প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ইফতার মাহফিল না করে সেই টাকা দিয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার ও ইদসামগ্রী বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশ অমান্য করে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে 'সদস্য সংগ্রহ ও আলোচনা সভার' ব্যানারে নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।

আজ রবিবার (১৬ এপ্রিল) উপজেলা পরিষদ হলরুমে এবং উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে (সড়কে) এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীর জন্য ইফতারের (বিরিয়ানি, শরবত, ফলসহ) আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।

'সদস্য সংগ্রহ ও আলোচনা সভার' ব্যানারে আয়োজিত ইফতার মাহফিল উদ্বোধন করেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম সোহাগ।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন।

আয়োজনটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন- মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র রমজান আলী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক খান, বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার।

অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আব্দুর রব।

এছাড়াও উপজেলা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ইফতার মাহফিলের দোয়া পরিচালনা করেন উপজেলা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মো. কাউসার মোল্লা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ইফতার মাহফিল করা যাবে না। তাই, সদস্য সংগ্রহ ও আলোচনা সভার ব্যানারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।" তবে, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ থাকার পরেও এমন আয়োজন দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ইফতারের বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে নেতাকর্মীদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

ইফতারের বিষয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমাদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মেয়াদ খুবই স্বল্প। এর মধ্যে আমাদের ওপর দলের দেওয়া দায়িত্ব শেষ করতে হবে। তাই রোজার মধ্যেই সদস্য সংগ্রহ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রোজার মধ্যে প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে বিধায় নেতাকর্মীদের ইফতার করানো হয়েছে।

ইফতারে অংশ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন বাচ্চু বলেন, আজ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সংগ্রহ ও আলোচনা সভা ছিল। ইফতারের সময় হওয়ায় নেতাকর্মীদের ইফতারের জন্য পানি ও ফল দেওয়া হয়েছে। এটা দেওয়া যেতেই পারে।

তবে সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের জন্য মুরগির মাংসের বিরিয়ানি রান্না করা এবং তা ইফতারে বিতরণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম

মহীউদ্দীন বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সংগ্রহ ও আলোচনা সভা ছিল। যেহেতু ইফতারের সময় হয়েছে, তাই নেতাকর্মীদের শরবত খাওয়ানো হয়েছে।

যদিও এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।