• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও মৌলবাদী দৃষ্টিকোণ!

  আয়াজ উর রাহমান

২৫ জুলাই ২০১৯, ২২:২৩
রানা দাশগুপ্তের সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও প্রিয়া সাহার অভিযোগ ইস্যুতে রানা দাশগুপ্তের সাক্ষাৎকার (ছবি : সম্পাদিত)

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন দীর্ঘদিনের সংকট। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় হতে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণেই এ সংকট লক্ষ্য করা গেছে। তবে এই সংকটকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে সারাদেশে নতুন এক সমালোচনার ঝড় তুলেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।

গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে ট্রাম্পের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ নিখোঁজ বা গুম হয়েছে। প্রিয়া সাহা তার নিজস্ব বাড়িও হারিয়েছেন। এসবের পিছনে বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদীরা জড়িত বলেও অভিযোগ তুলেছেন।

তার এই বক্তব্যের পর থেকে দেশে প্রিয়া সাহার পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি ও তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। এমনকি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মামলাও করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে আদালত সেই মামলা খারিজ করে দেন।

তবে এসব তর্ক বিতর্কের মাঝে মূলত প্রিয়া সাহার বক্তব্য কতটা যৌক্তিক বা বাস্তব সম্মত এই নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে ব্রিটিশ আমলের পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান আমলের পূর্ব পাকিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে জনসংখ্যার একটা হিসাব পাওয়া যায়। যেখানে বিভিন্ন সময়ে হওয়া আদমশুমারির তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ৪৭ এর ভারত ভাগের পর থেকে এ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আর এখনকার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কখনোই দেড় কোটি ছাড়ায়নি। ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, সেসময় পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিলো ৯৭ লাখ ৬ হাজার। ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে এ সংখ্যা ৯৯ লাখ ৫০ হাজার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে এ সংখ্যা হয় ১ কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার। আর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এই সংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখ। অর্থাৎ এই ভূখন্ডে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কখনোই ৩ কোটি ৭০ লাখ বা এর অর্ধেকও ছিলো না।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে দেওয়া অভিযোগের ব্যাখ্যা পরবর্তীতে এক ভিডিও বার্তায় জানান প্রিয়া সাহা। ৩ কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিখোঁজ হওয়ার পরিসংখ্যানের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, "২০০১ সালের পরিসংখ্যানে সংখ্যালঘুদের উপর একটা চ্যাপ্টার রয়েছে। সেনসাস (আদমশুমারি) অনুসারে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিলো মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ। এখন তা কমে ৯.৭ শতাংশ।"

তার দাবি, "সংখ্যালঘুদের শতকরা ভাগ যদি এখনো একই রকম থাকতো তাহলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি হতো। সেটাই আমি বলতে চেয়েছি।" তবে প্রিয়া সাহার অভিযোগে উঠে আসা নিখোঁজ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কোথায় আছেন এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেন নি তিনি।

এদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমেছে এমন কোনো তথ্য আদমশুমারিতে পাওয়া যায় নি। ভারত-ভাগের পর ১৯৫১ সালে ৯৭ লাখ ৬ হাজার থেকে ২০১১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৮ লাখে। কিন্তু মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আনুপাতিক হার অবশ্য কমেছে। তবে এই কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান শুধু পাকিস্তান আমলে কিংবা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরই যে দেখা যাচ্ছে তেমন নয়। বরং ব্রিটিশ আমলেও এই অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক হার কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেসময় শুমারিতে অবশ্য হিন্দুদের সংখ্যাই দেয়া হয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা

ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলিম বিরোধ এক বড় সংকট। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পূর্বে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের দ্বিমতে ব্যাপক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধে। আর ওই দাঙ্গায় ব্যাপক সংখ্যক নিরীহ হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হন। এই থেকে ভারত বিভাজনের সময় দেশ ত্যাগ করে যেমন অনেক হিন্দু ভারতে যায় তেমনই বহু মুসলিমকেও দেশ ত্যাগ করে পাকিস্তানে যেতে হয়েছে।

ভারত বিভাজন হল ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক বিভাজন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত ভেঙে হয় পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হয়। পাকিস্তান পরবর্তীকালে আবার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামে দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ভারত অধিরাজ্য পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বা ভারত গণরাজ্য নামে পরিচিত হয়। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের ফলে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ও পাঞ্জাব প্রদেশও দ্বিখণ্ডিত হয়। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ভেঙে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য (ভারত) ও পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ (পাকিস্তান) গঠিত হয়। পাঞ্জাব প্রদেশ ভেঙে পাঞ্জাব প্রদেশ (পাকিস্তান) ও পাঞ্জাব রাজ্য (ভারত) গঠিত হয়। ভারত বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তৃক এবং রেলপথ ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সম্পদ দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত করে দেওয়া হয়।

ভারত বিভাজনের অব্যবহিত পূর্বে পাঞ্জাব অঞ্চলে যে ধর্মীয় দাঙ্গা বেধেছিল, তাতে উভয় ধর্মের ২০০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ইউএনএইচসিআর-এর হিসাব অনুসারে, ১ কোটি ৪০ লক্ষ হিন্দু, শিখ ও মুসলমান ভারত বিভাজনের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন এবং এর ফলে মানব ইতিহাসের বৃহত্তম দেশত্যাগের ঘটনাটি ঘটেছিল।

কলকাতা দাঙ্গা

১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট তদনীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় সংঘটিত একটি বহুবিস্তৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও নরহত্যার ঘটনা। এই দিনটিই ছিল "দীর্ঘ ছুরিকার সপ্তাহ" নামে পরিচিত কুখ্যাত সপ্তাহকালের প্রথম দিন।

১৯৪০-এর দশকে ভারতের গণপরিষদের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল মুসলিম লিগ ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে ব্রিটিশ ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাবে একটি নতুন ভারত অধিরাজ্য ও তার সরকার গঠনেরও প্রস্তাব জানানো হয়। এর অব্যবহিত পরে, একটি বিকল্প প্রস্তাবে হিন্দুপ্রধান ভারত ও মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেস বিকল্প প্রস্তাবটি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে এবং একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিম লিগ ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের (হরতাল) ডাক দেয়।

এই প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই কলকাতায় এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম হয়। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শহরে চার হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান ও এক লক্ষ বাসিন্দা গৃহহারা হন। কলকাতার দেখাদেখি দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালী, বিহার, যুক্তপ্রদেশ (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেও। তবে সর্বাপেক্ষা ভীতিপ্রদ দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল কলকাতা ও নোয়াখালীতে (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে)। এই ঘটনাই ভারত বিভাগের বীজ বপন করে।

স্বাধীনতার এক বছর পূর্বে ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সংঘটিত এই দাঙ্গায় চার হাজারেরও বেশি নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান নিহত হয়েছিলেন।

তবে ভারতবর্ষে সংঘটিত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ইতিহাসে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হলেও এসব বিষয়কে অনেকটাই আড়াল করেন এবং বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষই শুধু এই অঞ্চলে নির্যাতিত এবং ধর্মান্তরিত এর শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে থাকেন এই অঞ্চলের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযোগ করেছেন প্রিয়া সাহা।

বঙ্গভঙ্গে হিন্দু-মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসকদের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বিতর্কিত বঙ্গভঙ্গ ও বঙ্গভঙ্গ রদ দীর্ঘদিন ধরে ঐক্যে থাকা বাংলার মুসলমান ও হিন্দু সমাজের মধ্যে এক বিভেদ সৃষ্টি করে দেয়। ধর্মীয় দাঙ্গা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও পরিবর্তিত হয়ে যায় বঙ্গভঙ্গ আর এর পরবর্তী ঘটনাগুলোর ফলাফল হিসেবে।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলেও বাংলাকে ভাগ করার চিন্তা কিন্তু ব্রিটিশরা অনেকদিন আগে থেকেই শুরু করেছিল। তবে শুধু প্রশাসনিক সুবিধার কথা ভেবে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় বাংলার হিন্দু, মুসলমান আর ব্রিটিশ শাসকদের ত্রিমুখী এক দ্বন্দ্ব।

ভারতে হিন্দু মৌলবাদের উত্থান

রাষ্ট্রীয় সমাজসেবী সংঘ (আরএসএস) মূলত ভারতের একটি দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী, আধাসামরিক ও বেসরকারী স্বেচ্ছা-সেবক সংগঠন। আরএসএস সংঘ পরিবার নামে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর একটি অংশ। ১৯২৫ সালে নাগপুর-বাসী ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রূপে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ও মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা।

সংগঠনটি মূলত সমাজসেবী নামে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও এটি যে বরাবরের মতো ইসলাম বিরোধী এক উগ্র মৌলবাদী সংগঠন তা তাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর বিভিন্ন আগ্রাসী মনোভাব আর নির্যাতন থেকেই প্রমাণিত।

এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আরএসএসের নেতারা প্রকাশ্যে আডলফ হিটলারের প্রশংসা করতেন। মাধব সদাশিব গোলবলকার যিনি হেডগেওয়ারের পরে আরএসএসের পরবর্তী সর্বোচ্চ প্রধান হয়েছিলেন, তিনি হিটলারের বর্ণ-বিশুদ্ধতা মতবাদে অনুপ্রাণীত ছিলেন। কিন্তু কিছু আরএসএস নেতারা ইসরায়েলপন্থীও ছিলেন। বস্তুত সাভারকর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল গঠনের সময় পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন। তবে গোলবলকার "ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাষা" সমুন্নত রাখার জন্য ইহুদিদের ভূয়সী প্রশংসাও করেছিলেন।

নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আরএসএস

মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করলে ভারত সরকার এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু পরে ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রমাণিত হয় নাথুরাম গডসে আর এস এস এর সদস্য ছিল না এবং তৎকালীন গৃহমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সংঘের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। জরুরি অবস্থার সময় (১৯৭৫-৭৮) এবং ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও এই সংগঠন নিষিদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা

১৯৪৮'র ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডস নামের একজন ব্যক্তি হত্যা করে গান্ধীকে। নাথুরাম ছিল আরএসএস’র সদস্য। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) একটি উগ্র ডানপন্থী সংগঠন, যার মূল কাজ হিন্দুত্ববাদের ঠাকুরালী বা প্রভুত্ব প্রচার। বজরঙ্গ দলের সদস্যরা ঐ আন্দোলনের তৃণমূল সৈনিক যাদের কাজই সন্ত্রাসের মাধ্যমে মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর ত্রাস সৃষ্টি করা।

মূলত কোন সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ করে দাঙ্গা সৃষ্টি করাটা তাদের কাজ। বজরঙ্গ দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। ষোড়শ শতাব্দীতে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নামে একটি মসজিদ তৈরি করে তৎকালীন মোঘল সম্রাট বাবর। মসজিদটি ধ্বংস করার আন্দোলন হিসেবে সংগঠিত হয়েছিল বজরঙ্গ দল। ১৯৯২ সালে আরএসএস সংগঠিত একটি দাঙ্গা মিছিলের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয় বাবরি মসজিদ।

শুরু থেকে এই পর্যন্ত সংগঠনটির আড়াই হাজারেরও বেশি উপদল তৈরি হয়েছে ভারতজুড়ে। ২০০৫ সালে এমন একটি উপদল সম্পর্কে প্রথম জানেন এলিজা। নাম 'আকাদাস; মুম্বাইয়ে অবস্থিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তিতে তারা হিন্দু যুবকদের সংগঠিত করে এবং গো-রক্ষার নামে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক পল রিচার্ড ব্রাস বজরঙ্গ দলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন 'জঘন্য একটি সংগঠন যা কিনা জার্মানের নাৎসি বাহিনীর মারাত্মক একটি সংস্করণ।'

ভারতের সহিংসতার চিত্র আরও দীর্ঘ, স্বাধীন ভারতে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুরা অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছেন, মোদী সরকারের আমলে যা ফের বাড়তে শুরু করে। মাত্র ২ মাসেই হিন্দুদের দ্বারা একাধিক মুসলিমকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, কখনও 'জয় শ্রীরাম' বা কখনও গরু কাণ্ডে মুসলিমদের ধরে ধরে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। হিন্দু অধ্যুষিত দেশটিতে, যেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের, সেখানে সাম্প্রদায়িকতার চিত্র এমন।

ভারতের বাইরে আরএসএস এর কার্যক্রম

আরএসএস এর কার্যক্রম কেবল ভারতেই চলে। কিন্তু সংঘের স্বয়ংসেবক যখন নিজ ব্যবসায় অথবা চাকরির সূত্রে বিদেশে ভারতের বাইরে গিয়ে বসবাস করেন, তখন তারা ওখানকার হিন্দু সমাজের সংগঠনের কাজ হিন্দু স্বয়ংসেবক সংঘ এর মাধ্যমে করে থাকে। ৩৫টি দেশে এই সংগঠন চলছে। ওখানকার সকল হিন্দুদের একত্রীকরণ করার কাজ করা, নতুন প্রজন্মকে নিজেদের গৌরবপূর্ণ সংস্কৃতিক উত্তরাধিকার প্রদান করতে ব্যবস্থা করা, এবং যে দেশে তারা থাকে ওখানকার সমাজের সেবা কাজ করা, এই কাজ হিন্দু স্বয়ংসেবক সংঘের মাধ্যমেই স্বয়ংসেবকেরা ভারতের বাইরে করে থাকে।

বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদ ও আরএসএস এর উত্থান

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম এর মতো মুসলিম মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তো আছেই। তবে এর পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের উত্থান ও লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া দেশে সরাসরি আরএসএস এর নামধারী কোনো সংগঠনের চিহ্ন না থাকলেও এ ধরনের মতাদর্শীক বিভিন্ন সংগঠনের উত্থান এরই মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর আদলে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করা হয় বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি)। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আদিবাসী পার্টি, জাগো হিন্দু পরিষদ, শিবসেনা শক্তি মিশন, হিন্দু লীগ, হিন্দু ঐক্য জোট, ভারত সেবাশ্রম ও বাংলাদেশ হিজড়া সম্প্রদায়সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের সম্মিলনে ভারতের বিজেপির আদলে বাংলাদেশেও বিজেপি নামক একটি রাজনৈতিক দল জনসম্মুখে আসে। ভারতের বিজেপির দলীয় প্রতীক লোটাস (পদ্মফুল)। এর অনুকরণে বাংলাদেশের বিজেপির নির্বাচনী প্রতীকও রাখা হয় পদ্মফুল ও পদ্মফুলের নীচে দু’টো হাত।

সংগঠনটির মূলে ছিল মিঠুন চৌধুরী। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদলে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরীর আসল নাম সুধাংশু রায়। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে।

এলাকাবাসী জানায়, মিঠুন চৌধুরী নাম নেওয়া সুধাংশু রায় ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করে এলাকা ছাড়ার পর মাঝেমধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন উৎসবে স্বল্প সময়ের জন্য এলাকায় আসতেন। ভারত ঘুরে এসে নিজের প্রকৃত নাম গোপন করে নতুন নাম নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল করেন তিনি। এ ঘটনায় এলাকাবাসীও বিস্ময় প্রকাশ করে।

সুধাংশু রায়ের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুধাংশু রায়ের জীবন রহস্যে ঘেরা। তিনি নিজের বংশের উপাধি বদলে এখন চৌধুরী উপাধি ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশের কিংবদন্তি বাম রাজনীতিবিদ বরুণ রায় আত্মীয় না হলেও তিনি তাঁর নাতি বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তবে বরুণ রায়ের স্ত্রী শীলা রায় জানিয়েছেন, এ নামের কেউ তাদের আত্মীয় নন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও আরএসএস এর মতাদর্শ বহন করে এমন উগ্রপন্থী কিছু গ্রুপ এর কার্যক্রমও রয়েছে। এসব গ্রুপ গুলোতে ইসলাম বিদ্বেষী বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথাবার্তাও দেখা যায়। এমনকি এসব গ্রুপে আরএসএস এর উত্থান বাংলাদেশে প্রয়োজন বলেও দাবি করেন গ্রুপের সদস্যরা।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত দৈনিক অধিকারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী আরএসএস সংগঠনের তৎপরতা আছে বলে জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের তৎপরতা লক্ষ্যণীয় বলেও জানান তিনি।

চলতি বছর বেড়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতন

চলতি বছর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে বলে দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ২৫০টি হামলা, নির্যাতন ও হত্যাসহ নানা ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৮ সালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৮০৬টি৷ তাই এটা স্পষ্ট যে, চলতি বছরের শুরু থেকেই সংখ্যালঘু নির্যাতন বাড়তে শুরু করেছে৷

তাদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এই চার মাসে হত্যার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ২৩ জন৷ হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০ জন৷ হত্যার হুমকি পেয়েছেন ১৭ জন এবং শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৮৮ জন৷ ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫ জন৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে ৩১টি, বাড়ি ঘর ও জমি জমা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন ১৬২ জন, দেশত্যাগের হুমকি পেয়েছেন ১৭ জন৷

এছাড়া ১০৪ জন ধর্মান্তরিত হয়েছেন, ২৯টি মন্দির ও মঠে হামলা হয়েছে, ৪৩টি মুর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি৷ এর বাইরে অপহরণ, ধর্মস্থান দখল, মূর্তি চুরির মতো ঘটনারও অভিযোগ করা হয়েছে৷

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আরো জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল ১,৪৭১ টি৷ ২০১৭ সালে তা কমে হয়েছিল ১,০০৪টি৷ ২০১৮ সালে আরো কমে ৮০৬টি৷ কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই তা আবার বাড়তে শুরু করেছে৷

বাংলাদেশ থেকে মিসিং সংখ্যালঘুরা কোথায়?

বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুরা হারিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগের প্রশ্নে দৈনিক অধিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা হয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের।

হারিয়ে যাওয়া সংখ্যালঘুরা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তের নির্দেশ দিয়েছে। খুঁজে বের করা শুরু হয়ে গেছে। আসামে ৪০ লক্ষকে খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে ১৭ লক্ষ মুসলিম এবং ২৩ লক্ষ হিন্দু সম্প্রদায়ের।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৪৭ সালে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ছিল ৯৮ দশমিক ৪ ভাগ আজকে সেটা নেমে এসেছে ৪৮ থেকে ৪৯ ভাগে।

বাকি গুলো গেলো কই বলে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভারতে এখন যে জনগণনা হচ্ছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে, এর মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে অনুপ্রবেশকারী কারা?

সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত বলে বিজেপি সরকার যে ঘোষণা দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা অনুপ্রবেশকারীদের ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন টানছেন। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।

তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনে তারা বলেছেন ২০১৪ সাল পর্যন্ত যারা গেছে তাদেরকে তারা শরনার্থী মর্যাদা দিয়ে নাগরিকত্ব দেবে। আমরা বলতে চাই যদি তারা এমনটি করে তবে বাংলাদেশে একটি সংখ্যালঘুও থাকবে না।

সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে উৎসাহিত করার বিপক্ষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান পরিষদের অবস্থান বলেও জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক।

প্রিয়া সাহা রাষ্ট্রদ্রোহী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহী কি মুখের কথা। রাষ্ট্রদ্রোহী মানে কি? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন?

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তবে রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে কেউ যদি বিদেশি কারও কাছে নালিশ করেন, এটা আমরা যৌক্তিক বলে মনে করি না।

বাংলাদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সমাজ সেবী সংঘ (আরএসএস) আছে কিনা এমন প্রশ্নে রানা দাশগুপ্ত দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে আরএসএস এর তৎপরতা আছে। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের বিষয়গুলো এখন বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বলে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করি সাম্প্রদায়িকতাবাদকে সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে নয় মানবিকতা দিয়েই প্রতিরোধ করতে হবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মৌলবাদের ষড়যন্ত্র

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিবেচিত। বিশেষ করে মার্কিন-চীন অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে বাংলাদেশ এই দুই রাষ্ট্রের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতযোগিতার দিকে থেকে পিছিয়ে নেই পার্শ্ববর্তী ভারতও।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুই শক্তি চীন এবং ভারত সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে, বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে তার নজির সম্ভবত নেই।

শুধুমাত্র বঙ্গপোসাগরকে ঘিরেই ভারত-চীন উভয় দেশেরই রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। কেননা ভবিষ্যতে যদি কোনো কারণে ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হয় তবে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা হবে তাদের যুদ্ধাঞ্চলের অন্যতম পথ।

এছাড়া বঙ্গপোসগারে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে চীন ও ভারত দুই দেশেরই। ফলে ব্লু ইকোনমিতে বাংলাদেশের অগ্রগতির সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে ভারত-চীনের রাজনৈতিক প্রভাব।

এদিকে ভারত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হিসেবে এখানে তাদের প্রভাবটাই রাজনৈতিকভাবে বেশি লক্ষ্যণীয়। আর ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একদিকে যেমন বন্ধু সুলভ অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যাপক। এর ফলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের উপরই নির্ভরশীল থাকছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দৌরাত্ম্যে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক প্রভাব বজায় রাখতে এখানে যেকোনো ধরনের মৌলবাদকেই উস্কে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হতে পারে।

দৈনিক অধিকারের সাক্ষাৎকারে জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান

এসব বিষয়ে বাম রাজনৈতিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান দৈনিক অধিকারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ দ্বারা নিপীড়িত। বাংলাদেশে তিন ধরনের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। ধর্মীয়, জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী। এ তিন সংখ্যালঘুরাই ব্যাপক নির্যাতনের শিকার।

সংখ্যালঘুদের মধ্যে মৌলবাদ আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই নির্যাতিত মানুষদের মধ্যে মৌলবাদী হওয়ার ব্যাপার নেই। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালিদের মধ্যে যে শোষক শ্রেণী তাদের সহযোগিরা যেকোনো পার্থক্যকে ব্যবহার করেই এক ধরনের মৌলবাদীতাকে প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল এবং নিপীড়নকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ বর্তমানে ভূ রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য ব্যাপক অর্থনৈতিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। সেরকম একটা অবস্থায় একদিকে মার্কিন অন্যদিকে চীন একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে। বাংলাদেশের উপস্থিতিটা ভূ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের উপর এই বিদেশি শক্তিগুলো নিজেদের কর্তৃত্বকে বজায় রাখতে কীভাবে তাদের শোষণ চালিয়ে যাবে সেটার জন্য এখানকার দালালদের মাধ্যমে নিজেদের স্বকীয়তা গুলো বজায় রাখছে।

তিনি আরও বলেন, এই মূহুর্তে এখানকার ক্ষমতাসীনদের এক ধরনের চাপে রেখে তাদের কাছ থেকে স্বার্থ হাসিলের এক ধরনের চেষ্টা চলছে। সমগ্র সমাজে এক ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তাদেরকে চাপে রেখে আরও বেশি স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও অব্যাহত আছে। এসব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড