• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা!

  রহমান মৃধা

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৫২
মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা!
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে একটি দেশের দিকে। মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা। আসলেই কি তাই? অরাজকতা, অন্যায়, অত্যাচার থেকে শুরু করে ভালো-মন্দ সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে সেখানে। সেখানেও মানুষ রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করে। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসের চারপাশ দিয়ে অনেকের রাত কাটে। আবার অনেকে ঠিক সেই দেশ থেকেই মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে।

চমৎকার! প্রশ্ন হচ্ছে, কী এমন জাদু রয়েছে আমেরিকায়? চীনও কিন্তু একটি বেশ জনবহুল দেশ। তাছাড়া উন্নত দেশের সারিতে তাদের বর্তমান ভালো দাপটও বটে। তা সত্ত্বেও আমেরিকার মতো না গর্জে বা না বর্ষে! কারণ কী? ভেবেছেন কি কখনো?

বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিস নেই চীনে। চীন এবং রাশিয়া যতো ধনী বা শক্তিশালীই হোক না কেন গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিসের অভাবের কারণে আমেরিকার মতো বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারছে না। মানুষ জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সত্যি প্রশংসনীয়। যেমন আমরা নিজেরা ভালো কিছু না করতে পারলেও যখন অন্যেরা করে সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। যেমন বাংলাদেশের কথাই বলি, সবাই যে আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা নয়; তবুও সে দেশ সম্পর্কে আমরা জানতে ইচ্ছুক।

এবারের ইলেকশনে ট্রাম্পের পতন ও বাইডেনের উত্থানসহ কে কোন পোস্ট পেল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সবাই বেশ মেতে ছিল। গোটা বিশ্বের রাজনীতি হচ্ছে দাবা খেলার মতো, চতুরতার মধ্য দিয়ে খেলে জিততে না পারলে পরাজিত। ট্রাম্পের চতুরতা বিশ্বের অনেক দেশের রাজনীতির সঙ্গে বেশ মিল ছিল তা সত্ত্বেও তিনি পরাজিত হয়েছেন। কারণ একটিই সেটা হলো বাড়ির মালিক (আমেরিকার জনগণ) আর যাই করুক কাজের মানুষের কর্মের প্রতি কঠোর নজরদারি বজায় রাখে।

ট্রাম্প কত চেষ্টাই না করলেন পদে টিকে থাকতে। জনগণ ট্রাম্প নামক কাজের লোকটার প্রতি সন্তুষ্ট নয়, তাই তার শত চেষ্টা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। কতো ক্ষমতা কতো কৌশল সব রসাতলে চলে গেল। তাপের কাছে লোহা গলে যায় আবার সেই তাপের কারণে পানির মতো তরল পদার্থ বাষ্প হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। এটাই রহস্য, এটাই সত্যি। যার কারণে গোটা বিশ্ব আমেরিকার গণতন্ত্রের পূজারি। কারণ সেখানকার গণতন্ত্র হলো জনগণের, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য সরকার।

মিস্টার বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার সঙ্গে সঙ্গে বেশ সহজ করে জানিয়েছেন তার একটি কথা আর সেটি হলো, তিনি রাজনীতি করেন মানুষের সেবা করার জন্য, বড়লোক হবার জন্য নয়। এটা এ যুগে একটি অপ্রিয় সত্য কথা। বাংলাদেশে যদি সত্যিকারার্থে এমন একটি কথা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি বলে কেউ বিশ্বাস করবে না।

আরও পড়ুন : এ যেন এক অবাক কাণ্ড!

কারণ গত পঞ্চাশ বছরে এমনটি চোখে পড়েনি। তবে পাশ্চাত্যে এটাই বেশিরভাগ দেশে প্রতিষ্ঠিত, যা জো বাইডেন বলেছেন। সুইডেনে বহুবার দেখেছি অনেকেই প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তেমন ভালো কিছু করতে পারেননি পরে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে অন্য কর্মে নিযুক্ত হয়েছেন এবং এখন বেশ আছেন। তবে এটা সত্য যে রাজনীতি করার কারণে কিছুটা লাইনঘাট করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যা হয়তো রাজনীতি করা ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব হতো না।

বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই অর্থনীতিতে সাফল্য, জনগণের জন্য কিছু করুক বা নাই করুক চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্য যা করার করে। এখন জনগণ যেমন আস্থা হারিয়েছে রাজনীতিকদের উপর, রাজনীতিবিদরাও দল আস্থা হারিয়েছেন জনগণের উপর থেকে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা জানেন যে তারা অন্যায় করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছেন যে ভালো কাজ করলেও জনগণ আর তাদেরকে বিশ্বাস করে না।

অর্থাৎ রাজনীতিবিদ ও জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের বালাই নেই। যার ফলে দেশের ভোট সিস্টেম বিলীন হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে টাকা নিয়েও ভোট দেয়নি আবার ভোট দিয়েছে অথচ টাকা পায়নি। কয়েকবার এমনটি ঘটেছে, শেষে বিনা ভোটে অর্থাৎ ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। এটাই জয়ী হওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।

যাইহোক আমেরিকার ইলেকশন শেষ হয়েছে। অনেক তথ্য জেনেছি।

ভাবনা, কী হবে আমাদের অভাগা বাংলাদেশের? কবে আমরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরে পাবো নাকি সঠিক সময় এখনো হয়নি? দেশ অতীতের তুলনায় ভালোই তো আছে। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে। সবাই বেশ ভালোই তো আছে। কী দরকার গণতন্ত্রের, যেভাবে চলছে তাতে সমস্যা কোথায়? তারপর টাকার বিনিময়ে ভোট দিয়ে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে তো সঠিক গণতন্ত্র কখনও হবে না।

সেক্ষেত্রে যেমন আছি তেমন থাকায় সমস্যা কোথায়? অথবা যদি সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তবে আমাদের চিন্তাচেতনায় বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে হবে। সে পরিবর্তন সমষ্টিগতভাবে হতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। এটা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ সবার জন্য।

মানুষ জাতি চাপে পড়ে সমস্যার সমাধান খোঁজে। আমরা যদি সত্যিই চাপের মধ্যে পড়তাম তবে সমাধান বের করতাম। আমার মনে হয় মুষ্টিমেয় কিছু লোক চাপের মধ্যে আছে, সর্বাঙ্গীনভাবে চাপ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না। সেক্ষেত্রে প্রথম যে কাজটি করতে হবে আমাদের সবাইকে সেটা হলো চাপ সৃষ্টি করা নিজেদের ভেতর থেকে। যেমন একটি ডিম বাইরের চাপে ভেঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় অথচ তার ভেতরের চাপে সৃষ্টি করে একটি জীবন।

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

আমাদেরকে নিজ নিজ জায়গা থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে পরিবর্তনের জন্য আর সেটা হতে পারে আমাদের বিবেককে কলুষমুক্ত করা। এটা যদি করতে পারি তবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ শুধু নিজেকে নয়; গোটা বিশ্বকে প্রকৃত গণতন্ত্রের পথ দেখাতে পারবে। আমেরিকার মতো বাংলাদেশের নামও তখন উচ্চারিত হবে বিশ্বের দরবারে।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড