• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মণিরামপুরবাসীর গলার কাঁটা নির্মানাধীন ব্রিজ 

  মোস্তাকিম আল রাব্বি সাকিব, মনিরামপুর (যশোর)

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩৭
মণিরামপুরবাসীর গলার কাঁটা নির্মানাধীন ব্রিজ 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহতম উপজেলা যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা। যশোর থেকে সাতক্ষীরা রোডে ১৭ কিলোমিটার দূরে মনিরামপুর উপজেলার প্রান কেন্দ্র মনিরামপুর শহরের রাজগঞ্জ মোড়।

এই মনিরামপুরে ১৭টি ইউনিয়ন ও আটটি পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র রাজগঞ্জ মোড়। এই শহরে ওঠার জন্য মনিরামপুর উপজেলার দুই-তৃত্যাংশ মানুষ ব্যবহার করে রাজগঞ্জ মোড়ের ব্রিটিশ আমলের নিরমানকৃত একটি মাত্র সেতু দিয়ে।

ব্রিটিশ সরকারের আমলের নির্মাণকৃত এই ব্রিজটি দীর্ঘ অনুমান ৫২ থেকে ৫৫ বছর টিকে ছিল।

এরপর ব্রিজে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিলে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এর আওতায় বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কাজ শুরু হলেও কাজের ধীর গতির কারণে সেটা বর্তমানে মনিরামপুর বাঁশির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিম পাশের খেদাপাড়া বাজার, রাজগঞ্জ বাজার, ঝাপা বাজার, কোমলপুর, নেংড়ো হাট, চাকলা বাজার, পারখাজুরা বাজারের এর মতো অসংখ্য বাজারের ব্যবসায়ী দৈনিক তাদের মোকামে (মনিরামপুর) আসে। পোশাক পরিচ্ছেদ কাঁচা বাজার দৈনন্দিন মুদি মালামাল জমি জমা রেজিস্ট্রি থানা ও বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই ব্রিজ দিয়েই সহজে চলাচল করতো প্রয়োজন মেটানোর মানুষগুলো। এখনো আসে তবে এই নির্মাণাধীন, মুখ থুবড়ে পড়া ব্রিজটির জন্য পড়তে হয় নানান ভোগান্তিতে। যদিও প্রথমেই দেখা গেছে এই বৃজিটি নির্মাণ কাজ চলাকালী কোনরকম পার্সো রাস্তা অনুমোদন নাই।

এ দিকে এই বৃজটিকে কেন্দ্র করে মনিরামপুর বাজার থেকে ব্রিজের পাশেই মনিরামপুর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড তাহেরপুরের ভেতর দিয়ে চলমান রাজগঞ্জ রোডে মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মধুমিতা সিনেমা হল, ভ্যান সাইকেল বিক্রয়ের হাট, গ্রামীণ ব্যাংক, আর আর এফ সমিতি, মিম টাওয়ার, চিড়ার মিলসহ অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর দিন চলছে খুবই দুর্বিষহ।ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলে ৩০০ থেকে ৩৫০টি মুদি মালামালসহ পুরাতন সাইকেলের দোকান ইলেকট্রনিক্স ও সেনেটারির সহ অনেক দোকানপাট আছে।

প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দাবি তারা দীর্ঘ দুটি বছর ধরে নির্মানাধীন ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়াতে তাদের বেচাকেনা চলা ফেরা খুবই নাজুক অবস্থায় চলছে। দোকানের খরচ শ্রমিকের বেতন নতুন পণ্য ক্রয় ও পরিবার এর খরচ চালাতে হিমশীম খাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তারা আরও জানান, যদি এমন অবস্থা ২-১ বছর চলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে হবে বা অন্যত্র প্রতিষ্ঠান নিয়ে চলে যেতে হবে। নির্মাণ চলাকালী এই বৃষ্টির কে কেন্দ্র করে আছে একটি টি গাড়ি স্ট্যান্ড মোটর সাইকেলের স্ট্যান্ড ভ্যান স্ট্যান্ড সিএনজি স্ট্যান্ড তাদের যেতে হচ্ছে ভিন্ন কৌশলে। শহীদ আকরাম হতে তাদের বেছে নিতে হচ্ছে বাইপাস সড়ক যেটা মোহনপুর হয়ে মনিরামপুর বাজারে উঠেছে সেক্ষেত্রে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া হতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

এ দিকে এই ব্রিজ দিয়ে পৌরসভার তাহেরপুর, বিজয়রামপুর, জুড়ানপুর এ তিনটি ওয়ার্ডের জনসাধারণ তাদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজগুলা মেটাতো।ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থী ও নির্বিঘ্নে যেতে পারত তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে এই ব্রিজের নির্মাণ কাজ ৬০% শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র মানুষ চলাচলের জন্য হরিহর নদীর নিছে একটি পায়ে হাঁটা পথ তৈরি আছে পারাপারের জন্য। শেখানেউ আরেক বিপত্তি, চলতি বৃষ্টির মৌসুম একটু বেশি পানি হলেই যে রাস্তা মিশে যায় পানির সাথে আবার অনেক মোটরসাইকেল চালক উঠতে গেলে স্লিপ করে নিচে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

অথচ এই বৃজিটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এর আগেও লেখালেখি হলেও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কর্তৃপক্ষের।বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারা যখন বেড়েই চলেছে এমন সময় এই ব্রিজের নির্মাণ কাজের কচ্ছপ গতিকে অপমানের চোখে দেখছে স্থানীয় জনগণ সহ বিভিন্ন মহলের লোকজন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থাৎ এই ব্রিজটির প্রাক্কলন মূল্য ৪, ৮৭, ৩৪, ২২৮ টাকার পর ৪, ৪৩, ৭৩, ৭৬৩ টাকা চুক্তি মূল্য নির্ধারিত হয়।

যার কাজ বুঝে নেন (আইসিআইএমএমটিজেভি) কনস্ট্রাকশন এর পরিচালক তপন বিশ্বাস।

৩৬ সে. মি. দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডারের এই ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে ও ব্রিজের নির্মাণ কাজের সমাপ্তির সময় শেষ হয়ে গেছে চলতি বছরের ৮ই আগস্ট।

ব্রিজের কাজে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বাড়াতে তিন থেকে চার মাস কাজ বন্ধ রাখছিলেন টেন্ডার প্রাপ্ত কনস্ট্রাকশনের মালিক তপন বিশ্বাস পরবর্তীকালে মীমাংসার খাতিরে আবারও কাজ শুরু করেছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

এ দিকে ব্যস্ততম এই নির্বাণাধীন ব্রিজের কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়াতে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন যানবাহনের শ্রমিকেরা।

ব্রিজের পাশেই মামা ভাগ্নে সাইকেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রনি বলেছেন, ব্রিজের জন্য আমাদের দৈনিক ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। ব্রিজ ভালো থাকা কালীন আমি দৈনিক তিন থেকে চারটি সাইকেল বিক্রি করতাম কিন্তু বর্তমানে দিনে একটি সাইকেল বিক্রি হয় না এই ব্রিজের কাজ শেষ না হলে আমাদের দিনের পর দিন ব্যবসার পরিমাণ কমে আসছে এমনও হতে পারে যদি দ্রুত সময়ে এই ব্রিজের কাজ শেষ না হয় তাহলে ব্যবসা অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে।

ব্রিজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন যানবাহনের স্টান্ডে গিয়ে জানা যায় একমাত্র সংযোগস্থল এই ব্রিজের কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়াতে যাত্রী দের সাথে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাড়ছে আরেক বিপত্তি। জুরানপুর গ্রামের ভ্যানচালক আলামিন হোসেন বলেন ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়াতে আমাদের দেড় কিলোমিটার ঘুরে মোহনপুর বটতলা দিয়ে মনিরামপুর বাজারে আসতে হয় সেখানে অতিরিক্ত ভ্যানের চার্জ নষ্ট হয় যাত্রীর কাছে এর জন্য অতিরিক্ত ভালো চাইলে তর্কাতর্কি হয় এই ব্রিজ দ্রুত নির্মাণ হোক এটাই আমরা চাচ্ছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জে ভি কনস্ট্রাকশন এর মালিক তপন বিশ্বাস জানান, চলতি বছরের নভেম্বর ডিসেম্বর নাগাদ কাজ সমাপ্ত হবে।তিনি আরো বলেন প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বাড়াতে কাজ বন্ধ ছিল স্থানীয় কোন এক জনপ্রতিনিধির মৌখিক ভাবে অর্থ বরাদ্ধের কথা থাকলেও সেটা অফিসিয়াল কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী অফিসার ও চলতি ব্রিজের নির্মাণ কাজের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার দাস গ্রামের কন্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন এভাবে কার চলছে ও যে পরিমাণ কাজ বাকি আছে আমরা আশা রাখি আগামী নভেম্বর ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ হবে ও জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে চলাচলের উপযোগী হবে।

দায়িত্বরত উপজেলা প্রকৌশলী অফিসার ও জে ভি কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারীর বক্তব্যে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে চলতি বছরের নভেম্বর ডিসেম্বরে হয়তো ব্রিজের বাকি কাজ শেষ হবে। তবে চলতি বছরে বর্ষার মৌসুম চলে এসেছে তাতে করে কাজে কতটুকু সফল হতে পারবেন কর্তৃপক্ষ এটাই ভাববার বিষয়। পাশাপাশি ব্রিজের কাজ দ্রুত শেষ না হওয়াতে এবং কত সময় বা কবে নাগাদ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষে যাতায়াতের উপযোগী হবে এটাই ভাবিয়ে তুলেছে পথচারী ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড