নবাবগঞ্জে উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কৃষিভিত্তিক নবাবগঞ্জে এখন কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অকৃষি খাতের বিকাশ ঘটছে। শতভাগ বিদ্যুৎ অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায়, প্রতিটি গ্রাম এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে।

আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে উপজেলার কালিগঙ্গা ও ইছামতি নদীতে বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং নবাবগঞ্জে উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। কৃষকরা কৃষিপণ্য শহর বন্দরের বিক্রি করতে পারছে যার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্রাম গুলোতে সাইবার ক্যাফে, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ ডায়াগনস্টিক মেডিকেল সেন্টারের ও সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে শ্রেণী কক্ষ গুলোকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমে রূপান্তরের চেষ্টা করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো।

বর্তমান সময়ে নবাবগঞ্জে ১৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪০ টির অধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া দোহার নবাবগঞ্জ কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দাখিল মাদ্রাসাসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং মক্তব ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

ফসলে পরিপূর্ণ নবাবগঞ্জের আবাদি জমি

এই অঞ্চলের অধিবাসী ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরীজীবিসহ বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর মানুষ শহরের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নবাবগঞ্জ ও দোহারের সামাজিক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন নবাবগঞ্জ ও দোহারে স্থানীয় বাসিন্দারা।

৫ থেকে ৭ বছর আগে কেউ অসুস্থ অথবা মাতৃকালীন প্রসববেদনা জনিত কারণে উপজেলা হাসপাতাল অথবা রাজধানী ঢাকার কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো সেই সমস্যা এখন আর নেই। ব্যক্তিগত ও সমষ্টি গত ভাবে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও ইউনিয়নে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি আধুনিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মেডিকেল সেন্টার গড়ে উঠেছে। অপারেশনসহ চিকিৎসার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন এসব সেন্টার থেকেই করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একাধিক সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক।

গ্রামের মানুষের উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল হোসেন বলেন, নবাবগঞ্জ ও দোহার একটি প্রবাসী অধ্যুষিত কৃষি ভিত্তিক অঞ্চল। বর্তমান সরকারে উন্নয়নমুখী কার্যক্রম গ্রাম হবে শহর যার বাস্তব চিত্র হচ্ছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা। শতভাগ বিদ্যুৎয়ানের ফলে উপজেলার প্রতিটি গ্রাম এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। যার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

নবাবগঞ্জের উন্নয়নের দুয়ার কালিগঙ্গা নদীতে নির্মিত সেতু

তিনি আরও বলেন, গ্রামের পরিবারগুলোর জীবন-মানেও উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে ছনের ঘর ছিল সেখানে উঠেছে টিনের ঘর, আর টিনের ঘরের জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে ইটের তৈরি দালাল। শহর ও গ্রামের মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ দেখা যায় না। টিউবওয়েলের মধ্যে মোটর লাগিয়ে ট্যাংকে পানি ওঠানো হচ্ছে। ফলে শহরের মতো এখন গ্রামের ঘরে ঘরেও টিপ দিলেই পানি পড়ে। কষ্ট করে টিউবওয়েল চাপতে হয় না। শহরে নাগরিক যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, নবাবগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে বাস করেও অনায়াসে ভোগ করা যায় শহরের সেই সুবিধা।

সরেজমিনে নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাতে হাতে এখন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। তার উপর ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়ে ওয়াই-ফাই সুবিধা ব্যবহার করছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল মিলছে গ্রামে। অধিকাংশ বাড়িতে রয়েছে ফ্রিজ, টেলিভিশন ও ডিস লাইন।

অনেকেই গড়ে তুলছে টার্কি মুরগি দেশী ভেড়া ও উন্নত জাতের গরুর খামার। জলাশয় পুকুর লিজ নিয়ে করা হচ্ছে মাছের চাষ। ধান-পাটের পাশাপাশি কৃষক এখন ভুট্টা, পেয়ারা, কুল বরই ফল ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন। যার কারণে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি এই খাতে শ্রমিকের আয় বাড়ছে।

একই সঙ্গে কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে এখন অকৃষি খাতের বিকাশ ঘটছে। নারীরও আয় বাড়ছে। তারা ঘরে বসে না থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এবং নারী সেই আয় দিয়ে তার পরিবারে যেমন ভূমিকা রাখছেন।

ওডি/আরবি