• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সাকিবের কীর্তিতে উইন্ডিজকে হারিয়ে সমতায় বাংলাদেশ

  অধিকার ডেস্ক    ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৫৮

সাকিব আল হাসান
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব; (ছবি : আইসিসি টুইটার)

সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত জয়ে দলকে সামনে থেকে পথ দেখান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২১২ রানের জয়ের লক্ষ্য খেলতে নেমে চার বল বাকি থাকতে ১৭৫ রানে অলআউট হয়েছে ক্যারিবিয়ানরা।

সাকিবময় ম্যাচে অসাধারণ জয়

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ৪ ওভারে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি। এর আগে ব্যাট হাতে ২৬ বলে করেছিলেন অপরাজিত ৪২ রান। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন সাকিব।

এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টি-টুয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে আগামী শনিবার। একই ভেন্যুতে ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৭৫ (১৯.২ ওভারে) (লুইস ১, হোপ ৩৬, পুরান ১৪, হেটমায়ার ১৯, পাওয়েল ৫০, ব্রাভো ২, ব্র্যাথওয়েট ৮, অ্যালেন ০, পল ২৯, কটরেল ৩*, থমাস ০; আবু হায়দার ১/৩৩, সাইফ ০/৪২, মুস্তাফিজ ২/৫০, সাকিব ৫/২১, মিরাজ ১/২৩, মাহমুদউল্লাহ ১/১)।

শেষ আঘাত মাহমুদউল্লাহর

ওশানে থমাসকে বোল্ড করে ক্যারিবিয়ান ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পেয়েছেন এই অফ স্পিনার। ২ বল খেলে 'ডাক' মেরেছেন গতি তারকা থমাস। অন্যপ্রান্তে শেলডন কটরেল ৩ বলে ৭ রানে অপরাজিত থেকেছেন।

১৯.২ ওভারে ১৭৫ রানে অলআউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টুয়েন্টিতে ১১ বারের দেখায় তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি পঞ্চম জয়। সমান ৫টি জয় আছে ক্যারিবিয়ানদেরও। বাকি ম্যাচটিতে ফল আসেনি।

মুস্তাফিজের জোড়া সাফল্য

প্রথম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান দিয়েছেন ২৪ রান। এরপর তাকে বোলিং করানোর সাহস করেননি টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় স্পেলে ১ ওভারে মাত্র ৫ রান দিলেও 'ডেথ বোলিং'য়ের কথা মাথায় রেখে তাকে ফের সরিয়ে নেওয়া হয় আক্রমণ থেকে।

তবে যে উদ্দেশ্যে তার ২ ওভার মজুদ করে রাখা হয়েছিল, সেটা সফল। শেষ ২ ওভারে ২১ রান দিলেও গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন কাটার মাস্টার। উইন্ডিজদের আশার আলো হয়ে জ্বলতে থাকা রোভম্যান পাওয়েলকে ফেরানোর পর ক্রমেই ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা পেসার কিমো পলকেও আউট করেছেন তিনি।

বাঁহাতি পেসারের শিকার হওয়ার পাওয়েল ৩৪ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেছেন। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ১ ছয়। আরেক শিকার পল ১ চার ও ২ ছয়ে ২৯ রান করেছেন ১৬ বল খেলে। সবমিলিয়ে ৫০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন দ্য ফিজ খ্যাত তারকা।

সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং

ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর বল হাতেও জাদু দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। রান তাড়ায় লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একাই স্পিন বিষে পুড়িয়ে ছারখার করেছেন টাইগার দলনেতা। বাঁহাতি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট।

পূর্ণ ৪ ওভারের কোটা পূরণ করতে সাকিব খরচ করেছেন মাত্র ২১ রান। জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে প্রথমবারের মতো নিয়েছেন ৫ উইকেট। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ডট দিয়েছেন ১১টি বল। তার আগের সেরা বোলিং কীর্তি ছিল ওমানের বিপক্ষে। ২০১৬ সালে ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

ইনিংসের মাঝপথ পর্যন্ত দুর্দান্ত ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিলেন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। তবে ১১তম ওভারে শিমরন হেটমায়ার ও ড্যারেন ব্রাভোকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেন সাকিব। বিপজ্জনক হেটমায়ার ১৭ বলে ১৯ ও ব্রাভো ৩ বলে ২ রান করে ফেরেন।

এরপর ১৩তম ওভারে মুশফিকুর রহিমের দক্ষতায় সাকিবের বলে স্ট্যাম্পড হয়ে মাঠ ছাড়েন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। ৩ বলে ৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তাতে ৩ উইকেটে ৯৮ রানের দল থেকে ৬ উইকেটে ১১৮ রানের দলে পরিণত হয় ক্যারিবিয়ানরা। ম্যাচের ভাগ্য হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে।

কাঙ্ক্ষিত পঞ্চম উইকেটটি সাকিব পান ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে বোল্ড করে। ৩ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। তাতে ১৫তম ওভারে ১৩৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে উইন্ডিজ। টাইগারদের জয় হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

১০ ওভারে উইন্ডিজের স্কোর : ৯৭/৩

প্রথম ৪ ওভারে ৫০ রান। এর মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমানের করা ওভারেই শাই হোপ তুলে নেন ২৪ রান। পরের ২ ওভারে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২ উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন বাংলাদেশকে। কিন্তু শিমরন হেটমায়ার ও রোভম্যান পাওয়েলের ব্যাটে চড়ে ফের চাপ কাটিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে ক্যারিবিয়ানরা।

জয়ের জন্য ১০ ওভারে ক্যারিবিয়ানদের দরকার আরও ১১৫ রান। হাতে রয়েছে ৭ উইকেট। ক্রিজে ব্যাট করছেন রোভম্যান পাওয়েল ১৩ বলে ১৬ ও শিমরন হেটমায়ার ১৬ বলে ১৯ রানে।

পাওয়ার প্লেতে উইন্ডিজের দাপট

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভার শেষে উইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৭০ রান। এই কৃতিত্ব দলটির দ্বিতীয় উইকেট জুটির। বিশেষ করে হোপের। তিন নম্বরে নামা নিকোলাস পুরানকে নিয়ে মাত্র ১৪ বলে ৪১ রান যোগ করেন তিনি। তবে দুজনকেই সাজঘরে ফেরাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ৬ বলে ১৪ রান করা পুরানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন সাকিব। এরপর ঝড় তোলা হোপের উইকেট নেন মিরাজ। তার সংগ্রহ ১৯ বলে ৬ চারে ৩৬ রান।

বাংলাদেশের প্রথম উইকেট সাফল্য আসতে পারতো ইনিংসের প্রথম ওভারেই। বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ওপেনার এভিন লুইস। তবে তিনি বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হতে পারেননি। ৬ বলে ১ রান করে আবু হায়দারেরই শিকার হন লুইস।

বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহ

এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ২১১ রানের বিশাল সংগ্রহ জমা করে বাংলাদেশ। যা টি-টুয়েন্টিতে টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর এবং দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর। ইনিংসের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তাণ্ডব চালান ক্যারিবিয়ান বোলারদের ওপর।

লিটন দাস ৩৪ বলে ৬০ রান করে আউট হন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টি-টুয়েন্টি ইনিংসে ৬ চার ও ৪ ছয় মারেন তিনি। সৌম্য সরকার ২২ বলে ৩২ রান করেন ৩ চার ও ১ ছয়ে। টাইগার দলনেতা সাকিব আল হাসান ৫ চার ও ১ ছয়ে ২৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২১ বলে ৪৩ রান করেন ৭ চারে। উইন্ডিজের পক্ষে ২ উইকেট নেন পেসার শেলডন কটরেল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ২১১/৪ (২০ ওভারে) (তামিম ১৫, লিটন ৬০, সৌম্য ৩২, সাকিব ৪২*, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ৪৩*; কটরেল ২/৩৮, থমাস ১/৪৩, ব্র্যাথওয়েট ০/৪৩, অ্যালেন ১/২৯, পল ০/৫৪)।