ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম
চাকুরির সুবাদে জামালপুর শহরে আছি প্রায় নয় মাস হয়েছে। আসার পর থেকে ধীরে ধীরে জামালপুর শহরকে চিনতে শুরু করেছি। বুঝতে পারছি দেশের অন্যান্য জেলা শহরের চেয়ে কোন অংশেই কম নয় জামালপুর জেলা শহর।
চাকুরি ও পড়াশোনার সুবাদে দেশের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি জেলা শহর দেখার সুযোগ পেয়েছি। সাধারণত কোন স্থানে যাওয়ার পূর্বে ঐ স্থানের দর্শনীয় স্থাপনা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, মানুষগুলোর আচার-আচরণ, পুরনো ও ঐতিহাসিক কোনকিছু আছে কিনা তা নিয়ে ঘাটাঘাটি করি। অতঃপর সেগুলোর একটা তালিকাও তৈরি করে রাখি। এরপর সময় সুযোগ বুঝে চলে যাই সে সব স্থানে।
এইতো, গত কিছুদিন পূর্বে আমার পূর্বের চাকুরি জীবনের কলিগ আরিফুল ইসলাম আরিফ ভাই জামালপুরে আসলেন। ভাবলাম কোথায় যাওয়া যায়? দু’জনে চললাম শাহজামাল (রহঃ) মাজার দেখতে। মাজার থেকে সোজা জামালপুরের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত দয়াময়ী মন্দিরে।
দয়াময়ী মন্দিরটি প্রায় ৩২১ বছরের পুরনো। এটি মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে নির্মিত হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণ রায় চৌধুরী ছিলেন এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। মন্দির এলাকাটি ৬৫ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মন্দিরটিতে প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিক স্থাপত্যের কারুকার্যের সংমিশ্রন পাওয়া যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিনই এখানে পূজা অর্চনা করে থাকেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও এখানে নানাভাবে উদযাপিত হয়। দূর্গাপূজার সময় লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয় মন্দিরটিতে। আবার চৈত্রমাসে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান উৎসবের পর মন্দির ও তার আশপাশে ৪ দিনব্যাপী মেলা হয়।
এই মন্দিরটির পাশেই রয়েছে শিবমন্দির, কালিমন্দির, নাটমন্দির ও মনসা দেবীর মন্দির। আর মন্দিরের পাশের প্রধান রাস্তার সঙ্গে লাগানো আছে শ্রী শ্রী রাধামোহন জিউ মন্দির। রাধামোহন জিউ মন্দিরটি ১২০ বছরের পুরনো। এগুলোর সবগুলোই একই সাথে দেখার সুযোগ মেলে।
ইতিহাস-ঐহিত্যকে যারা মনের মাঝে লালন করেন তাদের কাছে মন্দিরটি ভাল লাগবে। হয়ত নতুন করে জানতে ইচ্ছে করবে মুর্শিদকুলি খাঁর শাসনামল। অপরদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মন্দিরগুলো শুধু সৌন্দর্যই বিলাবে না, পাশাপাশি ঘুরে ফিরে পূজাও দিতে পারবেন। কিন্তু যারা চান অতীত ঐতিহ্য ও স্থাপনাগুলো যুগযুগ ধরে টিকে থাকুক তাদের জন্য মন খারাপ হওয়ার মতো তথ্য রয়েছে। জানার পর হয়ত মনে হবে, দয়াময়ী মন্দিরটাই যেন দয়ামায়াহীন হয়ে টিকে রয়েছে।
মন্দিরের ভেতর ও আশেপাশে মানববন্ধনের কিছু পোস্টার চোখে পড়ে। এছাড়াও ব্যানারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর কিছু আবদার লিখে রাখা আছে। জানা যায়, লেক উন্নয়ন প্রকল্প (সাংস্কৃতিক পল্লী) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্দিরের বেশকিছু ভূমি অধিগ্রহণের কথা ভাবছে জেলা প্রশাসন। তবে মন্দির কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় এখনও ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হয়নি।
ঢাকা থেকে খুব সহজেই জামালপুর আসা যায়। কমলাপুর ও এয়াপোর্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন জামালপুরের উদ্দেশ্যে ট্রেন চলে। এছাড়াও বাসযোগে জামালপুরে আসতে পারবেন। ট্রেনে আসতে সময় লাগে মাত্র ৪-৫ ঘন্টা। তাই যেকোন দিনই চলে আসতে পারেন প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের পুরনো মন্দিরটি দেখার জন্য। ট্রেনে ১৬০ টাকা ও বাসযোগে সাড়ে তিনশত টাকার মতো লাগবে। উভয় বাহন থেকে নামার পর রিকশা ও অটোরিকশাযোগে ১০-১৫ টাকায় মন্দিরে যাওয়া যাবে।
তবে একদিন সময় করে ঘুরে আসুন পুরনো এই মন্দিরে।
তথ্যসূত্র: jamalpur.gov.bd
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড