• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বেকার নারীদের ভরসার নাম ‘মরিয়ম বুবু’

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

২৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:২৮
মরিয়ম বুবু
বেকার যুবতি ও বিধবা মহিলাদের ভরসার নাম 'মরিয়ম বুবু' (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বেকার যুবতি ও বিধবা মহিলাদের ভরসার নাম এখন ‘মরিয়ম বুবু’। দূর থেকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও ছুটে আসছেন এই বুবুর কাছে কাজ শিখতে। যদি কাজ শিখে পরিবারের জন্য দুপয়সা বাড়তি উপার্জন করা যায়। এই উপার্জনটাও কিন্তু সহজ নয়। সারা দিন গাধার খাটুনির পর আয় হয় দুশো থেকে তিনশো টাকা। কোনোদিনও তাও মেলে না।

কিন্তু টানাটানির সংসারে এক জনের আয় দিয়ে ছেলেমেয়ে মানুষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই কষ্ট করে কিছু শিখে যদি আয় বাড়ানো যায়। আর এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মরিয়ম বুবু। খুলেছেন মহিলা উন্নয়ন সমিতি। সমিতিতে এখন সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনশো জনে। সবাই মিলে চলছে বেঁচে থাকার লড়াই।

মরিয়ম বুবুর জীবনটা সহজ ছিল না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দর্জি দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দুজনের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের আস্করনগর বাণিয়াটারী গ্রামে। দরিদ্র স্বামীর সংসারে সন্তান আসার পর টানাটানিটা যেন বেড়েই চলছিল। সংসারের দৈন্যতা দেখে স্বামীর কাছ থেকে দর্জির কাজ শিখে নেন উদ্যমী মরিয়ম বেগম। এরপর বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন আধুনিক পোশাক তৈরির কলা-কৌশলের। হয়ে ওঠেন দক্ষ প্রশিক্ষক। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। উৎসাহীরা ভিড়তে থাকেন তার কাছে।

তিনি ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ‘আস্করনগর বাণিয়াটারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি’। পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় সরকারি সেবা সংগঠনগুলো। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সমিতির রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হন। এরপর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন পান। এলাকার গরিব ও বিধবা মহিলাদের ডেকে এনে তিনি সেলাই প্রশিক্ষণসহ ১৬ ধরনের কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন।

এ সময় তিনি ৩০০ নারীকে সমিতির মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণসহ টেইলারিং ব্লক বাটিক অ্যাম্ব্রডারি, কাটচুপি, বাঁশের তৈরি মোড়া, কার্পেট, পুতির বিভিন্ন ধরনের ভ্যানেটি ব্যাগ, পার্স ব্যাগ, শোপিচ, বেতের শীতল পাটি, বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা, প্যান্ট, শার্ট, বোরকা, লেহেঙ্গা, কামিজ, পায়জামা, সাফারি শার্ট, রাজ কোট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া তৈরিতে সহায়তা করার পাশাপাশি কাটিং মাস্টার হিসেবে গোটা জেলায় খ্যাতি ছড়িয়েছেন।

তার এই উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকাণ্ডের ফলে ২০১৪ সালে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসন থেকে জয়িতা সম্মাননা পান। ২০১৫ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত স্বামী মারা যাওয়ার পর নারীদের আর্থিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার মানসে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এই জয়িতা ও উদ্যমী নারী মরিয়ম বেগম বর্তমানে লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট প্রচারণার মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে হাজার হাজার তরুণী ও যুবতি মহিলাদের ট্রেইনার হিসেবে সেলাই প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উদ্যমী মরিয়ম বেগম এই দৈনিক অধিকারকে জানান, আর্থিক অনুদান পেলে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় মিনি গার্মেন্টস দিয়ে এলাকার হতদরিদ্র যুবক-যুবতিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন। এজন্য সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা চান তিনি।

ওডি/এএসএল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড