• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কলাপাড়ায় দিন দিন বাড়ছে গোলের গুড়ের চাহিদা

  মোঃ আরিফ সিকদার, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫০
গোলের গুড়

নোনা জলে জন্ম। অঙ্গ-প্রতঙ্গ সবই নোনা। অথচ এর ডগা কাটলেই বেড় হচ্ছে মিষ্টি রস। এ রস দিয়ে তৈরী হচ্ছে গুড়। আর এ গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার উপকূলের কয়েক’শ কৃষক পরিবার। কিন্তু বর্তমানে লোকসানের মুখে হতাশায় এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। তবে এ পেশাকে আরও সমৃদ্ধ করতে প্রতি বছর পতিত জমিতে হাজার হাজার চারা রোপন করছে বন বিভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার জোয়ার-ভাটা প্রবাহমান পতিত জমিসহ ডোবা নালায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গোলপাতার বাগান। প্রায় শত বছর ধরে এ গোল গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার। বিশেষ করে পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে গোলগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে চাষীরা। প্রতিদিন বিকালে গাছের ডগা কেটে মাটির হাড়ি পেতে রাখা হয়। পরের দিন সকালে হাড়ি থেকে রস সংগ্রহ করে উচ্চ তাপে তৈরী করা হয় গুড়। কোন ধরনের কেমিকেল ছাড়া গরম গুড় একটি পাত্রে রেখে ঘুটে তৈরী করা হয় উন্নমানের গুড়। আর এ গুড় প্রতি কেজি বাজারে বিক্রি করা হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পাওয়ায় দিনদিন বাগান উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সরকারী কোন প্রনোদনা না পাওয়ায় হতাশায় অনেকেই পরিবর্তন করতে চাইছেন এ পেশা।

নীলগঞ্জের গোলচাষী বিধান চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, দিনকে দিন গোলের গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে আমাদের গুড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। এখন মোবাইলে বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগাযোগ করে নিয়ে যায়। বর্তমানে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রয় করছি।

অপর এক চাষী নির্মল চন্দ্র মৃধা বলেন, আমাদের নিকট থেকে ২’শ টাকা দরে কিনে নিয়ে একটি গ্রুপ অনলাইনে ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকা দরে বিক্রয় করছে। কিন্তু ক্রেতারা সরাসরি আমাদের নিকট থেকে ক্রয় করলে ২’শ টাকায় পাবে।

চাষী দেবাশীষ বলেন, গোলের গুড়ের চাহিদা বাড়লেও দিন দিন বাগান কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনসহ নানা কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। পানি প্রবাহ সচল রাখতে এলাকার খালের বাঁধগুলো কেটে উন্মুক্ত করলেই গোলগাছ বৃদ্ধি পাবে।

তবে কৃষকরা দাবী করছেন, গোলের গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এ গুড় খেলে ডায়াবেটিকস বৃদ্ধি পায় না, মানব দেহের গুড়াকৃমি দমন থাকে। পানিবাহিত রোগীরাও খেতে পারে। উপকূলীয় এলাকার খালগুলো খনন করে জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারলে গোলগাছ ধ্বংস হবে না। নতুন বাগান সৃষ্টি করলে গোলের গুড়ের উৎপাদন আরও বাড়বে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্র্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, এ উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে গোলগাছের বাগান রয়েছে। গোলগাছ থেকে দুৃই শতাধিক পরিবার রস আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার গুড় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গোলগাছের বাগান হারিয়ে যাচ্ছে। গোলগাছের বাগান বৃদ্ধির জন্য বনবিভাগ ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্র্মকর্তা (উপ বন সংররক্ষক) মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, গোলগাছ হচ্ছে একটি অর্থকরী বনজ ফসল। আমরা ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার পতিত জমিতে ৩০ হাজার গোলের চারা রোপন করেছি। চলতি বছরে আরও ২০ হাজার চারা রোপন করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড