ধর্ম ডেস্ক
ফিতরের দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদের দিন। কেননা সেদিন সাওম পালনকারী কবীরা গুনাহগারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেদিন গুনাহগারগণ সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিত হয়। এমনিভাবে ইয়াওমুন নাহর তথা কুরবানীর দিন হলো মুসলিমের জন্য বড় ঈদের দিন। কেননা এ ঈদের পূর্বে রয়েছে আরাফার দিন।
আর ‘আরাফার দিনে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দু’দিনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে তার জন্য এ দিন দু’টি সত্যিকারের ঈদের দিন; কিন্তু যার মুক্তি মিলবে না তার জন্য এ দিন দু’টি শুধুই পরিতাপ আর শাস্তি ভোগ করার প্রতিশ্রুতির দিন।
ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি যেহেতু রমজানের সাওম পালন ও সালাত আদায়ের সাথে জড়িত, তাই আল্লাহ তাঁর তাকবীর ও শুকরিয়াস্বরূপ দিনগুলো পরিপূর্ণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
﴿وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ١٨٥﴾ [البقرة: ١٨٥]
“আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৫] সুতরাং যিনি বান্দাকে সাওম পালন ও সালাত আদায়ে তাওফিক দান করেছেন, এসব কাজে যিনি তাদের সাহায্য করেছেন এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন তাঁর শুকরিয়া হচ্ছে, তাঁর যিকির করা, তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা এবং যথাযথ তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করা।
আগের পর্ব পড়তে- শাওয়াল মাসের সিয়ামে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় (পর্ব- ১)
ওহে সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন, সাবধান তুমি (গোনাহ থেকে) স্বাধীন হওয়ার পরে আবার (গোনাহের) গোলামীর কাতারে ফিরে যেওনা। তোমার মনিব তোমাকে জাহান্নামের কিনারা থেকে দুরে সরিয়ে নিয়েছেন তুমি কি সেটার কিনারায় উপনীত হতে চাও? তোমার মাওলা তোমাকে সেখান থেকে রক্ষা করেছেন, তুমি কি সেটায় পড়তে চাও? তুমি কি তা থেকে পাশ কাটিয়ে চলবে না?
মুহসিনীন তথা সৎকর্মশীলদের জন্য তাঁর রহমতের অঙ্গিকার থাকলেও পাপীরা তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। তাঁর মাগফিরাত মুত্তাকিনদের জন্য হলেও যালিমগণ তাঁর মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত হয় না। কবি বলেছেন :
فمن الذي يرجوُ ويدعو المذنبُ؟
إن كانَ لا يرجوكَ إلا مُحسنٌ
তোমার (আল্লাহর) কাছে যদি সৎকর্মশীলরাই পাওয়ার আশা করে, তাহলে গুনাহগাররা কার কাছে গুনাহ মাফের আশা করবে এবং কাকে ডাকবে? কেন আমাদের রবের কাছে ক্ষমার আশা করে না? আর কেনই বা তাঁর সহিষ্ণুতার প্রত্যাশা করে না?
হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার ব্যাপারে তার মায়ের চেয়েও অধিক দয়াশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا٥٣﴾ [الزمر: ٥٢]
“বলুন ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত ৫২]
[১] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৭২৫৬, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ উল্লেখ করেননি। ইমাম যাহাবী রহ. সহীহ বলেছেন। আবূ হুরাইরা, আনাস ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ বর্ণনা আছে। দেখুন, তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৫। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [২] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৯। [৩] তিরমিযী, হাদীস নং ৬৮২, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, এ পরিচ্ছেদে আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ, ইবন মাস‘ঊদ ও সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবন মাজাহ, ১৬৪২। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। নাসাঈ, ২১০৭।
চলবে...
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড