• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন ঔষধ কোম্পানির কর্মীদের দখলে

ভোগান্তিতে রোগীরা

  মো. মাহবুবুর রহমান রানা, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

১২ জুন ২০২৩, ১৫:১৫
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন ঔষধ কোম্পানির কর্মীদের দখলে

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের চেম্বারে ঢুকতে দেখা মাত্রই দৌড়ে চলে আসেন বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির কর্মীরা। কার আগে কে উপঢৌকন ও স্যাম্পল দিবে এ নিয়ে শুরু হয় এক প্রতিযোগিতা।

চিকিৎসকের কক্ষে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও মানছেন না কেউ। রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ জন যুবক সাড়িবদ্বভাবে দাড়িয়ে আছেন সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেটের ভেতর। প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন।ডাক্তার আসার সাথে সাথেই ঢুকে পড়েন ডাক্তার চেম্বারে।শুরু হয়ে যায় স্যাম্পল দেওয়ার হিড়িক।

সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বহিঃ বিভাগে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ডাক্তাররা রোগী দেখেন। মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাতেমা আক্তার, ডা. জান্নাতুল ফাতেমা, ডা. এনামুল হোসেন ও ডা. মমতাজ আক্তার। এসব ডাক্তাররা চেম্বারের প্রবেশের সাথে সাথেই ঔষধ কোম্পানির কর্মীদের দখলে চলে যায় হাসপাতালে।

প্রতিদিন ভোর থেকেই শতশত রোগী ৫ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে গাইনি, শিশু বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন, চক্ষু সার্জন ও ডেন্টাল সার্জন এবং ডাইবেটিকসসহ বিভিন্ন রোগের ডাক্তার দেখান তারা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে এসব ডাক্তাররা শুরুতেই রোগী না দেখে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনট্রিভদের ঔষধের স্যাম্পল ও উপঢৌকন নিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

এছাড়াও রোগীরা ডাক্তার দেখানো শেষ করে বের হওয়ার সাথে সাথেই, রোগীদের হাত থেকে ব্যবস্থাপত্রটি জোড় করে নিয়ে মোবাইলে ছবি তোলে ঔষধ কোম্পানির কর্মীরা। এসব ব্যবস্থাপত্রের ছবি ঔষধ কোম্পানির ই-মেইল বা ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেন তারা। দেখেন তাদের কোম্পানির ঔষধ ডাক্তার লিখছেন কি-না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঔষধ কোম্পানির কর্মীরা হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করে ডাক্তারদের দিয়ে তাদের কোম্পানির ঔষধ লিখিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি করছে।তারা রোগীদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক ব্যবস্থাপত্রটি নিয়ে মোবাইলে ধারণ করে কোম্পানিতে পাঠিয়ে দেন।সুবিধা নিয়ে ডাক্তাররা তাদের ঔষধ লিখছেন বলে জানায় তারা।

সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী তাসবিয়া বেগম, আ. হালিম মিয়া, জমিরন বেগম ও আমেনা বেগমের সাথে। তারা বলেন- হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারি ঔষধ না লিখে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ঔষধ লিখে দিচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ বলেইতো সরকারি ডাক্তার ও সরকারি ঔষধ নিতে হাসপাতালে আসি। কিন্তু ফার্মেসী কাউন্টারে ব্যবস্থাপত্রটি দেওয়ার পর বলে বাহির থেকে এ ঔষধ কিনে নিতে হবে।

এর কারণ জানতে চাইলে রোগীরা বলেন, ঔষধ কোম্পানির লোকজন ডাক্তারদের টাকা পয়সা ও ঔষধের স্যাম্পল দেয় তাই ডাক্তাররা তাদের কথাই শুনে। ডাক্তারের কক্ষে ঢুকেই দেখি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কক্ষে ঢুকে ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি।

তাদের অভিযোগ, ওইসব ঔষধ কোম্পানির কর্মীদের কিছু বললে তারা বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মামুন উর রশিদ নাকি ঔষধ কোম্পানির কর্মীদের ভেতরে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।

ঔষধ কোম্পানির কর্মীরা বলেন, কেউ মাসোয়ারা আবার কেউ বছর ভিত্ততে চুক্তি হয় ডাক্তারদের সাথে। তাদের ঔষধের স্যাম্পল ও উপঢৌকন দিয়েই প্রেস্কিপশন করাতে হয়। এসব উপঢৌকন ও স্যাম্পল না দিলে ডাক্তাররা ঔষধ লিখে না। আবার অনেক ছোট কোম্পানির কর্মীরা তাদের মাসের বেতনের টাকা দিয়ে ডাক্তারদের প্রেস্কিপশন করিয়ে থাকে।

তারা জানান, প্রতি মাসের টার্গেট পূরণ করতে না পারলে চাকুরি থাকবে না। এ জন্য সপ্তাহে দুদিন ভিজিট করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মানুন উর রশিদ ঔষধ কোম্পানির কর্মীদেরকে ডাক্তারদের সাথে সপ্তাহে দুদিন ভিজিট করার অনুমতির কথা স্বীকার করে বলেন, তাদের একটি নিদিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে তারা ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করতে পারবেন। কিন্তু রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি এটা খুবই দুঃখজনক।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড