• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বাধীন দেশে পাকিস্তানি নাম!

  সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন

০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০
পিডিপি বাজার (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলাধীন আছিমপাটুলী ইউনিয়নের উত্তর টানপাড়ায় আছিম-ফুলবাড়ীয়া রোডে ছোট্ট একটি বাজার- পিডিপি বাজার। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী পাকিস্তানি শাসনামল থেকে প্রচলন থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে নামটি বেশি প্রচলিত হয়।

সরেজমিনে দৈনিক অধিকারকে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, ১৯৭১ সালে পিডিপি দল (পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি) কর্মীদের ক্যাম্প ছিল পার্শ্ববর্তী আছিম বাজারে। দক্ষিণ ফুলবাড়ীয়ায় পিডিপি’র কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা করেছে এবং যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ছিল বলে জানা যায়। স্থানীয় পিডিপি কর্মীদের সহায়তায় পিডিপি বাজারে পাকিস্তানিরা আসত এবং সাধারণ মানুষদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন পরিচালনা করত। স্থানীয় কর্মীদের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন গঠিত দলটির কার্যক্রম এ অঞ্চলে জোরালোভাবে পরিচালিত হয়েছে একাত্তর এ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন নূরুল আমীন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন এবং স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের উপরাষ্ট্রপতি হন।

ময়মনসিংহে বেড়ে উঠা মুসলিম লীগের এ নেতার বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক জীবনের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক রাওয়ালপিন্ডিতে আহূত গোলটেবিল বৈঠকে (১৯৬৯) তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর প্রতিনিধিত্ব করেন। একই বছর তিনি পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলটির সভাপতি হন। ১৯৭০ সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নূরুল আমীন গঠিত পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) -এর নামানুসারেই উপজেলার আছিমপাটুলী ইউনিয়নের উত্তর টানপাড়ায় আছিম-ফুলবাড়ীয়া রোডে অবস্থিত পিডিপি বাজার নামে প্রচলিত। বর্তমানে বাংলাদেশে দলটির কোনো অস্তিত্ব নেই, বিলুপ্তপ্রায় দলটি পাকিস্তানে সম্প্রতি পিটিআই নামে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দলের সাথে একীভূত হয়েছে।

পিডিপি বাজার (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় বাজারটির নাম পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা দাবি তুললেও বিষয়টির আশু কোনো সুরাহা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক বলেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি কিন্তু স্বাধীন দেশে রাজাকারদের স্মৃতি বহন করা কোনো কিছু দেখলে কষ্ট লাগে। নূরুল আমীনের পিডিবি’র কর্মীরা এই বাজার থেকে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষদের ওপর নির্যাতন পরিচালনা করত।

অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, রাজাকার ও রাজাকারদের বংশধররা আজ মাথা উঁচিয়ে চলে, যা দেখলে কষ্ট হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীরা এখন তাদের পূর্বপুরুষদের মতো দেশের সর্বত্র নিজেদের অস্তিত্বের ছাপ রাখছে। আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আবেদন, রাজাকার ও তাদের বংশধরদের স্মৃতি বহন করা চিহ্ন মুছে ফেলে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানাই।

আছিম বাজারে অবস্থিত স্থানীয় অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কলেজ- শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজ। স্থানীয় এলাকাবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, শাহাবুদ্দীন ছিলেন পিডিপি নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে অত্র অঞ্চল তথা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহের রাজাকারদের মূল সংগঠক। এলাকায় প্রসিদ্ধ এ রাজাকার নেতার নামানুসারে কলেজের নাম পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি ময়মনসিংহ বোর্ড কর্তৃক কলেজটির নাম পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠেছে। গুঞ্জনের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন জানান, এ ব্যাপারে এখনও আমরা দাপ্তরিক কোনো চিঠি বা নির্দেশনা পাইনি।

শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, পিডিপি বাজারের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামনগরের সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদিম কায়সার বলেন, ফুলবাড়ীয়ার দক্ষিণাঞ্চলে রাজাকার নেতা শাহাবুদ্দীন রাজাকারের নেতৃত্বে এ অঞ্চলের রাজাকার বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করত। রাজাকারদের স্মৃতি রক্ষার পিডিপি বাজার ও কলেজের নামের পরিবর্তন চাই। একজন কুখ্যাত রাজাকারের নামে কলেজের নাম স্বাধীনতার এতবছর পরও থাকাটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

শাহবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজ (ছবি : সংগৃহীত)

এছাড়া উপজেলার ফুলবাড়ীয়া-গৌরীপুর সড়ক সংলগ্ন একটি এলাকার নাম রয়েছে পাকিস্তান পাড়া। যার সাথেও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানিদের ঘাঁটির বিষয়ে জনশ্রুতি রয়েছে। যার নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগ কর্মী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় মোমেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজাকার বাহিনী ও তাদের বংশধররা আজো স্বাধীন বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে কলঙ্কিত করে রেখেছে। যার নিকৃষ্ট নজির উপজেলার পাকিস্তান পাড়া। জনগণের বিপুল সমর্থনে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরে বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, রাজাকারদের কোনো স্মৃতি বা চিহ্ন আমাদের স্বাধীন দেশে না থাকুক।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড