• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনা চিকিৎসায় জীবন রক্ষাকারী প্রথম ওষুধের অনুমোদন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ জুন ২০২০, ২২:৩৮
করোনা চিকিৎসায় জীবন রক্ষাকারী প্রথম ওষুধের অনুমোদন
করোনা ভাইরাসের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে (ছবি : প্রতীকী)

ডেক্সামেথাসোন নামে সস্তা ও সহজলভ্য একটি ওষুধ করোনা ভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড চিকিৎসা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার।

এই ওষুধ ব্যবহার করলে ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ কমানো যাবে। আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার এক পঞ্চমাংশ কমানো সম্ভব।

বিশ্বে এই ওষুধ নিয়ে সর্ববৃহৎ যে ট্রায়াল বা পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল তার অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছিল এই ওষুধ করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায়ও কাজ করবে কিনা।

গবেষকরা অনুমান করছেন, ব্রিটেনে যখন করোনা মহামারি শুরু হয়েছে তার প্রথম থেকেই যদি এই ওষুধ ব্যবহার করা সম্ভব হতো তাহলে পাঁচ হাজার পর্যন্ত জীবন বাঁচানো যেত। কারণ এই ওষুধ অত্যন্ত সস্তা।

তারা দাবি করেছেন, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধ বিশালভাবে কাজে লাগতে পারে। এবং যেসব দেশ রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে এটা তাদের জন্য বিশাল সুখবর।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, আমি পুরোপুরি আনন্দিত যে আজকে আমরা কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় বিশ্বের প্রথম সফল ক্লিনিকাল ট্রায়াল ঘোষণা করতে পেরেছি। এই চমকপ্রদ ও যুগান্তকারী ঘটনাটি আমাদের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পর্দার আড়ালে করা অবিশ্বাস্য কাজের এক প্রমাণ।

তিনি আরও বলেন, আজ থেকে করোনা চিকিৎসায় ডেক্সামেথেসোন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমরা এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের মোকাবিলা করে হাজার হাজার জীবন বাঁচাতে সহায়তা করব।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রতি ২০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ১৯ জনই সুস্থ হয়ে ওঠেন যাদের হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজনই হয় না। তাছাড়া যাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, তাদের মধ্যেও অধিকাংশই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু কিছু কিছু রোগীর প্রয়োজন হয় অক্সিজেন চিকিৎসা অথবা কৃত্রিমভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্য ভেন্টিলেটর লাগাতে হয়।

এই উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের জন্যই ডেক্সামেথাসোন সাহায্য করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা ওষুধটি ইতোমধ্যে বেশকিছু রোগের ক্ষেত্রে প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টায় মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন শরীরের ভেতর যে ক্ষতিগুলো হয় এই ওষুধ ডেক্সামেথাসোন সেই ক্ষতি কিছুটা প্রশমন করতে পারবে।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন সেই প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় সাইটোকিন স্টর্ম যেটা প্রাণঘাতী হতে পারে।

এই সাইটোকিন স্টর্ম শরীরের ভেতর ইমিউন ব্যবস্থায় এমন একটা ঝড়, যেখানে প্রতিরোধী কোষগুলো বাইরের সংক্রমণ ধ্বংস করার বদলে শরীরের সুস্থ কোষগুলোও ধ্বংস করতে শুরু করে। যার ফলে বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো হয়ে যেতে শুরু করে।

ব্রিটেনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই হাজার হাসপাতাল রোগীর ওপর পরীক্ষা চালায়। তাদের ডেক্সামেথাসোন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এদের সঙ্গে তুলনা করা হয় চার হাজারের বেশি রোগীর যাদের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি।

গবেষকদের দাবি, এরকম যেসব রোগী ভেন্টিলেটরে আছেন বা যারা অক্সিজেন চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের জীবন বাঁচাতে এই নতুন ওষুধ সাহায্য করবে।

দেখা গেছে, যেসব রোগী ভেন্টিলেটরে ছিলেন তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি এই ওষুধ নেবার ফলে ৪০% থেকে কমে ২৮%এ দাঁড়ায়। আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫% থেকে কমে আসে ২০%।

অনুসন্ধান দলের প্রধান অধ্যাপক পিটার হরবি বলেছেন, এখন পর্যন্ত এটাই একমাত্র ওষুধ যা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে বলে দেখা যাচ্ছে। এই ওষুধ প্রয়োগে মৃত্যু ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক মার্টিন ল্যানড্রের মতে, এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ভেন্টিলেটরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এমন প্রতি আট জন রোগীর মধ্যে একজনের প্রাণ এই ওষুধ দিয়ে বাঁচানো সম্ভব। আর যেসব রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাদের প্রতি ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে একজনের জীবন এই ওষুধে বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, এই ওষুধের সুস্পষ্ট সুফল আছে। এই চিকিৎসায় রোগীকে ১০ দিনের জন্য ডেক্সামেথাসোন দিতে হবে। এর জন্য খরচ হবে রোগী প্রতি প্রায় ৫ পাউন্ড। আর এই ওষুধ পৃথিবীর সব দেশে পাওয়া যায়।

অধ্যাপক ল্যানড্রে বলছেন, হাসপাতালে রোগীকে প্রয়োজন হলে এখন দেরি না করে এই ওষুধ দেয়া উচিত। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কেউ যেন এই ওষুধ বাজার থেকে কিনে ঘরে মজুত করে না রাখেন। যাদের করোনা ভাইরাসের হালকা উপসর্গ দেখা দেবে, অর্থাৎ যাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না, তাদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন প্রযোজ্য নয়।

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ওষুধ নিয়ে ট্রায়াল চালানো হচ্ছিল। যেসব ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল তার মধ্যে ছিল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও।এই ওষুধটির ওপর পরীক্ষা পরে বাতিল করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন : করোনাকালে সুস্থ থাকতে যে কাজগুলো করবেন

কারণ এই ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় হার্টের সমস্যা এবং অন্য প্রাণনাশক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। আর একটি ওষুধ রেমডেসিভির, যেটি অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেটি সেরে ওঠার সময় কিছুটা তরান্বিত করতে পারে বলে দেখা যাবার পর করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড