সংসার নিয়ে খুব সুখে শান্তিতেই দিন কাটলেও এখন কুশিন সিনড্রোম রোগে ভুগছেন তিনি।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ার হাট ইউনিয়নের গয়নার পটল চর নামক এলাকার বাসিন্দা ময়না বেগম। এক সময় স্বামী সংসার নিয়ে খুব সুখে শান্তিতেই দিন কাটতো ময়নার। ময়না বেগম গয়নার পটল চরের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই যেন তার শেষ ঠিকানা। প্রায় দু’বছর ধরে তিনি এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ময়নার স্বামী তারেক রহমান ২ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে আর একমাত্র ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ব্রহ্মপুত্রে বাড়িঘর হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভাই আব্দুল গফুরের কাছে থাকতেন ময়না বেগম। নিঃস্ব ময়নার চিকিৎসার খরচ বহন করতেন তার মেয়ের জামাই। কিন্তু শেষ পর্যায়ে চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে মেয়ের জামাইও এক পর্যায়ে হয়ে পড়েন নিঃস্ব। এখন হাসপাতালই যেন তার শেষ ভরসা। প্রায় ২ বছর থেকে এই হাসপাতেলেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন ময়না বেগম। এখন তার শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরে খসে খসে পড়ছে এবং তা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আর এ কারণে তার ধারের কাছেও কেউ ভিড়তে চায় না। স্বজনরাও খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ প্র্তিদিনই কমপক্ষে ১ হাজার টাকার ওষুধ লাগে তার। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তারী বেগমের আর্থিক সহযোগিতায় কোনো রকমে চলছে তার চিকিৎসা। অর্থ সংকটে উন্নত চিকিৎসাও নিতে পারছেন না ময়না বেগম।

ছয় মাস আগে তার শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার স্বজনদের ডেকে দ্রুত তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু টাকার অভাবে রংপুরে না নিয়ে তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়। ৫ দিনেও জ্ঞান না ফেরায় স্বজনরা ধরে নেয় তিনি মারা গেছেন। তাকে মৃত ভেবে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ নড়ে ওঠেন ময়না। পরে স্বজনরা আবারও তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ওয়ার্ডে গেলে ময়না জানান, স্বামী তারেক রহমান ২ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে তার। মেয়ের বিয়ে হয়েছে আর একমাত্র ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ব্রহ্মপুত্রে বাড়িঘর হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভাই আব্দুল গফুরের কাছে থাকি। ‘জমাজমি বলতে কিছুই নেই। কোনো টাকা-পয়সাও নেই। এ যাবৎ চিকিৎসার খরচ দিয়ে আমার মেয়ের জামাইও এখন নিঃস্ব। ভাই আব্দুল গফুর কামলা দিয়া খায়। তার ওপর আমার ছেলেটার খাবার খরচ দেয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। আল্লাহ্‌ আমাকে নিয়া গেলেই বাঁচি। দুর্গন্ধে কেউ কাছে আসতে চায় না। ২ বছর ধরে হাসপাতালই আমার ঘর-সংসার।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তারী বেগম জানান, ‘ময়না বেগমের রোগকে কুশিন সিনড্রোম বলা হয়ে থাকে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে উঠবে রোগী। আমরা বার বার রোগীকে রংপুর কিংবা ঢাকায় নিতে বলছি। কিন্তু রোগীর স্বজনরা এতই গরিব যে সেটা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে স্বজনরা রোগীর কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা কিছু টাকা তুলে ওষুধ কিনে চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ২ বছরের বেশি সময় ধরে ময়না বেগম এখানে আছে। এখানে থাকলে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’

এ দিকে ময়না বেগমের শরীরের অবস্থা দিন দিন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। রোগ শোকে ক্লান্ত ময়না আর দশজনের মতো ফিরে পেতে চায় স্বাভাবিক জীবন। এজন্য প্রয়োজন বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতা। অর্থের সংস্থান হলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে ময়না হয়ে উঠতে পারেন সুস্থ, ফিরে পেতে পারেন সোনালী দিনগুলো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড