• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (পর্ব-৫)

হজের মূল হাকিকত তাওহিদ

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৩ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৪৪
Hajj

প্রতিটি ইবাদাতেরই থাকে কিছু হাকিকত বা গূঢ়তত্ত্ব। হজের মূল তত্ত্ব হলো তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ। হজের প্রতিটি স্তরেই রয়েছে তাওহিদের দীপ্ত উচ্চারণ। ইহরাম পরিধান, তালবিয়া পাঠ, তাওয়াফ, সাঈ, কুরবানিসহ প্রতিটি আমলই দাঁড়িয়ে আছে তাওহিদের ভিত্তিমূলে। এই কাবা তো দাঁড়িয়েই আছে তাওহিদের উপর। ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর পূন: নির্মাণকালেও আল্লাহ তায়ালা তার খলিলকে আদেশ করেছিলেন তাওহিদের ব্যাপারে।

وَإِذۡ بَوَّأۡنَا لِإِبۡرَٰهِيمَ مَكَانَ ٱلۡبَيۡتِ أَن لَّا تُشۡرِكۡ بِي شَيۡ‍ٔٗا وَطَهِّرۡ بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ

‘আর স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহিমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহর) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না আর আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ [সুরা হজ : ২৬] হজের ধারাবাহিক কাজের ক্ষেত্রে একজন হাজিকে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো, নির্দিষ্ট মিকাতে ইহরামের সাদা কাপড় পরিধান। এভাবে একজন হাজি নিজের সমস্ত আমিত্ব, সমস্ত শিরক, কুফর, তাগুত ও গাইরুল্লাহ থেকে নিজেকে অবমুক্ত করে আল্লাহর দরবারে পুরোপুরিভাবে নিজেকে সঁপে দেয়। এরপর তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে বান্দা তাওহিদের অকুন্ঠ স্বীকারোক্তি প্রদান করে। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা.) বলেন,

أنَّ رَسُولَ اللهُ صلَّى اللهُ عَلَيهِ وسَلَّمَ أَهَلَّ بِالتَّوْحِيدِ : لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ

‘তাওহিদ দিয়েই রাসুল (সা.) তালবিয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন, ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। আমি হাজির, তোমার কোন শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা, নিয়ামত ও রাজত্ব তোমার, তোমার কোন শরীক নেই।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ১২১৮] তালবিয়ার শব্দমালায় এক আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়া ও তাঁর লা-শরিক হবার ঘোষণা বারবার উচ্চারিত হয়। তালবিয়া যেন সকল শিরক, কুফর ও তাগুতের বিরুদ্ধে তাওহিদের এক দীপ্ত ঘোষণা। যে ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখা যায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনে শিরক ও মুশরিকদের সাথে আজন্ম আপসহীনতার মাধ্যমে। রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা হলো শিরকের একটি প্রকার, যা তাওহিদের পরিপন্থী। হজের মাধ্যমে রিয়া থেকে বাঁচার একপ্রকার প্রশিক্ষণ হয়। এখানে লোকদেখানোর কোনো সুযোগ থাকে না। কারণ একই সাথে সাদা, কালো, ধনী, গরিব, আমির, ফকির―কারও মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত নেই। আমিত্বের কোনো বড়াই নেই। নেই জাত-পাতের কোনো ব্যবধান। সবাই যেন একদেহ, একপ্রাণ। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) দুয়া করতেন―

اللَّهُمَّ حِجَّةً لا رِيَاءَ فِيهَا وَلا سُمْعَةَ

‘হে আল্লাহ, এমন হজ চাই যা হবে রিয়া ও লোক দেখানো থেকে মুক্ত।’ [ইবনু মাজাহ, আসসুনান : ২৮৯০] তাওয়াফ শেষে যে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হয় তাতে সুরা ইখলাস ও সুরা আল-কাফিরুন পাঠ করা সুন্নাহ। আর দুটি সুরা তাওহিদ গ্রহণ ও তাওহিদবিরোধীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের প্রতিই নির্দেশ প্রদান করে। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,

فقَرَأَ فِيهِمَا بِالتَّوْحِيْدِ و﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾

‘রাসুল (সা.) এ দু’রাকাতে তাওহিদের সুরা (ইখলাস) ও ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ পাঠ করলেন।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ১৯১৯]

সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ (সা.) যে দুয়াটি পাঠ করতেন তাতেও তাওহিদের দাবি প্রকটভাবে ফুটে ওঠে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,

فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِىَ عَلَيْهِ حَتَّى رَأَى الْبَيْتَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَوَحَّدَ اللَّهَ وَكَبَّرَهُ وَقَالَ «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ»

‘এরপর রাসুল (সা.) সাফা পাহাড় দিয়ে শুরু করে তাতে আরোহণ করলেন, কাবা দৃষ্টিগ্রাহ্য হলো, তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর তাওহিদের কথা বললেন এবং তাঁর মাহাত্ম্যের ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল দলকে পরাজিত করেছেন।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ১২১৮]

আরাফার দুয়া ও যিকরসমূহেও তাওহিদের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءِ يَوْمِ عَرَفَةَ ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي : لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘উত্তম দুয়া হলো আরাফার দিবসের দুয়া। আর আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের সর্বোত্তম দুয়াটি হলো―‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।’ [তিরমিযি, আসসুনান : ২৮৩৭]

আসলে হজের প্রতিটি কর্মের আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছে তাওহিদ। তাওহিদই হলো হজের মূলতত্ত্ব। তাই প্রত্যেক হাজিরই উচিত তাওহিদের নির্ভেজাল শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাওহিদের ধারক-বাহক বনে যাওয়া। কারণ তাওহিদই হলো সমস্ত ইবাদাতের মূলভিত্তি। তাওহিদবিহীন সবই মূল্যহীন।

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড