• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মাটি খেকোদের ভয়াল থাবায় কৃষি জমি হারাচ্ছে ফটিকছড়ি

  আবুল মনসুর, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)

১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:১০
কৃষি জমি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পরিবেশ আইন অমান্য করে নির্বিচারে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপসয়েল) কেটে বিক্রি করার মহোৎসবে মেতেছে এশাধিক চক্র। এতে চাষাবাদের অনুপযোগী হচ্ছে এসব কৃষি জমি। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। তাছাড়া এসব জমি পতিত হয়ে কৃষি উৎপাদনও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং মাটি বহনকারী গাড়ি গ্রামীণ সড়কে চলাচলের কারণে ধূলাবালিতে একাকার হচ্ছে পাশ্ববর্তী এলাকার বসতবাড়ি ও জনবহুল স্থান। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে ভয় ভীতি দেখিয়ে থাকে সিন্ডিকেট সদস্যরা।

যদিও পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কাটা অপরাধ। অথচ এক শ্রেণির মাটি খেকো এসব মাটি ছোট-বড় ট্রাক বা ট্রলিতে করে চড়া দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। মাটি খেকোরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় মানছে না সরকারি বিধি নিষেধ। অভিযানের পর সাময়িক বন্ধ হলেও ফের চালু হয় টপসয়েল কাটা। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন, চিকনদ-ী, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা এবং শিকারপুরসহ অর্ধশতাধিক স্থানে ফসলি জমি থেকে এক্সকাভেটর (ভেকুযন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব ফসলি জমির মাটি এনে ভরাট করা হচ্ছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানাধীন জায়গা। এছাড়া অনেকে কৌশল অবলম্বন করে আবাদী জমিতে পুকুর খননের নামে মাটি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গেলে মৎস্য চাষের বিষয় সামনে নিয়ে আসছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চিকনদ-ী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আবদুল মজিদ মাস্টার বাড়ির মৃত হাশেম চৌধুরীর পুত্র সাইফুল ইসলাম আরিফ নামে এক ব্যক্তি ছড়ারকূল সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বে বালুর টালের বিপরীতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি রোডে পূর্ব পাশে লাগোয়া ফসলি জমির মাটি এক্সকাভেটর দিয়ে টপসয়েল কেটে দেদারছে বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি (সাইফুল ইসলাম আরিফ) এক রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে ইউএনও’র কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে বললেও পরক্ষণে অনুমতির বিষয়টিকে এড়িয়ে যান এবং কৌশল অবলম্বন করে মাছ চাষের জন্য পুকুর খননেন বিষয় সামনে নিয়ে আসেন।

ভূক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। অথচ উপজেলার উল্লেখিত স্থানগুলোতে প্রকাশ্যে এ আইন অমান্য করা হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অর্থদন্ড প্রদানের পর মাটি কাটা সাময়িক বন্ধ হলেও ফের চালু হয়। এছাড়া প্রতিনিয়ত কৃষি জমির উপর দিয়ে মাটি বহনকারী গাড়ি চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে জমি ও ফসল। পাশাপাশি ধূলাবালিতে একাকার হচ্ছে পাশ্ববর্তী এলাকার বসত বাড়ি ও জনবহুল স্থান। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে সিন্ডিকেট সদস্যরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, টপসয়েল জমির প্রাণ। জমির উপরের আট থেকে ১০ ইঞ্চিই হলো টপসয়েল। আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপসয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির উর্বরা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন। জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন সিকদার বলেন, কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নেওয়ার ফলে উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে থাকে, যা জমিকে বন্ধ্যা করে ফেলে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমির জৈব শক্তিকে কমিয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে। তবে বিভিন্ন সময় কৃষকদের টপসয়েল বিক্রি থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে আমার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের আর্থিক জরিমানা করে যাচ্ছি, যা অব্যাহত রয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড