• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কেমন যাচ্ছে মানারাত শিক্ষার্থীদের অবসর

  আসমাউল মুত্তাকিন, এমআইইউ প্রতিনিধি

১১ মে ২০২০, ২৩:৪২
মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি : সম্পাদিত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন সারা বিশ্ব। এই ভাইরাসের ছোবল বাংলাদেশেও আক্রমণ করেছে। দিনদিন বাড়ছে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু সংখ্যা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে রাজধানীর অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এমআইইউ)।

ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ঘরবন্দি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের এই দিনগুলো কেমন কাটছে- এ নিয়ে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক অধিকারের মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসমাউল মুত্তাকিন।

আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, ইংরেজি বিভাগ

কোয়ারেন্টিন কেমন কাটছে এ প্রশ্নের উত্তর হবে এক শব্দে আলহামদুলিল্লাহ। করোনার এই সময়টায় অনেকেই অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি সুস্থ এবং ভালো আছি। প্রথমদিকের দিনগুলোতে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যায় পরেছিলাম। কিন্তু এখন মানিয়ে নিয়েছি। করোনার সময়টাতে সারাক্ষণই ঘরের মধ্যে থাকা হয় বিধায় আমি আমার অনেক অভ্যাস পরিবর্তন করতে পেরেছি। অনেক বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করছি। প্রেজেন্টেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট, লিডারশিপসহ এরকম ৪৫ এর বেশি অনলাইন সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছি এবং নতুন নতুন অনেক কিছু শিখেছি। কোর্সেরা, ইনডেক্স, ফিউচার লার্ন, উডেমিসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন লার্নিং ওয়েবসাইট থেকে অনেকগুলো অনলাইন কোর্স করেছি। নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়িয়েছি। এখনো নতুন নতুন বিষয় শিখে যাচ্ছি। এছাড়াও প্রতিদিনই অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের লাইভ প্রোগ্রাম দেখছি এবং শিখছি। আর এগুলো ছাড়াও আমার ইন্টারের স্টুডেন্টদের অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি এবং তাদের জন্য স্টাডি ম্যাটারিয়ালস আপডেটের কাজ করে যাচ্ছি। সব থেকে বড় ব্যাপার হলো, আমি এ সময়টাতে কর্পোরেট জগত নিয়ে অনেক বেশি জানার চেষ্টা করছি এবং কর্পোরেটের অনেকের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ হচ্ছে। এছাড়াও এ সময়টাতে ‘জেনারেশন জেড’ নামক একটি অর্গানাইজেশনের হয়ে কন্টেন্ট তৈরি করছি। ইতোমধ্যে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল চলে এসেছে এবং সেখানে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে হচ্ছে। আর আমার মতো তরুণদের নলেজ শেয়ারের জন্য আমরা কয়েকজন মিলে একটি লার্নিং প্লাটফর্ম তৈরি করেছি। এছাড়াও প্রচুর বই পড়া হচ্ছে, ঘুমের অভ্যাসও ঠিক করে ফেলেছি, ধর্ম পালনের দিকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছি। মোটকথা, নিজের সময়টাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।

মিনহাজুল হক, ফার্মেসি বিভাগ

কোয়ারেন্টিন আল্লাহ রহমতে ভালো কাটছে। প্রথম কয়েকদিন ভালো লাগছিল না। মন খারাপ ছিল।এখন ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো কাটছে। এই কোয়ারেন্টিনে আমি চারটা টাইম ভাগ করে নিয়েছি। প্রথমতো আমি আমার শরীরচর্চা করছি ঘরের মধ্যে। নিজেকে একজন ভালো ক্রিকেটার হিসেবে তুলে ধরতে স্কিলগুলো প্রতি নজর দিচ্ছি। পাশাপাশি কয়েকটা ইসলামিক বই পড়েছি। অনলাইন ক্লাস করছি। সঙ্গে থাকছে বাসার টুকটাক কাজ। এগুলো মিলে যাচ্ছে কোনোরকম। কোয়ারেন্টিনে মানুষের একঘেয়েমি জীবন ভালো লাগে না। তাই নিজে একটু সময় করে মেডিটেশন করছি। সবার খোঁজ খবর নিচ্ছি। ক্যাম্পাসকে মিস করছি। ক্যাম্পাসের মাঠে খেলাধুলা, আড্ডা প্রিয়, স্যার, বন্ধুদের সবাইকে মিস করতেছি। তবে মনকে মাঝে মাঝে বুঝাই। করোনার এই ঝড় একদিন থেমে যাবে। আবার আমরা সবাই ক্যাম্পাসে একদিন ফিরবো। আবার আমাদের শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে ক্যাম্পাস।

মো. শহীদুল্লাহ মানসুর, আইন বিভাগ

কোয়ারেন্টিন বলতে আমরা সাধারণত নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে বুঝি, কিন্তু এ আবদ্ধ রাখা জনকল্যাণের জন্য, দেশের স্বার্থে। এখন কেমন কাটছে এ প্রশ্নের উত্তর যদি দিতে হয় তবে এক শব্দে আলহামদুলিল্লাহ। করোনার এই সময়ে সমগ্র দুনিয়া অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সুস্থ এবং ভালো আছি। প্রথম দিকের দিনগুলো ছিল অনেক কঠিন। হঠাৎ করে এমন অস্বাভাবিক সময়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যাই হয়েছিল। কিন্তু এখন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। করোনার সময়টাতে প্রায় সারাক্ষণই ঘরে থাকা হয় সুতরাং অনেক অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। কাজ করছি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে। আমার লেখালিখির অভ্যাস অনেক আগে থেকে ছিল। কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে সময় দেওয়া হতো না। কিন্তু এই অবসরে লেখার জন্য অনেক সময় পাচ্ছি। লিখতে গেলে প্রচুর পড়তে হয় তাতে অনেক জানা হচ্ছে। এছাড়াও আমার শখের ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করছি। ফটোগ্রাফির একটি অনলাইন কোর্স করলাম এই অবসরে। জানা হলো অনেক কিছু। প্র্যাক্টিকালি করতে গিয়ে বেশ ভাল অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এছাড়াও বই পড়া হচ্ছে, ঘুমের অভ্যাসও ঠিক করে ফেলেছি, ধর্ম পালনের দিকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছি। মোটকথা, অবসরে কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেই যাচ্ছি যেন এই অস্বাভাবিক সময়ের পর যেন নিজেকে হারিয়ে না ফেলি। এই অবসর যেন অভিশাপ হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য নিজকে ব্যস্ত রাখছি বহুমুখী কাজে।

মো. নাজমুচ্ছাকিব, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ

কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কাটছে। এইসময় এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির জন্য শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছি। সেটি সম্ভব হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার কারণে। প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পরে এলাকায় চলে আসি। তারপর এলাকার যুবকদের নিয়ে গঠন করি ধানাইদহ পশ্চিমপাড়া যুব সংঘ। এই সংগঠনের সাম্প্রতিক সময়ের কাজ হলো করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি এবং দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। পরিবার ও কাছের মানুষদের উৎসাহিত করছি। তারা যেন হোম কোয়ারেন্টিন সঠিকভাবে মেনে চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনেক পোস্ট দিচ্ছি। এগুলো করার পরও আল্লাহ রহমতে এখনও পরিবার সহ সুস্থ আছি এবং আল্লাহর অশেষ কৃপায় এখনও আমার উপজেলা (বড়াইগ্রাম) করোনাভাইরাস মুক্ত। প্রায় দেড়মাস এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করার পরে এখন মনে হচ্ছে আমাদের কষ্ট কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে। মানুষ নিয়মকানুন গুলো মেনে চলতে শিখছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে চলে যাবো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত। হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য কিছু বই পড়ার চিন্তা করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বন্ধু বান্ধব ও ছোটভাই বোনদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডা মিস করছি। মেস লাইফের ইফতারি মিস করছি। মোটকথা আমি আমার গ্রামকে করোনা মুক্ত দেখতে চাই।

নাফিস ইবনে মাসুদ, ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

২০১৯ এর ডিসেম্বর টা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন এক আমেজ নিয়ে ২০২০ এ পদার্পণ করেছিলাম। মানারাতের ক্যাম্পাসে খুবই নিয়মিত যাওয়া আসা হচ্ছিল। বড় ভাইদের সঙ্গে আড্ডা, ক্লাসে স্যারদের মজার মজার অভিজ্ঞতার গল্প আর মাঠে খেলাধুলা করে ভালোই কাটছিল বছরের শুরুতে। ভাবছিলাম সারাটা বছর হয়তো এভাবেই কাটবে। এর মধ্যে বাবা একদিন অফিস থেকে মাস্ক নিয়ে আসলেন। ঘটনা শুনে বুঝলাম চীনে উহানে নতুন ভাইরাসের উৎপত্তি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে মনে এমন একটা ভাব ছিল ধুর বাংলাদেশ আগের মতোই থাকবে। দেখতে দেখতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলো। নিরুপায় হয়ে এখন বাসায় বসে বসে ঘরবন্দী এক জীবনের স্বাদ নিচ্ছি। যারা বলতো বছরে ছয় মাসের দুটো ছুটি চাই তারা এখন বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য ছটফট করছে।

ইসরাত জাহান অমি, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ

আমার ঘরবন্দি জীবনটা মোটামুটি ভালোই কাটছে। এই সময় অ্যাকাডেমিক পড়ার একটু ক্ষতি হলেও ব্যাপক অবসর সময় থাকার কারণে বিভিন্ন বিষয়ে আমার যে দুর্বলতাগুলো আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছি। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিতে পারছি সেটাই আমার কাছে খুব ভালো লাগতেছে। তারপরও আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেনো দ্রুত এই পৃথিবী সুস্থ হয়ে যায়।

মো. জাহাঙ্গীর হাসান, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

কোয়ারেন্টিনের সময়টা আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তবে অবসরটা অনেক বিরক্তিকর লাগে। কাজের কাজ সেই রকম কিছুই হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে দিনের দীর্ঘ একটা সময় ঘুমাচ্ছি। দিনে ৩/৪ ঘণ্টা ফোন নিয়ে পরে আছি। আর মাঝে মাঝে একটু আধটু বই পড়ছি, বা নোট করছি। এই অবসরে ক্যাম্পাসকে সবচেয়ে বেশি মিস করছি। করোনা মহামারি না থাকলে দিনের বেশিভাগ সময়টাই ক্যাম্পাসে কাটতো। সেই ক্যান্টিনের চায়ের আড্ডা, বন্ধু-বান্ধব মিলে একটু আধটু খেলাধুলা অথবা টিচারের ক্লাস সবটাই মিস করছি। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে চাই প্রিয় ক্যাম্পাসে। এখন তো অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। অ্যাকাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এটা একটা ভালো উপায়। তারপরেও ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করা আর অনলাইনে ক্লাস করার একই হতে পারে না। ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করাটাই কিছু শেখার জন্য উত্তম উপায়। তাছাড়া এই করোনায় ইচ্ছা আছে অনলাইনে কিছু কোর্স করার। এর পাশাপাশি নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার বাইরে কিছু বই পড়া ও নোট করার একটা পরিকল্পনা করেছি। ইনশাআল্লাহ তা বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আশা রাখি। এই মিলে কাটছে আমার বর্তমান জীবন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড