• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সরকারি চাল বস্তা পাল্টিয়ে হচ্ছে গুটি স্বর্না, জড়িত আ. লীগ নেতা!

  সুমন খান,  লালমনিরহাট

০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০
সরকারি চাল

সরকারি চাল বস্তা পরিবর্তন করে গুটি স্বর্ণা নামে বাজারে বিক্রি করছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার অসাধু কিছু ব্যবসায়ী। আর এসব সরকারি চাল বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, সরকার প্রতিবছর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে থাকে। সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত ওজনের বস্তায় এসব চাল ক্রয় করে থাকে। ক্রয় করা এসব চাল নির্ধারিত সুফল ভোগীর মাঝে বিতরণ ও বিক্রি করে আসছে। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুফলভোগীদের মাঝে ১৫টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি করে নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে। একইভাবে ভিজিডি কার্ডধারী সুফলভোগীদের মাঝেও কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। তাই ওজন ঠিক রাখতে এবং এসব সুফল ভোগীদের মাঝে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাল বিতরণ ও বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কেজি ওজনের চাল ক্রয় করেন। একইভাবে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য তা সরবরাহ করে থাকে। এর বাহিরে আর কোন বস্তা ৩০ কেজি ওজনের কেনা হয় না। আর এসব চালের বস্তায় খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহর দেওয়া থাকে। যাতে খুব সহজে তা সরকারি সম্পদ বলে চিহ্ণিত করা যায়। এসব চাল সুফল ভোগীদের কাছে বিক্রি না করে কৌশলে কালো বাজারে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে তারা খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহর যুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে অন্য চাল আড়তের সীলমোহরের বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে সরবরাহ করছে।

বেসরকারি চাল আড়তগুলোর বাজারে সরবরাহ করা চাল প্রতি ছোট বস্তায় ২৫ কেজি ও বড় বস্তা ৫০ কেজি ওজনের। ৩০ কেজি ওজন শুধুমাত্র সরকারি চাল। এ কারণে চক্রটি সরকারি চালের ৩০ কেজির বস্তা পাল্টিয়ে ২৫ কেজি ওজনের নতুন বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে বিক্রি করছে।

একদিকে যেমন সরকারি সম্পদ কালোবাজারে বিক্রি করছে। একইভাবে নিম্নমানের চালকে গুটি স্বর্ণাসহ বিভিন্ন নামে ভুয়া সীলমোহর দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করছে অসাধু ব্যবসায়ীর এ চক্রটি।

সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম চৌধুরী মোড় এলাকার মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের গুদামে গিয়ে দেখা যায় শত শত সরকারি চালের বস্তা। তা পরিবর্তন করে ২৫ কেজি ওজনের দিনাজপুরের চিতা বাঘ মার্কা গুটি স্বর্ণা নামে প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেট শেষ হলে দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে জেলার সকল বাজারে। খুবই নিরাপত্তার সাথে অনেকটা গোপনীয়ভাবেই করা হচ্ছে বস্তা পরিবর্তন ও সরবরাহের কাজ। গোপন ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারন করা হলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি মিল মালিক অলিয়ার রহমান । সাংবাদিকরা চলে যাওয়া মাত্রই কৌশলে সড়ানো হয় সবকিছুই।

স্থানীয় একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডির এসব চাল কম দামে ক্রয় করে বস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে অধিক মূল্যে বিক্রি করছে এ চক্রটি। এভাবে তারা দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি সম্পদ তছরুপ করে জনগনের সাথে প্রতারণা করছে। উচ্চতর তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের মালিক অলিয়ার রহমান প্রথম দিকে ক্রেতার পরিচয়ে মুখ খুললেও পরে সাংবাদিক পরিচয়ে পুরো বিষয় গোপন করেন। প্রথম দিকে অলিয়ার রহমান বলেন, সরকারি এসব চাল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন ভাইয়ের। আমি শুধু নই, বেশ কিছু গুদামে দেয়া আছে এসব চাল। প্রায় দুইশত মেঃ টন চাল দিয়েছিল। আমরা শুধু বস্তা পরিবর্তন করে ৩০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি করে পাঠিয়ে দেই। তিনি কোথায় কিভাবে বিক্রি করেন আমি জানি না।

তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন বলেন, এসব চাল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গুদাম মালিককে আমি কোনোভাবেই চিনি না। আমার নাম বললে হবে? আমার চাল হিসেবে তার কাছে কি ডকুমেন্ট আছে দেখেন। কোন অডিও বা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে কি না। অলিয়ার কেন আমার নাম বলেছে তা আমি জানি না। এর সাথে তিনি জড়িত নন বলে জোর দাবি করেন তিনি।

এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা উপ-খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ওসি এলএসডি) ফেরদৌস আলমের সাথে কথা হলে এটি আপনার খাদ্য গুদাম থেকে নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছবি আছে ? পরে বস্তার ছবি তাকে পাঠিয়ে দিলে তখন আর তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি হননি , পরে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, আমরা এসব বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অনেকেই গোডাউনে গোপনভাবে এই প্যাকেটগুলো করছে। বিষয়টি আমি অবগত হলাম অবশ্যই পদক্ষেপ নিচ্ছি।

এসব বিষয় জানতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সরকারি চাল কোনোভাবেই কোনো গোডাউনে থাকার কথা নয়। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি সরকারি চাল স্বর্ণা প্যাকেটজাত করে তাহলে অবশ্যই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড