• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাত নামলেই লোডশেডিং কবলিত অন্ধকার শহরে বাড়ে চুরি-ডাকাতি

ভেঙে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

  মোস্তাকিম আল রাব্বি সাকিব, মনিরামপুর (যশোর)

২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯
রাত নামলেই লোডশেডিং কবলিত অন্ধকার শহরে বাড়ে চুরি-ডাকাতি
লোডশেডিং কবলিত অন্ধকার শহর (ছবি : অধিকার)

মাঝ রাত মানেই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্ধকারের এক শহর। বাড়ছে চুরি ডাকাতি ব্যাহত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। গত কিছুদিন যাবত যশোরের মনিরামপুর পৌর শহরে রাত ১২টা থেকে দুইটার মধ্যে এক থেকে দুই ঘণ্টা দৈনন্দিন লোডশেডিং দিচ্ছে যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২।

সারাদিনের মধ্যে একবার ও লোডশেডিং না হওয়ায় যেমন খুশি গ্রাহকরা ঠিক রাত হলে পৌরবাসী পার করছেন নির্ঘুম রাত। মধ্য রাতে দীর্ঘক্ষণ সময় লোডশেডিং হওয়াতে বাড়ছে পৌর শহরে এবং বাসা বাড়িতে চুরি ডাকাতির ঘটনা।

মাঝ রাতের এই লোডশেডিংয়ের কারণে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মনিরামপুর হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীরা। মাঝ রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে তারা পার করছেন নির্ঘুম। এতে করে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন রোগীর স্বজনেরা।

টারবাইন (বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করার যন্ত্র/ঘূর্ণায়মান যান্ত্রিক ডিভাইস) ত্রুটির কারণে ফের বন্ধ হয়ে গেছে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। গত চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ।

বর্তমানে কেন্দ্রটিতে জোরেশোরে চলছে টারবাইন মেরামতের কাজ। টারবাইন মেরামত শেষে দুই-একদিনের মধ্যেই ফের কেন্দ্রটির উৎপাদন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ মহা-ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ারুল আজিম জানান, টারবাইন ত্রুটির কারণে গত রবিবার (১৬ জুন) থেকে ফের কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেডের প্রকৌশলীরা টারবাইন ক্রুটির মেরামতের কাজ করছেন। মেরামত শেষে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটিতে বর্তমানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। শিগগিরই রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আরও এক লাখ মেট্রিক টন কয়লা আসছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে একটি বিদেশি জাহাজ মোংলা বন্দরে ভিড়বে। এর আগে কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য গত ৩০ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ থাকে।

তার দাবি, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষে গত ১০ জুলাই চালু হয়েছিল কেন্দ্রটি। কিন্তু চালু হওয়ার ৬ দিনের মাথায় কেন্দ্রটির টারবাইন ত্রুটির কারণে ১৬ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ।

তার আগেও যান্ত্রিক ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা সমস্যায় কয়েক দফা বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ১৩২০ মেগাওয়াটের সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি সমৃদ্ধ রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বরে।

দ্বিতীয় ইউনিট চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন যাবে বলে জানিয়েছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে এই লোডশেডিংকে পুঁজি করে মাত্র ৭ মিনিটে মনিরামপুর বাজারে উপা মার্কেটের একটি মোবাইলের দোকানে ২০ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। গত সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে।

একই দিন ও পাশাপাশি সময়ে কুলটিয়া রোডের গাজী মার্কেটের ওপর একটি জুয়েলারি দোকানে সোনার অলংকার চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে এক ধরণের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা যায়, মনিরামপুর বাজারস্থ রাজগঞ্জ মোড় নামক স্থানের উপা মার্কেটের পূর্ণিমা ইলেকট্রনিক্স দোকানে সোমবার সকালে চুরি সংগঠিত হয়।

এই দোকানের মালিক শেখর বিশ্বাসের পুত্র জানান, অজ্ঞাত মুখবাঁধা চোরেরা তার দোকানের সবকয়টি তালা কেটে দোকানে ঢুকে মাত্র সাত মিনিটের ব্যবধানে এক লক্ষ ৫৩ হাজার টাকাসহ মূল্যবান মোবাইল চুরি করে নিয়ে চলে যায়। চোরাই মালের মূল্য অনুমান ২০ লক্ষ টাকা বলে দাবি করেন।

এ দিকে একই দিন সকালে কুলটিয়া রোডের গাজী মার্কেটের শ্যামলী জুয়েলার্স দোকানের সবকয়টি তালা কেটে চোরেরা অনুমান ৩-৪ ভরি ওজনের তৈরি সোনার অলংকার চুরি করে নিয়ে যায়। দোকানের মালিক মধু দে এই দাবি করেন। এই দুটি চুরির ঘটনাস্থল থানা পুলিশ পরিদর্শন করেছে এবং ভিডিয়ো ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

এ দিকে ইতোপূর্বের চুরির ঘটনাসহ সোমবারের এই চুরি ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে এক ধরণের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারের চুরির ঘটনাগুলির ভিডিয়ো ফুটেজ আছে। এগুলো সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে চোর শনাক্ত করতে পুলিশ যদি ব্যর্থ হয় তবে বাজারে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাবে।

অপর দিকে দিনে এবং রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য, মনিরামপুর মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ এবং তারা মাছ সঠিকভাবে ফ্রিজিং করছে করতে পারছেন না। এতে করে তাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

এ দিকে ১৯ জুলাই রাতে মনিরামপুর হাসপাতালে লোডশেডিং চলাকালীন রাত আনুমানিক ১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জরুরি অপারেশন সরঞ্জাম, ডাক্তারি সরঞ্জাম, জরুরি বিভাগের টিকের খুচরা কিছু পরিমাণ টাকা, ঔষধসহ অনেক কিছু চুরি গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ্বাস বলেন, গতকাল রাতে আমার হাসপাতালে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এটা সত্য আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে মনিরামপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের হাসপাতালে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নাই কাজেই, যখন লোডশেডিং চলছে তখন ওয়ার্ড ও কেবিনগুলোতে সোলার লাইট দেওয়া আছে সোলার লাইট দিয়ে কোন রকমে অন্ধকারকে দূর করা হচ্ছে। এছাড়া শুধুমাত্র ওটির জন্য একটি পুরাতন লক্কড় ঝক্কর জেনারেটর আছে যদি ওটি চলাকালে বিদ্যুৎ চলে যায় সে ক্ষেত্রে ওই জেনারেটর দিয়ে ৩০/৩৫ মিটির ব্যাকআপ করতে পারি। আমার চাই বিদ্যুতের এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জনতে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল লতিফ বলেন, যখন আমরা বিদ্যুতের লোড কম পাই তখন পার্শিয়াল করে করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকি একটি ফিডার অফ করে অন্য একটি ফিডারে বিদ্যুৎ দিয়ে থাকি এভাবে লোডশেডিং এর সময় আমার বিদ্যুৎ সরবরাহ করি।

তিনি আরও বলেন, এখন অনেক সময় মাঝ রাতেও লোডশেডিং হতে পারে দিনের বেলায় ও লোডশেডিং হতে পারে এর নির্দিষ্ট কোনো সময় নাই যেহেতু যে পরিমাণ প্রয়োজন হয় সে পরিমাণ জাতীয় গ্রিড থেকে আমাদেরকে সরবরাহ করে থাকে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কম থাকে তখন তখন আমাদের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়।

চুরির বিষয় জনাতে চাইলে তিনি বলেন, এখন চোরেরা যদি লোডশেডিংকে পুঁজি করে সেখানে তো আমাদের কিছু করার নাই, এটা প্রশাসনের বিষয় তারা দেখবে।

মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মনিরুজ্জমান বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার ও সহকারী থাকার কথা সেখানে চুরি হয় কিভাবে আমার বোধগম্য নয়, যেহেতু চুরির ঘটনা ঘটেছে আমরা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যেহেতু চিহ্নিত চোর সেহেতু দ্রুতই তাকে আটক করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড