মো. রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে দুর্বল নারীদের সুবিধার (ভিডব্লিউবি) কার্ডে চাল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের বউ বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকারি নিয়ম অমান্য করে নিজের স্ত্রী মনিফা বেগম ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আকতারা বেগমের নামে দুর্বল নারীদের সুবিধা (ভিডব্লিউবি) কার্ড করে দেন। সেই কার্ডে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল তুলেন তারা। জনপ্রতিনিধির স্ত্রী ও তার ছোট স্ত্রীর দুর্বল নারীদের সুবিধার চাল তোলার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির উপকারভোগী বাছাই করা হয়। তাদেরকে কার্ড ও তিন মাসের চালও দেওয়া হয়। চাঁদখানা ইউনিয়নে কর্মসূচিটিতে উপকারভোগী রয়েছে ৩৫৫ জন।
উপকারভোগীর তালিকার ২৬নং ক্রমিকে নাম রয়েছে মোছা. মনিফা বেগম, স্বামীর নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্য দিকে একই তালিকার ২৮ নং ক্রমিকে নাম রয়েছে মোছা. আকতারা বেগম, স্বামীর নাম মো. আলমগীর আলী।
সরেজমিনে জানা যায়, মনিফা বেগম ওই ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। আর আকতারা বেগম ওই জনপ্রতিনিধির ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। এ দিকে প্যানেল চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আলমগীর আলী তিনতলা বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। যা ইতোমধ্যে একতলার কাজ শেষের দিকে। জমি-জমাও রয়েছে বেশ।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক অধিকারকে বলেন, কার্ত্তিক মাসে এ তালিকা করা হয়েছে, আর আমিতো কয়দিন হলো দায়িত্ব নিলাম। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই তালিকা হয়েছে। কিভাবে তাদের নাম তালিকায় আছে জানি না। আমি কি চেয়ারম্যান-মেম্বার হয়ে ভুল করলাম নাকি? আমি ইউএনও স্যারের (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) কাছে আমার স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের বউয়ের নাম থাকার কথা স্বীকার করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য দৈনিক অধিকারকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি মারা যাওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেন। প্যানেল চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতা পেয়েছেন, তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের বউয়ের নাম দিয়েছে তালিকায়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোসাম্মৎ সাবিকুন্নাহার দৈনিক অধিকারকে বলেন, উপজেলায় তিন হাজার ৪৪৭ জন এ সুবিধা ভোগ করছে। ইউনিয়ন কমিটি থেকে তালিকা আসার পর উপজেলা কমিটি সেটি দেখে অনুমোদন দেয়। প্যানেল চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও তার ভাইয়ের স্ত্রী উপকারভোগী হলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী দৈনিক অধিকারকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। দ্রুত ওই নাম দুটি তালিকা থেকে বাতিল করে ওই প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এ কর্মসূচিটি পূর্বে দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) নামে পরিচিতি ছিল। কিন্তু বর্তমান এ কর্মসূচির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)। অর্থাৎ দুর্বল নারীদের সুবিধা (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচি। এতে অস্বচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, নিম্নআয় করা ব্যক্তিসহ দুস্থ্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পায়।
এর ফলে দেশের গ্রামীণ দুঃস্থ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বৃহত্তর সামাজিক নিরাপত্তামূলক জোরদার হবে। যা নারীদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পুষ্টিহীনতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করে আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই কর্মসূচিতে ওই ইউপি চেয়ারম্যান স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর নাম দিয়ে চাল উত্তোলন করে খাচ্ছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড