• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাইড শেয়ারিং: মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়লেও কমছে সেবার মান

  মনিরুল ইসলাম মনি

২৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:১৮
রাইড শেয়ার
ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং, ছবি: সংগৃহীত

১৮ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর শহর ঢাকাতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে, বেকার সমস্যা সমাধানে ও দেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে এই সেবাখাত অবদান রাখতে শুরু করেছে। তবে বেকার সমস্যা নিরসন হলেও সার্ভিসটি আসলেই কি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে? দৈনিক অধিকার-এর এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই সার্ভিসটির বর্তমান চিত্রের নানা অসঙ্গতি।

ঢাকার রাস্তা ও অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস। অল্পদিনের মধ্যেই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার এ সার্ভিসটি। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ডাকার ঘটনা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম হয়েছে। যার প্রবর্তক ইমতিয়াজ কাশেম। তিনি বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং ‘শেয়ার এ মোটরসাইকেল’ (স্যাম) অ্যাপ চালু করেছিলেন। সেটা ২০১৬ সালের ৭ মে রাজধানী ঢাকায়। ওই দিন মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং-এর ঘোষণা দেয় ‘শেয়ার এ মোটরসাইকেল’ সংক্ষেপে ‘স্যাম’ অ্যাপ ।

তবে স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক ‘স্যাম’ এর প্রথম যাত্রা সুখকর হয়নি। ‘স্যাম’ এর বিষয়টি জানতে পেরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ‘বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে কার্যক্রম শিথিল রাখে ‘স্যাম’।

এর সাত মাসের মাথায় ঢাকায় উবার প্রাইভেটকারে রাইড শেয়ারিং চালু করে। এর পরের মাস ডিসেম্বরে দেশীয় কয়েকজন তরুণের প্রচেষ্টায় ‘পাঠাও’ অ্যাপ মোটরসাইকেল সেবা চালু করে।

২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিং ব্যবহার পরিচিত হতে থাকে। এর মধ্যে উবার প্রাইভেটকারের সঙ্গে মোটরসাইকেল এবং পাঠাও মোটরসাইকেলের সঙ্গে কার সার্ভিস চালু করে। ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকায় লাখ লাখ মোটরসাইকেল ও হাজার হাজার প্রাইভেটকার রাইড শেয়ারিংয়ে দেখা যায়। এখন রাজধানীতে পথে নামলেই উবার পাঠাও মোটরসাইকেল প্রাইভেটকার চলতে দেখা যায়।

ইমতিয়াজ কাশেম বলেন, ‘শুরু করার আগে খোঁজ নিয়ে জানলাম শুধু ঢাকা শহরে চার লাখের ওপর মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন আছে। তারপর মোটরসাইকেলগুলোতে অ্যাপের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে সাথে নিয়ে যাওয়ার অ্যাপটি চালুর চিন্তা করি। সে সময় যাকেই এটা বলেছি সে এটাকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল।’

তবে, এরও অনেক আগেই দেশের প্রত্যন্ত অনেক গ্রামাঞ্চলে মোটরসাইকেল যাত্রী আনা নেওয়ার বাহন হিসেবে ট্যাক্সি সার্ভিসের মতো ব্যবহার হতে দেখা গেছে। হাওরাঞ্চল, সুনামগঞ্জ, ভোলা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ঝিনাইদহসহ অনেক স্থানে এমন চুক্তিভিত্তিক সার্ভিস এখনো চালু আছে।

এ দিকে, রাজধানীতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে নতুন মোটরসাইকেলের সংখ্যা। কিন্তু যারা রাইড শেয়ারিং সেবাগ্রহীতারা বলছেন, নতুন মোটরসাইকেল বাড়ায় এই সেবাটির মান কমে যাচ্ছে। বাড়ছে যানজটও।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, ‘যে হারে ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে, এই সার্ভিসটি তার জৌলুষ হারাবে।’

আবু সালেহ ধানমন্ডির একটি আইটি ফার্মে চাকরি করেন। তিনি থাকেন কল্যাণপুরে। তিনি নিয়মিত রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করে অফিসে আসেন। তিনিও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন এই সার্ভিসের ওপর। বলেন, ‘প্রথম দিকে এই সার্ভিসটি ভালোই লাগত। জ্যাম পাড়ি দিয়ে খুব তাড়াতাড়িই চলে আসতে পারতাম। কিন্তু এখন ঢাকার রাস্তাতে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি।’

বর্তমানে বিআরটিএর হিসাব মতে, ঢাকা শহরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৬টি । গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩২টি। অর্থ্যাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে এক লাখের বেশি মোটসাইকেল।

২০১৫ সালে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৭৬৪টি। ২০১৬ সালে আরও ৫৩ হাজার ৭৮৩টি মোটরবাইক নতুন করে যোগ হয়। যা তার আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার বেশি। ২০১৭ সালে ৭৫ হাজার ২৫১টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়। তা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬৪টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়। ২০১৭ সালের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭৫৫টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।

ইমতিয়াজ কাশেম বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং করার পেছনের উদ্দেশ্য ছিলো- দ্রুত সময়ে কম খরচে মানুষের গন্তব্যে পৌঁছানো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এটা একটা পেশা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে দাঁড়ালে তার ক্ষতিকারক দিকও বের হয়েছে। নতুন করে মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়ে গেছে। আমি কিন্তু চেয়েছিলাম নতুন কোনো মোটরসাইকেল নয়, যা আছে তা দিয়েই রাইড শেয়ারিং হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মোটরসাইকেলের ব্যবহার দেরিতে শুরু হলেও খুব দ্রুতই এই সার্ভিসটি ছড়িয়ে পড়েছে। গত দুই তিন বছরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। বাণিজ্যিক সার্ভিস অপরিকল্পিত হওয়ায় তা ঢাকাবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে, পিকমি লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (বিজনেস অপারেশনস) শরিফুল ইসলাম তারেক বলেন, পেশা হিসেবে নেওয়ায় দেশে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস। বর্তমানে এই সেবাখাত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে প্রায় ৩ হাজার স্নাতকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বেকারত্ব দূরীকরণ ও তাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

কথা হয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ‘পাঠাও’ এর চালক আল-আমিনের সাথে। আল-আমিনের বাড়ি চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলায়। সে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেছে। কিন্তু কোনো চাকরি-বাকরি না থাকায় একটি মোটরসাইকেল কিনে সাত মাস হলো ঢাকায় এসেছে। এখন রাইড শেয়ার করে ভালোই ইনকাম করছে বলে জানায় আল-আমিন।

এ ব্যাপারে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হুসাইন এম ইলিয়াসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

ওডি/এমই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড