• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফসল নয়, মাটি বিক্রি করে চলে সংসার

  কাজী শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী, বরগুনা

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:৪০
মাটি খনন
ভেকু মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি খনন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বরগুনার আমতলী উপজেলায় কৃষি পরিবারগুলো এখন অনেকটাই অসহায়। উৎপাদিত ফসলের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। তাই ফসল উৎপাদনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এ দিকে, সংসার চালাতে ইতোমধ্যে তারা ভিন্ন উপায় খুঁজে পেয়েছেন। তারা এখন জমিতে ফসল ফলানোর পরিবর্তে বিভিন্ন ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রেও প্রায়ই তাদের প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে।

উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি পাঁচ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হচ্ছে। এতে ওইসব এলাকার ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে। যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষকদের লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়া ও নগদ টাকার লালসা দেখিয়ে খুব সহজেই কৃষকদের রাজি করিয়ে মাটি বিক্রি করতে সাহায্য করছেন। আর কালো টাকায় পকেট ভর্তি করছেন দালালচক্র। কিন্তু এভাবে মাটি বিক্রির ফলে উর্বরতা হারিয়ে কৃষি জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে যাবে। তাছাড়া ফসলহানির আশঙ্কা তো রয়েছেই।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় মোট ৩১টি ইটভাটা রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্স রয়েছে ১০ থেকে ১২টি ইটভাটার। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে তিন ফসলি জমির ভেতর অধিকাংশ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী ও তালতলীতে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার ৯শ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে চার থেকে থেকে ছয় থেকে সাত একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৩১টির মতো ইটভাটা স্থাপনেই চলে গেছে কমপক্ষে ২১৭ হেক্টর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শতশত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

বরগুনা কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম বদরুল আলম বলেন, ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ছয় থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েলসহ জমির মাটি একবার কেটে নিলে সে জমির আর প্রাণ থাকে না। ফলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজন কৃষক জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ যোগায়। উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় অজুহাত দেখিয়ে সহজ-সরল কৃষকদের ম্যানেজ করে দালালরা ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে কিনে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে যে জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে তা অনেক কৃষকই জানেন না।

আবার অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার ক্ষতি পোষাতে তাদের ফসলি জমি থেকে এক হাজার মাটি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন : লালমনিরহাটে জমিতে খাল খনন, ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিপাকে কৃষক

চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের কৃষক মো. মহসিন হাওলাদার বলেন, প্রতিবছরই আবাদ করে ফসল ফলিয়ে লোকসান গুণতে হয়। বাজারে ধানের দাম থাকে না। তাই ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম বলেন, জমির মাটি বিক্রি করলে জমির উৎপাদন শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক তাদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড