• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উপকূলবাসীর কষ্ট লাঘবে ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু নির্মাণ

  কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা)

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৫
উপকূলবাসীর কষ্ট লাঘবে ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু নির্মাণ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনা খালের উপরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের যুবদের উদ্যোগ ও বাস্তবায়নে তৈরি হয়েছে ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু। আর সেতু তৈরি মাধ্যমে তৈরি হয়েছে দুই গ্রামের মানুষের সেতু বন্ধন, কষ্ট লাঘব হয়েছে হাজার হাজার পথচারীর।

প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে চলাফেরা করে কমপক্ষে ৩/৪ হাজার পথচারী। বিদ্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন নির্বিঘ্নে যেতে পারছে বিদ্যালয়ে। সেতুটি তৈরির পূর্বে পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রবীণ-প্রতিবন্ধী এ পারের মানুষ ওপারে যেতে পারতো না। মসজিদ মন্দিরে যেতে না পারায় ব্যাহত হতো প্রার্থনা।

দু’পারের মানুষের মধ্যে সামাজিকতা কমে গিয়েছিল দেখা সাক্ষাৎ না থাকায়। অসুস্থ মানুষ হাসপাতাল মুখী নিয়ে যেতে ঘুরে আসতে হতো ৭/৮ কিলোমিটার রাস্তা। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যবৃন্দ। নিজেদের শ্রম বৃথা যেতে না দিয়ে দৃশ্যমান করে তুলেছে কাঠের সেতুটি ১৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৫ ফুট প্রস্থের সেতুটি দু’পাশে দেয়া হয়েছে রেলিং।

এর ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছে। এছাড়া এ সেতু পাল্টে দিয়েছে গ্রামীণ জনপদের চিত্র। বিশেষ করে কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি পণ্য এ সেতুটি পার হয়ে বাজারজাত করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন।

সেতুটি ঘিরে উৎসবের আনন্দ বইছে এলাকাবাসীর মধ্যে। প্রতিদিন বিকালে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে সেতুটি পরিদর্শনে আসছে শত শত মানুষ। সেতুটিতে উঠে ছবি তুলে পোস্ট দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকের কাছে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সেতুটি তৈরি হওয়ার মাধ্যমে।

সেতুটি সংলগ্নে অবস্থিত ১৮৮নং পানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলের অন্তত ৭০ ভাগ শিশু খালের ওপারের গ্রাম থেকে আসতো। ফলে স্কুলটিতে উপস্থিতির হার আশংকাজনক ভাবে কমে যায়। সেতুটি হওয়ার পরে ভোগান্তি কমেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, উপস্থিতির সংখ্যাও বেড়েছে।

এছাড়া স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি, মাছ বাজারে পরিবহন করতেও ভোগান্তিতে পড়ে। তবে এই সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ায় সেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, আগে দুটি বাশের উপর দিয়ে পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। এ সময় অনেক ঝুঁকি থাকায় স্কুলে যেতাম না। এমনকি আমাদের বই-খাতা খালের পানিতে ভিজে যেতো। এখন আমরা এই সেতুর উপর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্রতিবেদককে বলেন, এটি নির্মাণের ফলে সুবিধা হয়েছে শিক্ষার্থী, কৃষকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের। এখন উপজেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

১৮৮নং পানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বলেন, চুনা খাল পার হওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলে উপস্থিতির হার অর্ধেকেরও কম হয়েছিল। যা নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পরে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বলেন, চুনা খাল পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলে উপস্থিতির হার অর্ধেকেরও কম হয়েছিল। যা নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পরে। বর্তমানে সেতুটি নির্মাণ হওয়ার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়ে গেছে। বাচ্চারা আনন্দের সাথে বিদ্যালয়ে আসছে।

চুনা হেতালবুনিয়া বাইতুল নুর জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, সেতুটি হওয়ায় এলাকার দুপারের মানুষ সহজেই মসজিদে যাতায়াত করতে পারছে। আগে জুম্মার নামাজেও মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক কম, এখন বেড়েছে। এছাড়া এক পার থেকে অন্য পারে সাইকেল, ভ্যান মোটরসাইকেল পারাপার না করতে পারায় কোনো মানুষ অসুস্থ হলে সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে আসতে হতো এখন আর সেই সমস্যা নেই। তিনি বলেন, সেতুর কারণে মানুষের সময়, শ্রম কমেছে। আগে উপজেলা সদরে উঠতে যে সময় লাগতো এখন তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে মানুষ পৌঁছাতে পারছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা গাজী আল ইমরান বলেন, একটি ছোট্ট উদ্যোগ হাজারো মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারে যা এই সেতুটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। এলাকার বাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধনে সেতুটি তৈরি করেছি।

তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে মানুষ নির্বিঘ্নে খাল পারাপার হতে পারছে। আগে এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চুনাখাল পারাপারে ভোগান্তিতে পড়লেও তা এখন শান্তিতে পার হতে পারছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা সেতুটি বানাতে সক্ষম হয়েছি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড