• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় (পর্ব- ১৪)

হিমালয় ভাই নিজেকে একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি মনে করেন

  অধিকার ডেস্ক    ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৫১

উপন্যাস প্রকাশন
ছবি : সম্পাদিত

একজন ব্যতিক্রমী মননের মানুষ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। ব্যতিক্রমী তার লেখার ধারা। কেউ কেউ মনে করে তিনি বিচিত্র রঙের গল্পকার। কারও কাছে সুচিন্তিত সমালোচক, আবার কারও কাছে সূক্ষ্ম বিশ্লেষক। অনেকের কাছে অবশ্য তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি তিনি পাঠক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছেন ‘নামহীন দামহীন’ শীর্ষক বিশ্ব ব্যতিক্রমী এক আত্মজীবনীর মাধ্যমে। আসলে কেমন মানুষ হিমালয়? কাছের মানুষদের চোখে তার ব্যক্তিত্ব কেমন? ব্যতিক্রমী চিন্তার এই মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন তার সঙ্গে কিংবা আশেপাশে থাকা কিছু নিকটবর্তী মানুষ। তাদের বলা কথাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাস প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘দৈনিক অধিকার’ এর ধারাবাহিক আয়োজন, ‘আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়'

আজ প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়জনের ১৪তম পর্ব। এ পর্বে লেখক হিমালয়কে নিয়ে লিখেছেন- শিক্ষা গবেষক কামরুজ্জামান কামরুল

হিমালয় ভাইয়ের সাথে আমার ব্যাক্তিগত পরিচয় ২০১১ সালে, পাইল্যাবস এর থ্রুতে। ক্রিকপলে আমরা কয়েকদিন একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। তারপরে স্বভাবসুলভ ফাঁকিবাজির কারণে আমি পালালেও, হিমালয় ভাই তার কনসিস্টেন্সি দেখিয়ে আস্তে আস্তে অন্যরকম গ্রুপ, সোহাগ ভাই, চমক ভাই এদের সাথে অনেক ক্লোজ হয়ে ওঠেন।

সেই সময়টাতে অন্যরকম গ্রুপ এত বড় ছিল না, মানুষজন কম ছিল, আমিও কমবেশি সবাইকেই চিনতাম। হিমালয় ভাইয়ের সাথে তখন বেশ অনেক সময়ই আড্ডা হয়েছে। তখন খুব আলাদা করে চোখে পড়বার মত কিছু মনে হয়নি, গম্ভীর মতন একটা মানুষ, বয়সের তুলনায় চেহারা আরও বেশি বুড়োটে দেখায়, কথাবার্তাও খুব গোছানো নয়।

ভাইয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় প্রথম তার সংখ্যা সংক্রান্ত কার্যক্রমে আগ্রহ দেখে। আরও স্পেসিফিকালি বলতে গেলে তার পাই এর মান মুখস্থ এর কথা জেনে। সে সময় সমসাময়িক যারা পাই এর মান মুখস্থ করাটাকে গৌরবের সাথে বলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, এমন বেশ কয়েকজন মানুষকেই চিনতাম। কাজেই তখনও হিমালয় ভাই অনন্য কেউ হয়ে ওঠেননি।

এর পরে বিরতিটা বেশ লম্বা। মাঝেমধ্যে গালগল্প হত, টুকটাক আলোচনা, সাহিত্য নিয়ে দু-চার কথা, চমক ভাই, সোহাগ ভাইয়ের সাথে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা এইসব নিয়েই গল্প হত। এর মধ্যেই রকমারির আত্মপ্রকাশ ঘটলো, হিমালয়ের ভাইয়ের প্রথম বই প্রকাশ হলো।

আমি আশাহত হইনি বইটা পড়ে, কারণ হিমালয় ভাইয়ের ব্লগের লেখা আমি এক আধটু ফলো করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে বইয়ে মনে হলো তিনি আগের সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। অতিরিক্ত অধিবিদ্যা এবং রূপকথার মধ্যে চিরচেনা গল্পের অনুপস্থিতি আমাকে ঠিক কখনই টানতে পারেনি। হিমালয় ভাই অনেক চিন্তা করে যেগুলো লিখেছেন, আমি সেগুলো পড়তে গিয়ে ক্লান্ত বোধ করেছি। একটা বা দুটো গল্প বাদে, বাকি সবগুলোই পড়া শেষে মনে হয়েছে, সাহিত্যের এই ধারা আমার জন্য না।

এর পরে হিমালয় ভাইয়ের যে দিকটা উন্মোচিত হয়েছিলো আমার কাছে, সেটা হচ্ছে তার সাহিত্যের সাথে সাথে গান, কবিতা, নাটকের স্ক্রিপ্ট ইত্যাদি। আমার কাছে এই অংশটা বরং বেশি চিত্তাকর্ষক মনে হয়েছে। “একদা একসময়”, “শেষ বলে কিছু নেই” কিংবা ব্লগের কবিতা বা প্রায় কবিতার মত লেখাগুলো পড়ে আমার যতটা ভালো লেগেছে, সেই অনুভূতি তার অন্যান্য বিষয়ের পাণ্ডিত্যে আসেনি। আরও কিছুদিন পরে যখন তার সাক্ষাতকারের বিষয়টি জেনেছিলাম, সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিলো। আমার কাছে যে কোনো একজন মানুষের গল্পই অনেক বেশি ভালো লাগে, ইন্টারেস্টিং লাগে।

মানুষজনের সমালোচনা করা সোজা। কাজেই সে লাইনেই এগোতে থাকি।

হিমালয়

মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়

হিমালয় ভাই নিজেকে একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি মনে করেন, এবং এই ধারাতেই তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে সবসময়। সে কারণেই অনেক সময়ই অনেক কিছু তিনি চিন্তা করতে গিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে পাকিয়ে ফেলেছেন বলে মনে হয়েছে। গণিতে তার আগ্রহ বা কাজ যতটা না বৈচিত্র্যের, ঠিক ততটাই ঠুনকো, ভেতরে সারবস্তুর পরিমাণ কম। তার ভেতরে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করবার একটা প্রবল প্রচেষ্টা বিদ্যমান, যে কারণে তিনি অনেক সময়ই যুক্তিতর্কের বাইরে গিয়েও কার্যক্রমের মাধ্যমে সেটা স্থাপন করার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে।

আমার এ বক্তব্যের সমর্থন নিজের কাছে আরও জোরালো হয়েছে তার সদ্য নামহীন বইয়ের প্রায় পাঁচ অধ্যায় পড়বার পরে। আগেও কখনও কখনও যে উপলব্ধি হঠাৎ করে মাথায় উঁকি দিয়েছে, সেটাই খুব জোরেসোরে গুতোনো শুরু করেছে এতদূর পড়বার পড়ে। যে বিষয়গুলো অনেকের জীবনেই ঘটে, যে বিষয়গুলো অনেকের মাঝেই আছে, সেই বিষয়গুলোকেই সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায় ব্যাখা করার এক প্রবল চেষ্টা দেখেছি আমি তার এই নামহীন বইয়ে। বিশেষত এর চরিত্রসমূহের অনেককেই খুব ভালো মত জানা আছে বলে, বোধটা আরও পোক্ত হয়েছে বৈ কমেনি।

আগের পর্ব পড়তে : হিমালয় ভাইয়ের অসাধারণ অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি রয়েছে

আমি হিমালয় ভাইকে পছন্দ করি। তার প্রথম কারণ, তিনি ব্যাতিক্রম, এত কিছুর পরেও তিনি আর সবার চাইতে ব্যাতিক্রম। চিন্তাশীলতার যে চর্চা এখন আমাদের দেশে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে উনি আসলেই হিমালয় পর্বতের মত অনড় হয়ে আছেন, প্রভাব-প্রতিক্রিয়া নেই, কিন্তু অটল এবং নিশ্চল। বিষয়টি শ্রদ্ধা জাগানিয়ার মতই বটে। ভদ্রলোক মানুষজনদের নিয়ে যে কাজ কর্ম করেছেন, সেগুলো আমার কাছে তার জীবনের সেরা কাজ বলে মনে হয়। তার সাহিত্য নিয়ে আমার কিছুটা ধন্ধ আছে, আমি এখনও নিশ্চিত নই এটি কোন কাতারে পড়ে, হয় সর্বোচ্চ কাতারে যাবে, নাহলে বস্তাপঁচা টাইপের কিছু, যেহেতু খুব শিগগিরিই জানা যাচ্ছে না, কাজেই দ্বিত্বতাই মেনে নিচ্ছি।

অন্যরকম গ্রুপ, বিশেষত রকমারি এবং উদ্ভাসের বিশাল সংখ্যক চিন্তাশীল ভালো কাজে এই ব্যাক্তির অবদান অনন্য এবং আমার স্বার্থ না থাকলেও, আমি কৃতজ্ঞ উনার প্রতি। একটা হাস্যকর রকম চেহারার ট্যাবলেট ল্যাপটপে তিনি অদ্যাবধি এইসব হাবিজাবি করেছেন, এটা ভাবলেও একটু অবাক লাগেই। ক্যাম্নে ম্যান?

ম্যাগাজিন, বিজ্ঞাপন, রিক্রুটমেন্ট, আইডিয়া জেনারেট করা, ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি এবং বিবিধ পাগলামোর সবকিছু তিনি যে বিশাল সময় ধরে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, সেটাকে আমি শ্রদ্ধা করি। অন্যরকম ছেড়ে আসার পরে ব্যাক্তিগতভাবে আমার কৌতুহল অনেক বেড়ে গেছে এখন এবং আমি উনার ভবিষ্যত জীবনের ইভলিউশন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি বলা চলে। ডেফিনিটলি, উনার ভবিষ্যত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা বিশাল উপভোগ্য একটি ব্যাপার হবে।

হিমালয় ভাইয়ের স্মৃতিশক্তি কিছু ক্ষেত্রে দুর্দান্ত। ক্রমশ তার সাহিত্যের ম্যাচিউরিটি বাড়ছে বলেই আমার ধারণা। ব্যাক্তিগত জীবনে উনার সমৃদ্ধি আসুক এবং উনি সারাজীবন চিন্তাশীল জীবন পালন করতে পারুক, এই প্রত্যাশাই থাকবে সর্বদা।

হিমালয় ভাই, আপনার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি। ভালো থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড