মো. আব্দুর রহিম, স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম উইনিয়নের জলপাইতলী এলাকায় মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশী নারী’সহ এক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত হয়েছে। নিহত নারী চম্পাতলীর বাসিন্ধা বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫) তবে অপর রোহিঙ্গা শ্রমিকের নাম পাওয়া যায়নি।
সোমবার আড়াইটার দিকে মিয়ানমারের ঢেঁকুবুনিয়া বিজিপি মক্যাম্প এলাকা থেকে একটি মর্টার শেল এসে এপারের বসতবড়িতে পড়লে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া ওপারে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ও মিয়ানামার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় সীমান্তের এপারে এ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপির ৯৫ জন সদস্য। এর মধ্যে প্রায় গুলিবিদ্ধ প্রায় বিশ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম ও তুমব্র বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানামার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সদস্যদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগে গত রোববার তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে ৫৮জন বিজিপি সদস্য আশ্রয় নেন। পরে সোমবার সকালে আরও ৩৭ জন বিজিপি সদস্য ঘুমধুম এলাকার বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। তারমধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থা আছেন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানন গেছে। এ পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫ জন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। এতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গোলাবারুদ, বিস্ফোরক ব্যবহারের পাশাপাশি যুদ্ধবিমান থেকে ছোঁড়া হচ্ছে বোমা ও গুলি। এছাড়া সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিও পাল্টা জবাবে আকাশে ছোঁড়ছে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র রকেট লাঞ্চার ও গুলি। এসব রকেট লাঞ্চার ও গোলাগুলি বিস্ফোরিত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম তুমব্রু এলাকার জনসাধারণের বসতবাড়িতে এসে পড়ছে। এতে এপর্যন্ত বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্ধা প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে পুরো ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্ধারা।
এদিকে, ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির রাইট ক্যাম্পটি আরাকান আর্মির দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিজিপির এই ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার জান্তাবাহিনী কর্তৃক ক্যাম্পের আশেপাশে আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান থেকে গুলি ও বোমা ফেলা হচ্ছে। পাল্টা জবাবে আরাকান আর্মিও যুদ্ধবিমান লক্ষ করে রকেট লাঞ্চার ও গুলি নিক্ষেপ করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের ওপারে উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা চালছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী ঘুমধুম ইউনিয়নের উদ্যোক্তা মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ঘুমধুম উইপির জলপাইতলী এলাকায় মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে হোসনে আরা বেগম (৪৫) নামে এক বাংলাদেশী নারী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও এক রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত হয়েছে।
ঘুমধুম এলাকার বাসিন্দা টিপু বড়ুয়া জানান, ঘুমধুম সীমান্তে ভোর রাত ৩টা থেকে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। পরিবারের সবাই না ঘুমিয়ে বসে ছিলাম। ওপার থেকে বহু বিজিপি সদস্য এপারের বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। এ ঘটনায় অনেক মানুষ এখন ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় অবস্থান করছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক আব্দুস সালাম জানান, বিগত কয়েকদিন ধরে সীমান্তে যে উত্তেজনা চলামান রয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। পাশাপশি র্যাব, পুলিশ, অন্যান্য বাহিনীসহ আমারও দয়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এখানে অনেক লোক বাহিরে ঘুরাঘুরি করছে তাদের জন্য ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করছি। ওপার থেকে নিক্ষেপিত গোলা এখানে এসে পড়ে এক নারী’সহ দুই জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্ধাদের সতর্ক থাকার আহব্বান জানান তিনি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ঘুমধুমের জলপাইতলী এলাকায় মিয়ানমারের ছোঁড়া গোলায় বাংলাদেশী নারীসহ দুই জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। পাশাপাশি সোমবার ভোর থেকে বিস্ফোরণের খবর শুনা যাচ্ছে। নিরাপত্তার বিষটি বিবেচনায় ঝুকিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণকে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সর্বিক পরিস্থিতি আমাদের অনুকুলে আছে এবং বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড