• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জনসম্পৃক্ততা রাখতে চা বিক্রি করছেন নারী ইউপি সদস্য

  রিয়াজুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

১৮ জুন ২০২৩, ১৫:৩০
জনসম্পৃক্ততা রাখতে চা বিক্রি করছেন নারী ইউপি সদস্য

জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের একটি বিজ্ঞাপন চিত্র টিভি চ্যানেলে আমরা প্রায়ই দেখি। ঐ বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনেতা মোশারফ করিমকে বলতে শোনা যায়, ‘জনপ্রতিনিধি হয়ে যদি এক কাপ চা বানিয়েই না খাওয়াতে পারি, তবে জনপ্রতিনিধি হয়ে লাভ কি’।

এবার আর বিজ্ঞাপন নয়, বাস্তবেই এমন একজন জনপ্রতিনিধির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা আসনের ইউপি সদস্য মোছা. ফরিদা খাতুন স্বামী সন্তান নিয়ে টানাপোড়নের মধ্য দিয়েই চলে তিন সদস্যের ছোট সংসার। একজন ইউপি সদস্য হয়েও চা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। জনপ্রতিনিধি হিসাবে ভালো কাজের অবদান রাখায় দুবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন ফরিদা। ব্যস্ততার মাঝের সামলাতে হয় নিজ কর্মসংস্থান ও চায়ের দোকান। একজন ইউপি সদস্য হয়ে সাদামাটাভাবে জীবন-যাপন করছেন তিনি।

উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বশোয়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা. ফরিদা খাতুন জীবন জীবিকার তাগিদে স্থানীয় বশোয়া বাজারে চায়ের দোকান চালান। গ্রামের মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসায় ২০১৭ সালে প্রথমবার এবং ২০২২ সালে দ্বিতীয়বার ইউপি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি।

মোছা. ফরিদা খাতুন বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এলাকার লোকজনের সম্মতিতে আমি ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করি। নির্বাচনে এলাকার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচার প্রচারণা চালান এবং খরচ বহন করে।

এই নারী ইউপি সদস্যে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একটি দো-চালা ছোট টিনের ঘরে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দোচালা টিনের ঘড় ছাড়া তার আর কোনো জাইগা জমি ও নাই।

অর্থ বিত্তহীন এই সংগ্রামী নারী একজন চা বিক্রেতা হয়েও কেন এত জনপ্রিয় এমন প্রশ্নের জবাবে, স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ফরিদা খাতুন একজন সৎ মানুষ, মানুষের বিপদে আপদের কথা শুনলে রাত-বিড়াতে তিনি ছুটে যান, নিজের বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে গ্রামের মানুষের জন্য রাস্তায় মাটি ফেলে রাস্তা মেরামত করেছেন। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করেন তিনি।

গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সের আলতাফ মোল্লা বলেন, সে দু’বার মেম্বার হয়েছেন।কিন্তু চা বিক্রি করেই সংসার চালান। তার নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তবে দেখি তার প্রচেষ্টা সবসময় মানুষের জন্য কাজ করার।

স্থানীয় আর এক বাসিন্দা, জাকের মোল্লা বলেন, কেউ বিপদে পড়লে রাতের আঁধারে ডাকলেও তাকে পাওয়া যায়। নিজের টাকা খরচ করে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফরিদা খাতুন বলেন, আমার জমি জায়গা নাই, চা বিক্রি করে সংসার চালায়। খুব কাছ থেকে মানুষের সুখ দুঃখের কথা শুনেছি, কখনো কখনো মনে হতো যদি সুযোগ থাকতো গ্রামের মানুষের সেবা করতাম। কিন্তু আমার সাধ আছে সাধ্য নাই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্মানীয় ভাতা পায় তাও চেষ্টা করি মানুষ জন্য কিছু করে দিতে। গ্রামের মানুষই আমাকে মেম্বার বানিয়েছে। আমি নির্বাচিত হবার আগে থেকেই চায়ের দোকান চালায়।

এই দোকানে সব মানুষ তাদের সুবিধা অসুবিধা কথা বলে। আমি সাধ্যর মধ্যে চেষ্টা করি পাশে দাড়াতে। তিনি আরও বলেন, আমি ২০০২ সালে এসএসসি পাশ করি। অর্থের অভাবে আর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। তবে আমার নির্বাচিত এলাকায় শিশুদের শিক্ষার প্রতি সবসময় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শপথ গ্রহণের পর থেকেই প্রায় দিনই ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় মিটিং থাকে। সেগুলোতে অংশ নিতে হয়। যেদিন বাইরে মিটিং থাকে সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দোকান খুলে ঘণ্টা খানেক ব্যবসা করে চলে যাই। বাইরে কাজ শেষে আবার বিকালে দোকান খুলতে হয়। কারণ চায়ের দোকান ছোট একটি অফিসের মতো। লোকজন আসে তাদের নানান সমস্যা নিয়ে। চা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরও সমস্যার সমাধান করতে হয়।

এক বেলা দোকান না খুললে ঘুরে যেতে হয় মানুষকে। এতে মানুষ কষ্ট পায়। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চাই।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস বলেন, মোছা. ফরিদা খাতুন একজন দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি। তিনি তার সব দায়িত্বই ঠিকঠাকভাবে পালন করেন। সে জন্য তিনি অন্য সহকর্মীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। তিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষরে সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন। তাকে নিয়ে পুরো পরিষদ গর্বিত। সে খুবই গরীব মানুষ, মানুষ হিসেবে ভাল। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার চেষ্টা করি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড