মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ (কক্সবাজার)
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে গত এক মাস ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে টেকনাফ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের ওপারে কয়েকদিন ধরে চলছে মর্টারশেল ও ভারী গুলিবর্ষণ।
গতকাল শনিবার বিকালে টেকনাফ উপজেলা হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তে স্থানীয় এক বাসিন্দার বসত ঘরে মিয়ানমারের ছোড়া কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল আঘাত হেনেছে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা আবারও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আশংকা করছেন।
তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি প্রশাসন পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনী সীমান্তে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
গত কয়েকদিনে ওপারে তীব্র গোলাগুলির শব্দ প্রকম্পিত হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায়। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকাল থেকে টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের ওপারে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে উলুবনিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দার বসত ঘরে একটি গুলি এবং বিভিন্ন জায়গায় ১৩ টি মর্টারশেল এসে পড়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান রোববারও দিনভর সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সীমান্ত লাগোয়া ওপারে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা আতংকে রয়েছেন। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে রোহিঙ্গাদের আবারও অনুপ্রবেশের আশংকা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সীমান্তবাসীর আতংক কাটাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিজিবিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান,মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্টি আরাকান আর্মির মধ্যে গত এক মাসের বেশী সময় ধরে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সর্বত্রই এ লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রাজ্যটির অস্থির ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালুর মাধ্যমে মুঠোফোনে কথা হয় সামজিদা বেগমের সাথে। তিনি জানান, শনিবার সকাল থেকেই টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের মিয়ানমার অংশ থেকে মর্টারশেল ও গুলি ফায়ারের শব্দ আসতে থাকে এপারে। এতে করে সীমান্তবর্তী বসতবাড়ি কম্পিত হয়।
এদিকে রোববার দুপুরে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। এ সময় তিনি বিজিবির সদস্যদের প্রতি সীমান্তে কঠোর নজরদারি জোরদারের পাশাপাশি যে কোন পরিস্থিতি মোরাবেলায় সতর্কতামূলক প্রস্তুতি অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান- সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। উদ্ভূদ পরিস্থিতি সম্পর্কে উর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোন রোহিঙ্গার যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে এ ব্যাপারে প্রশাসন সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। পরে বিজিবির সদস্যরা খবর পেয়ে বসত ঘরে এসে গুলিটা নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি।’
সীমান্তবর্তী স্থানীয়দের সরানো হবে কি না জানতে চাইলে আদনান চৌধুরী বলেন, ‘পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিজিবি যদি আমাদের জানায়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড