• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুকে খুনের মামলায় মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৩

  মো. শাকিল শেখ, আশুলিয়া (ঢাকা)

১০ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৪
মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুকে খুনের মামলায় মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৩
গ্রেফতারকৃত আসামিরা (ছবি : অধিকার)

ঢাকার আশুলিয়ায় অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে তানভীর (৮) নামে এক শিশুকে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতাসহ তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‍্যাব-৪, সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান। এর আগে গেল বুধবার (৮ মার্চ) আশুলিয়ার বটতলা আমান স্পিনিং মিলের পাশের নর্দমা থেকে শিশু তানভীরের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার ও টংগাবাড়ী এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- ঢাকা জেলার মো. আনোয়ার হোসেন (২০), মো. সাকিব হোসেন (২৬) ও মো. তামজিদ আহমেদ ওরফে রাফি (১৪)। ভুক্তভোগী শিশু তানভীর আহম্মেদ টংগাবাড়ী এলাকার মসজিদের ইমাম মো. সোলায়মানের ছেলে। সোলায়মান কুমিল্লার বাসিন্দা। তানভীর টংগাবাড়ী এলাকার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করত।

শিশু তানভীরের পিতা মো. সোলায়মান জানান, শবে বরাতের নামাজ পড়ে মোনাজাত করার সময় তানভীরকে মসজিদ থেকে অপহরণ করেন মুদি দোকানদার আনোয়ার হোসেন। তার মোবাইল ফোনে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তিনি। রাতে টাকা দিতে না পারায় তানভীরকে হত্যা করেন আনোয়ার ও তার সহযোগীরা।

র‍্যাব জানায়, গত ৭ মার্চ আশুলিয়ার টংগাবাড়ী এলাকায় ৮ বছরের মাদরাসা পড়ুয়া শিশু তানভীর নিখোঁজ হলে পরদিন ভুক্তভোগীর পিতার কাছে ফোনের মাধ্যমে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি ভুক্তভোগীকে অপহরণ পরবর্তী মুক্তিপণ দাবিসহ হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীর বাবা নিরুপায় হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিসহ র‍্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত ঘটনাটি সকল প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে র‍্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল ঘটনাটি ছায়া তদন্তের পাশাপাশি ও জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে। এরই মধ্যে আশুলিয়া থানাধীন টংগীবাড়ী এলাকায় জনসাধারণ একটি বস্তাবন্দি শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অবহিত করে এবং র‍্যাব-৪ এর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম শিশু তানভীর আহম্মেদের লাশ সনাক্তকরণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের সম্পর্কে সুনিশ্চিত হবার পর মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা তাদের কৃত অপরাধের কথা স্বীকার করে। ভুক্তভোগীর পরিবার ও ধৃত আসামিরা একই এলাকায় বসবাস করার সুবাদে তারা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আনোয়ার হোসেনের সাথে ভুক্তভোগীর পিতা মো. সোলায়মানের দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।

ভুক্তভোগীর বাবা সোলায়মান আসামি আনোয়ার হোসেনের কাছে পাওনা টাকা চাইলে আসামি আনোয়ার পাওনা টাকা দিবে বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা সোলায়মান ধৃত আসামি আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে টাকা চাওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং ভুক্তভোগীর পিতা সোলায়মান দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আনোয়ারকে বকাবকি করে এতে আনোয়ার অপমান বোধ করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আনোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে সোলায়মানের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সোলায়মানের শিশু পুত্র তানভীরকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে।

গত ৭ মার্চ শবে বরাতের রাতে পূর্ব পরিকল্পনা মতে আসামি আনোয়ার ভুক্তভোগী তানভীরকে সুকৌশলে ভিকটিমের পিতার সদ্য কেনা জমি দেখার কথা বলে আশুলিয়া থানাধীন শ্রীখন্ডিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে জঙ্গলে নিয়ে ভিকটিম তানভীরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় চেপে ধরে ও মাটিতে আছার দেয়। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশটি সেখানে ফেলে হত্যাকারীরা নিজ নিজ বাসায় ফিরে আসে।

পরদিন ৮ মার্চ ভোর বেলা আসামিরা ভিকটিমের লাশটি গুম ও হত্যার প্রমাণ লুকানোর জন্য একটি বস্তায় লাশটি বস্তাবন্দি করে সবজির গাড়ীতে করে আশুলিয়া থানাধীন টংগাবাড়ী এলাকায় রাস্তার পাশে ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়।

এ বিষয়ে র‍্যাব-৪, সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান বলেন, উক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতেও এরূপ শিশু অপহরণকারী চক্র এবং এরূপ অপরাধের বিরুদ্ধে র‍্যাব-৪ এর জোড়াল অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড