নজরুল ইসলাম
গতকাল (শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের সামনে জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, ‘ঘরোয়া লিগে আমরা যে ধরনের বোলারের মুখোমুখি হচ্ছি বা যে ধরনের বোলার খেলছি, এখান থেকে আমরা একটা আন্তর্জাতিক দলের বিপক্ষে খেলতে গেলে বেশি ব্যবধান হয়ে যায়। যে স্কিলে আমরা ঘরোয়া লিগে পারফর্ম করি, সেই স্কিলে সেখানে পারফর্ম করতে পারি না।’
এই কথাটি নতুন নয়। এর আগেও জাতীয় দলের বহু সিনিয়র তারকা ও গণমাধ্যমে নানা রিপোর্টে বারবার এই কথাটি উচ্চারিত হয়েছে যে ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়ানো হোক। বিসিবি বারবার বলে থাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি হবে। কিন্তু সেটা মাঠের খেলায় দেখা যায় না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লড়তে হলে নিজেদের স্কিল এবং মানসিক শক্তি আরও উপরে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন মিঠুন। সেই লক্ষ্যে দলের সবাই পরিশ্রম করছেন বলে জানিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মিঠুনের ভাষ্যমতে, ‘এখান থেকে ফিরতে হলে, আমাদের স্কিল লেভেল বা মানসিক লেভেল অনেক উপরে নিয়ে যেতে হবে। এটা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। আমরা যত দেরি করব, আমরা দল হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে পিছিয়ে পড়ব। সবাই চেষ্টা করছে, সবাই পরিশ্রম করছে। ইনশাআল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে।’
কিন্তু বাংলাদেশের বিগত দিনের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করলে দেখা যায় এখন পর্যন্ত আশানুরূপ উন্নতি নেই টেস্টে। যে ব্যাটসম্যানরা ঘরোয়া ক্রিকেটে সেঞ্চুরি বা রান বন্যায় বাহবা পান, তারাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লংগার ভার্সনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন। কারণ বিসিবি আসলে ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা করে বলে মনে হয় না। গত এক দশক ধরে ক্রিকেটের যে উত্থান তা কেবল ওয়ানডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ক্রিকেটের আসল লড়াই টেস্টে এখনো সেই দৈন্যদশায় রয়েছে টাইগাররা।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় যে, শেষ তিন টেস্ট শেষ হয়েছে মোট ১০ দিনে। ভারতের বিপক্ষে (৩+৩) ও পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট শেষ হয় চার দিনে। তিন টেস্ট ১৫ দিনের হলেও বাংলাদেশ হারে ১০ দিনের মধ্যে। অর্থাৎ পুরো এক টেস্টে লড়াই ছাড়াই হারের লজ্জা পেয়েছে মুমিনুলরা।
এর কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে যে উইকটে খেলা হয়, তা একেবারেই মানসম্মত নয়। পেস বোলাররা তেমন সুবিধা পান না এসব উইকেট থেকে। ফলে একজন ব্যাটসম্যান লংগার ভার্সনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তেমন মনোযোগী হন না বা টেস্টের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন না। মান সম্মত উইকেট না পেয়ে তিনি যেমন প্রচুর রান করেন এবং ভালো উইকেট না থাকায় নিজের ঘাটতিও পূরণ করতে পারেন না।
গত পাঁচ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম বড় সাফল্য ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। তবে সেই ম্যাচগুলোতেও দেখা গেছে দলের অনেক তারকাই পুরোপুরি নিষ্প্রভ। কারণ বাংলাদেশ স্পিন ট্র্যাকের উইকেট তৈরি করে খেললেও তারা নিজেরাও এ ধরনের উইকেটে অভ্যস্ত নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট চলাকালীন সংবাদ সম্মেলনে ওপেনার তামিম ইকবাল স্বীকার করেন বিষয়টি। তিনি বলেন, আমরা নিজেরাও এ ধরনের উইকেটে অভ্যস্ত নই। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচে এ রকম উইকেট থাকলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
এ দিকে, পাকিস্তান সিরিজের ব্যর্থতা প্রসঙ্গ সংবাদমাধ্যমে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান জানান, তিনি দলের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চান। বিসিবি সভাপতির ধারণা টস জিতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বা একাদশে কারা থাকবে সেটা তার সঙ্গে আলোচনা করলে ম্যাচের ফলাফল ইতিবাচক হবে। অথচ এটা কোনো ক্রিকেট বোর্ড সভপতির কাজ নয়। নির্বাচক, কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট এসব নিয়ে ভাববেন, তারাই ঠিক করবেন টস জিতলে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া ম্যাচের আগের দিন একরকম সিদ্ধান্ত নিলেও পরের দিন উইকেট একটু ভিন্নও হতে পারে বিশেষ করে অ্যাওয়ে ম্যাচের ক্ষেত্রে। ম্যাচের আগের পরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাই অনেকসময়ই যথোপযুক্ত। যদিও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এ বিষয়টি মানতে রাজি নন।
টেস্টের জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে : টেস্টে ভালো করতে হলে জাতীয় দল নিয়ে বিসিবির একটি বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। ২০-২৫ জনের একটা দল মাথায় রাখা উচিত যে কোনো স্কোয়াডের জন্য। তাদের মধ্যে সেরাদের নিয়ে যে কোনো কন্ডিশনে ১৫ জনের স্কোয়াড গঠন করবে বিসিবি।
আরও পড়ুন : ঘরোয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য দেখালেন মিঠুন
উইকেটের দিকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে বোর্ডকে। ঘরের মাঠের জন্য একরকম উইকেট, এশিয়ার কন্ডিশনের জন্য একটি ও পুরোপুরি পেস উইকেটের জন্য (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা) আরেকটি উইকেটে খেলার অভ্যাস গড়তে হবে। উইকেটের এসব ভিন্নতা থাকবে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে কোনোটি পুরো পেস সহায়ক, কোনোটি পুরোপুরি স্পিন নির্ভর ও কোনোটি ব্যাটিং সহায়ক হবে। এ রকম ভিন্ন উইকেটে অভ্যস্ত হলে ক্রিকেটাররা যে কোনো কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে।
ওডি/এনএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড