• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বন কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে চলছে মাছ- কাঁকড়া ধরা

  সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:২২
সুন্দরবন
প্রতীকি ছবি

বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন পাটকোষ্টা, কাগাদোবেকী, ভোমরখালী, নীলকোমল টহল ফাঁড়ির আওতাধীন খাল ও তৎসংলগ্ন সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার নদনদীতে শতশত জেলে নির্বিঘ্নে মাছ ও কাঁকড়া ধরার অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে প্রতি গোনে নৌকা প্রতি ঘুষ দিয়ে জেলেরা ওই অভয়ারণ্যে অবাধে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করছে। অল্প সময়ে বেশি মাছের আসায় বিষ দিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগও রয়েছে অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে। এতে নষ্ট হচ্ছে সুন্দরবনের মাছের প্রজননক্ষেত্র। ধ্বংস সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য । তবে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্টেশন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এলাকায় মাছ প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। অভয়ারণ্যে মাছ ধারার দায়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযান ও মামলা অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন টহল ফাঁড়িগুলোর অধীনে বেশ কয়েকটি খাল মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মাছের প্রজননের জন্য এ খালগুলোকে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকা পাটকোষ্টা টহল ফাঁড়ির আওতাধীন চেরাগখালী খাল, ঝালিয়াখাল, মোরগখালী খাল, কাগাদোবেকী টহল ফাঁড়ির আওয়াতাধীন কালিরচর, শিসখালী, ছদনখালী, কাগানদী, মরাকাগা, কেওড়াতলী খাল,ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন কুকুমারী, ভোমরখালী খাল, খলিশাবুনিয়া,বড়কুকুমারী খাল, নীল কোমল অভয়রণ্য কেন্দ্রে টহল জোরদার থাকলেও বঙ্গবন্ধুর চ্ধসঢ়;বর, বন্ধের খাল, কেওড়াসুতি খাল, কলাতলা খালে ঢুকে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে বেশ কয়েকটি জেলে গোষ্ঠী। অধিকাংশ জেলে কোম্পানী নামধারী অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই কোম্পানীরাই বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে বিষ দিয়ে মাছ শিকার, হরিণ শিকারসহ জীব বেচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছে। এই মাছ কোম্পানীরা সবসময় জেলে ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যস্ততাকারী হিসাবে কাজ করে থাকে। মাঝে মধ্যে বনবিভাগের লোক দেখানো অভিযানে কিছু জেলেকে আটক করা হলেও অধিকাংশ জেলে ও কোম্পানী নামধারী অসাধু ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

অভিযোগ রয়েছে, কোনো বন কর্মকর্তা ওই এলাকার কোনো লোক এই কোম্পানী নাম ধারী অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হয়রানির শিকার হতে হয়। সম্প্রতি কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনেন বিদায়ী স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ বিষ দিয়ে মাছ ধরা অসাধু জেলের নাম প্রকাশ করায় তাকে একাধিক মামলা দিয়েও হয়রানিও করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে বলেন, অভয়ারণ্যে মাছ ধরার সুযোগ করে দিতে প্রতি গোন নৌকা প্রতি ৬০০০-১০০০০ টাকা দিতে হয় বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট খালের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দিতে হয়। কেউ কেউ বলেন আমরা কোম্পানীর মাধ্যমে এসেছি, তারা ম্যানেজ করছে বন বিভাগকে। তারা অভিযোগ করে বলেন, যদি তাদের ঘুষ না দিয়ে ঢুকি তাহলে মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।

এ ব্যাপারে মহেশ্বরীপুরের আমজাদ নামে এক জেলে বলেন, অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। অল্প সময়ে অনেক মাছ পাওয়ার আসায় জেলেরা এই অসৎ পথ অবলম্বন করে থাকেন।

দক্ষিণবেদকাশির জেলে আজিজুল ইসলাম বলেন, বন কর্মকর্তাদের খুশি করে চলতে পারলেই বেশি লাভবান হওয়া যায় সুযোগ পাওয়া যায় অভয়ারণ্যে মাছ শিকারের। বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ ছাড়া হতে হয় নানা হয়রানির শিকার ।

এ বিষয়ে সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। আমার নীল কোমল অভয়ারণ্য এলাকায় নৌকা ঢুকিয়ে মাছ কাঁকড়া ধরার কোন সুযোগ নেই। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। আমার ভয়ে এ অঞ্চলে কোনো জেলে নৌকা ঢুকাতে সাহস পায় না৷

সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ডক্টর আবু নাসের মহসীন হোসেন বলেন, জেলেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংরক্ষিত এলাকায় মাছ শিকার বন্ধে বনবিভাগের লোকজন সবসময় তৎপর রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড