আফগান ইস্যুতে পদত্যাগে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তানে বিদ্যমান সংকট নিরসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের সরকার ধীরগতিতে কাজ করেছে বলে ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগরিড কাগ। যা কারণে এরই মধ্যে নিজের পদ ছেড়ে দিলেন নেদারল্যান্ডসের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত মাসে আফগান ভূখণ্ডে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর রাজধানী কাবুল থেকে আফগান নাগরিকসহ অন্যান্যদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পর পদত্যাগ করলেন তিনি। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ।

গেল ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে প্রায় পুরো আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে কট্টর ইসলামিক সংগঠন তালেবান। এরপর কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শুরু হয়। তালেবান আতঙ্কে দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগানদের ভিড়ের কারণে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলার। বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি, সহিংসতায় অনেকে হতাহত হন।

এছাড়া সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বোমা হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যসহ নিহত হন ১৭০ আফগান নাগরিক। এরপরও আগস্টের ৩১ তারিখ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে নিরাপদে সরিয় আনার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক বহু আফগান নাগরিকই কাবুল ত্যাগ করতে পারেননি। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনাও কম হয়নি।

বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, তালেবানের হাতে রাজধানী কাবুলের পতনের পর আফগান পরিস্থিতি সামলানো ইস্যুতে সমালোচনার জেরে প্রথম কোনো পশ্চিমা দেশের মন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগরিড কাগ।

আরও পড়ুন : টাইমসের একশ প্রভাবশালীর তালিকায় বারাদার

প্রতিবেদনে মিডিয়াটি জানিয়েছে, আফগান পরিস্থিতি সামলানো নিয়ে ডাচ পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করেন। আফগান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার অত্যন্ত ধীরগতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ডাচ সরকার বহু আফগান নাগরিককে ফেলে এসেছে যারা কার্যত দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক ছিলেন।

যদিও সিগরিড কাগ বলছেন, তিনি তার দায়িত্বপালন করেছেন। কিন্তু এরপরও আইনপ্রণেতাদের রায় তিনি মেনে নিচ্ছেন। অবশ্য তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার সরকার ধীরগতিতে কাজ করেছে এবং তালেবানের অগ্রাভিযানের মুখে তার সরকারের কর্মকাণ্ড ছিল এলোমেলো।

বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর আগস্টের শেষ দুই সপ্তাহে আফগানিস্তান থেকে প্রায় ২ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয় নেদারল্যান্ডস। কিন্তু আফগান ভূখণ্ডে ডাচ সৈন্যদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন এমন আফগান নাগরিকসহ শত শত মানুষকে দেশটিতে ফেলে গেছে ইউরোপের এই দেশটি।

আরও পড়ুন : ইয়েমেনে সেনাবাহিনী সঙ্গে হুথি বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে নিহত ৫০

সদ্য পদত্যাগকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগরিড কাগ দাবি করেন, তার সরকার ‘ভুল ধারণার’ ওপর ভিত্তি করে কাজ করেছিল। তবে তিনি জোর দিয়ে বলছেন, তালেবান যে এতোটা দ্রুত জয়লাভ করবে এবং কাবুলের দখল নেবে। সেটি আসলে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিল। এমনকি তালেবান বাহিনীও বিষয়টির জন্য (হতবাক হয়েছিল)।

ওডি/কেএইচআর