• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রোজা ও করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে নেই রক্ত দান

  মো. আশিকুর রহমান, গবি প্রতিনিধি

২২ মে ২০২০, ২১:৪৪
রক্ত
ছবি : সম্পাদিত

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলাম রক্ত এক ধরনের তরল যোজক কলা। তখন বুঝতাম না এটি আবার কোন প্রকার কলা! কিন্তু এখন বুঝি এই কলার গুরুত্ব কতটুকু! মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই রক্ত। শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ নষ্ট হলেও মানুষ কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু রক্তের অভাবে বা রক্তে কোনো সমস্যা হলে মানুষ সরাসরি কুপোকাত।

বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় জরুরি মুহূর্তে অনেকেরই রক্তের প্রয়োজন হয়। লক্ষ লক্ষ টাকা থাকলেও নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত না পাওয়ার ফলে মারা যান অনেক মানুষ। জরুরি মুহূর্তে এমন মানুষের পাশে মানবতার হাত বাড়িয়ে রক্ত সংগ্রহ ও রক্তদানের মতো মহৎ কাজ করে যাচ্ছে বেশকিছু সংগঠন।

করোনা পরিস্থিতি এবং পবিত্র মাহে রমজানেও কাজ করে যাচ্ছে মানুষের সেবায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও দৈনিক অধিকারের প্রতিনিধি মো. আশিকুর রহমান।

জরুরি মুহূর্তে রক্ত সরবরাহ করেন এমন উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংগঠন হলো-

১. ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশন ২. মেডিসিন ক্লাব ৩. স্বেচ্ছায় রক্তদান ব্লাড ফাউন্ডেশন ৪. সারস- সাভার রক্তদানকারী স্বেচ্ছাসেবী

প্রথমে এ বিষয়ে কথা হয় ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অরুপ সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ২০১৭ সালে ৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সিজার, থ্যালাসেমিয়া, ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার, জরুরি অপারেশনে রক্তের দরকার হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এ সকল রোগীদের দ্রুত সময়ে রক্ত সরবরাহে ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যৌথভাবে গত ১৮ এপ্রিল একটি কল সেন্টার চালু করেছে।’

‘করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি রক্ত সরবরাহ সেবা’ কল সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা অরুপ সরকার জানান, প্রতিদিন আমাদের কাছে রক্তের জন্য অসংখ্য কল আসে। করোনা পরিস্থিতিতে যে সকল রক্তদাতা রক্তদানে এগিয়ে আসছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের ট্রান্সপোর্টের জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। যদি কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে রক্তদাতাদের যাতায়াতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসত তাহলে আমরা আরও অধিক রোগীর জন্য রক্ত সরবরাহ করতে পারতাম।

কথা হয় মেডিসিন ক্লাবের উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি ডা. জয়দেব বসাকের সাথে। তিনি জানান, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালো কাজের মাধ্যমে চাইলেই যে কোনো কঠিন দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। এই প্রত্যয় নিয়ে ৩৯ বছর আগে শুরু হওয়া মেডিসিন ক্লাবের পথচলা আজও অব্যাহত আছে। মেডিসিন ক্লাব মেডিকেল এবং ডেন্টাল শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক সংগঠন। সারাদেশে মেডিসিন ক্লাবের ২৫টি মেডিকেল কলেজে পূর্ণাঙ্গ ইউনিট এবং ৭টি মেডিকেল কলেজে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।

ইতোমধ্যে মেডিসিন ক্লাব তাদের টেলিমেডিসিন সেবা ‘হ্যালো মেডিসিন ক্লাব’ চালু করেছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে মানুষ এখন ঘর থেকে বের হতে পারছে না তাই জনগণের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেডিসিন ক্লাব কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি আরমান হোসেন।

এছাড়াও অধিকতর জটিল চিকিৎসা সংক্রান্ত সমাধানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অসংখ্য রোগী উক্ত টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণ করেছেন।

পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারী কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মেডিসিন ক্লাবের বিশেষ পরিবহন সেবার কার্যক্রমও ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য চিকিৎসক তাদের যাতায়াতের সেবা গ্রহণ করছেন। এতো কিছুর মাঝেও থেমে নেই তাদের নিয়মিত কাজ হাসপাতালে রক্ত সরবরাহ। প্রতিদিন তাদের বিভিন্ন ইউনিট রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে রক্ত সরবরাহ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : বেশি বেশি ভালো বই পড়ুন, ভালো লেখা পড়ুন

এ বিষয়ে আরও কথা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ব্লাড ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান ব্লাড ফাউন্ডেশন, একটি স্বেচ্ছাসেবী এবং অরাজনৈতিক সংগঠন। আমাদের মূল কাজ রক্তদাতা ম্যানেজ করে রোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। প্রায় সময়ই আমাদের কাছে যারা সহযোগিতা চায়, আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।’ এই করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের রক্তের যোগান দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

‘আত্মার বন্ধনে বাঁধা এক একটি প্রাণ মুমূর্ষু রোগীর প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় করি রক্তদান’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে সবাই এগিয়ে আসুন স্বেচ্ছায় রক্তদানে।

কথা হয় সাভার রক্তদানকারী সংগঠনের সভাপতি মোঃ শাহাদাৎ হোসেনের সাথে। তিনি জানান, ‘ভালোবাসার রঙিন টানে বাঁচবে জীবন রক্তদানে’ স্লোগানকে সামনে রেখে এই সংগঠনের যাত্রা। করোনা পরিস্থিতিতেও সংগঠনের পক্ষ থেকে ডোনার ম্যানেজ করে দেওয়া হচ্ছে এবং অন্যদের রক্তদানে উৎসাহিত করছে। এখন দেশে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস এবং তা খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই সময়ে সবারই উচিৎ ঘরে থাকা। কিন্তু অনেক রোগী আছে যারা হসপিটালে আছে। তাদের রক্তের প্রয়োজন হয়। অনেক সিরিয়াস রোগী থাকে যারা রক্তের অভাবে মারা যেতে পারে। তাদের কে রক্তদান করাও আমাদের সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব। রোজা রেখে রক্তদান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। এই অবস্থায় রক্তদান করলে ৭০ গুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। যারা রোজা রেখে রক্তদান করতে চায় না তারা ইফতারের পর চাইলেই দিতে পারে। তাই সকলের উচিৎ এই পরিস্থিতিতেও অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা সারস-সাভার রক্তদানকারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড