• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞার মাঝে বিষ দিয়ে মাছ ধরে শ্রীঘরে কারবারি 

  সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

০৮ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৫০
সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞার মাঝে বিষ দিয়ে মাছ ধরে শ্রীঘরে কারবারি 

সুন্দরবনে মাছ ধরার বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার মধ্যেও গহীন বনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বিষ দিয়ে মাছ শিকার অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার ভোর রাতে উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে ওমর ফারুক (৩৭) নামে একজন মাছ ব্যবসায়ী (নিষিদ্ধ সময়) ৫০ কেজি বিষযুক্ত চিংড়িসহ আটক করেছে খুলনার কয়রা থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে কয়রা থানায় দুইজনকে আসামি আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা হয়েছে। গত রবিবারও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৩০ কেজি চিংড়ি মাছ আটক করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিষিদ্ধ সময় থাকার পরও কয়রা মৎস্য আড়তগুলোতে প্রতিদিন ১০০০-১৫০০ কেজি সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। আড়তের ৪/৫টি মৎস্য ব্যবসায়ী তারা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের প্রলোভন দেখিয়ে বেশি লাভের আশায় তাদের দাদন (অগ্রিম টাকা) দিয়ে সুন্দরবনে পাঠিয়ে বিষ দিয়ে ধরা মাছ তাদের আড়তে এনে বেশি দামে বিক্রয় করেন।

সচেতন মহল বন্ধের সময় সুন্দরবনের বিষ দিয়ে ধরা মাছ ধরায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উপজেলার আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ একাধিকবার বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা বাড়ায় সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও তা বন্ধ হয়নি।

একাধিক প্রকৃত জেলের অভিযোগ, অসাধু বন কর্মকর্তা দের টাকা ইনকামের বড় উৎস সুন্দরবন বন্ধের এই তিন মাস। তারা টাকার বিনিময়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন। যারা টাকা না দেয় লোক দেখানোর জন্য তাদেরকে ধরেন। বন বিভাগ সুযোগ না দিলে কোনোভাবে সুন্দরবনে ঠুকে মাছ ধরা সম্ভব নয় বলে জানান তারা।

কয়রা পরিবেশ বাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, একটি স্বার্থনেশী মহল ব্যক্তি স্বার্থে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসে মেতে উঠেছে। তারা এই বন্ধের সময় জেলের সুন্দরবনে পাঠিয়ে বিষ প্রয়োগ করে হাজার হাজার কেজি মাছ ধরছে। বন বিভাগ সতর্ক ও কঠোর হলে কখনওই এই দুষ্কৃতিকারীরা সুযোগ পায় না। এই দায় বন বিভাগের।

কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনসহ আশেপাশের বিভিন্ন নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ বন্ধ করতে পুলিশের কঠোর অভিযান চলছে। চিংড়িসহ আটক ও মামলা ও হয়েছে থানায়। বেশকিছু দিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী এবং খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

তিনি আরও বলেন, কয়রা বাজারের এক শ্রেণির অর্থলোভী মৎস্য ব্যবসায়ী ও কোম্পানি নামধারী মৎস্য ব্যবসায়ীরা দুর্বৃত্তদের ও অসাধু জেলেদের হাতে বিষ দিয়ে এসব খালে মাছ শিকারে পাঠাচ্ছে। বিষ দিয়ে মাছ ধরা ও সকল অপরাধ বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

বিষ দিয়ে মাছ শিকার রোধে বন বিভাগ কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন জানান, বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নানা অনিয়ম রোধে বনে স্মার্ট প্যাট্রলিং অব্যাহত আছে। গত ২ মাসে খুলনা রেঞ্জে অবৈধভাবে সুন্দরবনে ঠুকে মাছ শিকার করার অপরাধে ৬২টি মামলা, ৬৩টি নৌকা, মোটরসাইকেল চারটি, ইঞ্জিন চালিত ভ্যান একটি, ২৩ জনকে আটক, ৬৩৯ কেজি চিংড়ি জব্দ, ১৬ কেজি হরিণের মাংস, শুঁটকি চিংড়ি ৩৫ কেজি, কাঁকড়া ১৯০ কেজি (অবমুক্ত), হরিণ মারার ফাঁদ ৬০০টিসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়।

তিনি বলেছেন, কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরায় ক্ষতি হচ্ছে অনেক বেশি। কারণ কীটনাশকে সব প্রজাতির রেণু পোনা মরে সুন্দরবনের খাল-বিল মাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধে সুন্দরবনকে আধুনিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড