• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যে নীতির জন্য কাশ্মীরে মোদীর কাছে পরাজিত ইমরান

  আজীম ইব্রাহীম

১৭ আগস্ট ২০২০, ১০:০৩
যে নীতির জন্য কাশ্মীরে মোদীর কাছে পরাজিত ইমরান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ছবি : এনডিটিভি)

ভারত কর্তৃক কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া এবং সেটিকে সামরিকভাবে অবরুদ্ধ করার পর পাকিস্তানকেই এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে দেখা গেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিযোগ করে আসছেন, ভারত কাশ্মীরে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে।

তবে কাশ্মীরে এখন যা চলছে, সে জন্য দোষ পাকিস্তানেরও আছে। ইমরান খান যখন এ বিষয়ে সরলভাবে কাজ করছেন, দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কিন্তু তেমন অবস্থানে নেই। কাশ্মীর ইস্যুতে তারা অতিচালাকি করে এবং বরাবরই পরাস্ত হয়।

বিদেশ নীতিতে পাকিস্তান সবচেয়ে বড় সফলতা পায় সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে (১৯৯৭-১৯৮৯)। সে সময় তারা পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়তে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র ও মুজাহিদিনদের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ কৌশলে পাকিস্তান নিজেকে অপরিহার্য প্রমাণ করতে সমর্থ হয়। শুধু তাই নয়, সোভিয়েত-আফগানিস্তান ও সোভিয়েত-ভারত মিত্রের পরিবেষ্টন থেকে দূরে থাকতে নিজস্ব কৌশলগত লক্ষ্যও অর্জন করে দেশটি।

সেই যুদ্ধে ব্যাপকভাবে জয়লাভের পর পাকিস্তানের সামনে সুযোগ আসে সামরিক ও গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধি, জঙ্গিগোষ্ঠী এবং সেসকল নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, যাদেরকে চিরশত্রু ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো যেতে পারে।

পাকিস্তান কখনো ভারতের সঙ্গে সরাসরি সামরিক যুদ্ধে যায়নি। প্রত্যেকেই আশঙ্কা করে এই দুই পারমাণবিক ক্ষমতাধরের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে ফল হবে ভয়াবহ। পাকিস্তান চিন্তা করল, আফগানিস্তানে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে সফল হওয়া কৌশলগুলো এখন ভারতকে চাপে রাখতে কাজ লাগবে। যদিও তারা বোঝেনি যে, ভারত সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে ভারত কাশ্মীরে বিদেশি নয়। যেমনটা সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে ছিল।

আরও পড়ুন : ইসরায়েলে হামাসের ভয়াবহ রকেট হামলার ভিডিও প্রকাশ

এ দিকে পাকিস্তান কাশ্মীর বিষয়ে তাদের অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কারও সমর্থন-সহযোগিতা পাচ্ছে না। শীর্ষস্থানীয় পরাশক্তির সহযোগিতায় আফগান যুদ্ধে পাকিস্তান মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও কাশ্মীরে কিন্তু তাদের একাই লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আবার উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী যেমন লস্কর-ই-তাইয়্যেবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার মাধ্যমে তারাই আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকৃত কাশ্মীরী আন্দোলনগুলোর সফলতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

স্থানীয় মুসলিম অনুভূতিকে কাজে লাগাতেও তারা তেমন কিছু করেনি। মূলধারার কাশ্মীরী ইসলামে সুফিবাদের গভীর প্রভাব রয়েছে এবং আদর্শগতভাবে তারা প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদের বিরোধী, যাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে পাকিস্তান।

আরও পড়ুন : সামরিক শক্তিতে ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে পারবে তুরস্ক?

অপর দিকে ভারত কিন্তু কাশ্মীর শাসনে খুব একটা ভালো করেনি। প্রদেশটির রাজধানীতে পুতুল সরকার গঠনে অপটু চেষ্টা ও নির্বাচনগুলোতে কারসাজির কারণে স্থানীয় কাশ্মীরীদের মাঝে নয়াদিল্লির প্রতি শত্রুতা তৈরি হয়। এই নীতি পাকিস্তানপন্থি যোদ্ধাদের ১৯৮৯ সালে একটি সন্ত্রাসের রাজ প্রতিষ্ঠা করতে সুযোগ করে দেয়। তখন প্রায় সব হিন্দুকে উক্ত উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করা হয়। ফলে ভারত বাধ্য হয় পুরো অঞ্চলটিকে সামরিকায়ন করতে।

ভিন্নভাবে দেখলে আফগানিস্তানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাবেক বন্ধু ও মিত্র ওসামা বিন লাদেন যখন ২০০১ সালের ৯/১১-তে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ শুরু করে, তখন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তখন দুটো বিষয়ের মুখোমুখি হয়; তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বা বিশ্বস্ততা বজায় রাখবে নাকি ইসলামী জঙ্গিদের মিত্র হিসেবেই রাখবে, যাদের ভারতের বিরুদ্ধে দরকার!

আরও পড়ুন : গাজায় ইসরায়েলি বিমান আগ্রাসনের রোমহর্ষক ভিডিও প্রকাশ

পাকিস্তানের পরবর্তী সরকারগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে কাশ্মীরসহ সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে তৎপর জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে এগোতে চায়। তারা এমন নাগরিক প্রশাসনকে একপাশে রেখে দেয়, যারা ভারতের সঙ্গে সংলাপের কথা বলে। এটা ছিল ভুল কৌশল। পাকিস্তান সরাসরি ভারতের কঠোর নীতির লোকদেরকে নিয়ে খেলতে থাকে।

পাক সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার হিসাব কষতে গিয়ে বোকামি করেছে। তারা ওয়াশিংটন ও জঙ্গি, উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চেয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। তাই দেশটি আবিষ্কার করে ফেলে ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে লুকিয়ে আছে এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ না করেই তাকে হত্যা করে।

আরও পড়ুন : বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননকে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিল ইসরায়েল

ভয়াবহ সেই অভিযানের মধ্য দিয়ে প্রহেলিকারও অবসান হয়। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সকল বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। নষ্ট হয় স্নায়ুযুদ্ধজুড়ে দুপক্ষের নিবিড় নিরাপত্তা সম্পর্কও। এদিকে জঙ্গিরাও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে পাকিস্তান আর তাদের আশ্রয় দেবে না।

উভয়ের সঙ্গে খেলার পর পাকিস্তান উভয়ের বিশ্বাস হারায়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালায় এবং জঙ্গিরাও সারাবিশ্বে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালাতে থাকে, আইএসআই’র সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই।

এভাবেই পাকিস্তান উক্ত অঞ্চলে তাদের পূর্বের প্রতিনিধিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। কাশ্মীরে যা এখন সরাসরি মোদীর হাতে খেল।

আরও পড়ুন : ৮ মিনিটেই আমিরাতকে ধ্বংস করবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র, হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

এ দিকে সশস্ত্র বিদ্রোহী আফগান সংগঠন তালিবানের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিচুক্তি করেছেন। যার ফলে আফগানিস্তান থেকে আঞ্চলিক ইসলামপন্থি নেটওয়ার্কগুলোর জন্য প্রচুর অর্থ সহায়তা যাবে। সেসব নেটওয়ার্কগুলোর পরবর্তী লক্ষ্য হবে কাশ্মীরের তথাকথিত স্বাধীনতা।

এসব কথার মানে কিন্তু কাশ্মীরে ভারতের কঠোর ব্যবস্থাকে সমর্থন করা নয়। গত এক বছরে কাশ্মীরে মানবিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমাদের উচিত হবে না কাশ্মীরে মুসলমান নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের বিষয়টি ভুলে যাওয়া। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি প্রদেশে হিন্দু-আধিপত্যবাদী ভারত সরকারের সামরিক দখল অবশ্যই ব্যাপক উদ্বেগের কারণ।

আরও পড়ুন : ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা (ভিডিও)

যদিও পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী তাদের নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আক্রমণের জন্যই ব্যবহার করে এসেছে কাশ্মীরকে। এই বোকামির ফলে ভোগান্তি কিন্তু সীমান্তের ভারতীয় অংশে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের উপরই নেমে এসেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড