• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিজ্ঞান ও ইসলামের আলোকে দাঁড়ি রাখার গুরুত্ব

  অধিকার ডেস্ক

২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৩১

গত ২৪ এপ্রিল বিবিসি বাংলায় 'কুকুরের পশমের চেয়ে মানুষের দাড়িতে বেশি জীবাণু' এ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় সুইজারল্যান্ডের একদল গবেষক সে দেশের ১৮ জন পুরুষের এবং ৩০টি কুকুরের গায়ের লোমের নমুনা নিয়ে একটি গবেষণা করে। সেখানেই উঠে আসে কুকুরের গায়ের লোমের চেয়ে পুরুষের দাড়িতে জীবাণু বেশি। কিন্তু গবেষণাটি করা হয় মূলত একটি দেশের একদল নির্দিষ্ট মানুষের ওপর। সে প্রতিবেদনে এও বলা হয়, এ তথ্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এটি শুধুমাত্র একদল মানুষের ওপর করা একটি নির্দিষ্ট গবেষণার ফল। তবে উক্ত গবেষণা এবং গবেষণাটির নিউজ প্রকাশ করাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করছেন মুসলিমগণ। তাদের মতে, দাড়ি রাখা ইসলামের বিধান এবং সহিভাবে দাড়ি রাখা বিজ্ঞানসম্মতভাবেও উপকারী বলে বিবেচ্য। তবে কেন এবং কী উদ্দেশ্যে এ ধরনের গবেষণা এবং তার সংবাদ প্রকাশ সেটি ঠিক বোধগম্য নয়। কারণ এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করাও পাপের ভাগীদার হওয়া। দৈনিক অধিকার এ ধরনের নিউজ প্রকাশ না করার ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ এবং মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ দৈনিক অধিকার চায়, মানুষকে সত্য ও সঠিক পথের আলো দেখাতে।

এ পর্যায়ে আমরা জানার চেষ্টা করব দাড়ি রাখার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে দাড়ি রাখার গুরুত্ব কতখানি।

দাড়ির ব্যাপারে ইসলাম কী বলে

দাড়ি ইসলামের একটি অন্যতম নিদর্শন ও দায়েমি সুন্নাহ, যার মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিম আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।

ইসলামি শরীয়তে একমুষ্টি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং হুকুমের দিক থেকে ওয়াজিব পর্যায়ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে। -(তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ. ৩০)

নিম্নে দাড়ি সম্পর্কিত কতিপয় হাদিস, সাহাবাগণের আমল ও ফিক্বাহগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করা হলো:

হাদিস অনুযায়ী দাড়ির বিধান

১. হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসুলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম। (মুসলিম শরীফ : ১২৯)

২. হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা গোঁফ কাটো এবং দাড়ি লম্বা করো, আর অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো। (মুসলিম শরীফ : ১২৯)

৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা করো, আর গোঁফ ছোট করো। (বুখারী শরীফ : ৮৭৫, মুসলিম)

৪. হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাড়ি বাড়াও, গোঁফ কাটো এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদি- খ্রিস্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না। (মাসনাদে আহমদ)

৫. রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আমল- রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আমল দ্বারাও দাড়ি রাখার বিধান প্রমাণিত হয়। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবি হযরত খাব্বাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে কেউ জিজ্ঞেস করেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি জোহর ও আছর নামাজে কিরাত পাঠ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠ করতেন। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করেন, আপনি কীভাবে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, হুজুর রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দাড়ি মুবারকের দোলায় আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরাত পাঠ করছেন। (তাহাবী শরীফ)

প্রাত্যহিক জীবনে দাড়ি রাখার গুরুত্ব কতখানি?

নির্দিষ্ট কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের ওপর করা গবেষণার ফল যেমনই হোক না কেন আসলে একজন পুরুষের দাড়ি যে তার মুখমণ্ডলের সুরক্ষার জন্য উপকারী তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না।

জেনে নেওয়া যাক শরীয়ত মোতাবেক দাড়ি রাখার উপকারিতাগুলো কী কী-

শেভিং র‍্যাশ থেকে মুক্তি

যাদের ত্বক অতিমাত্রায় সংবেদনশীল তারা যদি বারবার শেভ করে তাহলে তাদের ত্বকে শেভিং র‍্যাশের সমস্যা দেখা যায়। এই র‍্যাশের ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া ভাবের সৃষ্টি হয়। দাড়ি রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সহজেই।

অ্যালার্জি

অনেক পুরুষ আছেন যাদের ধুলোবালি ও রোদ থেকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এই অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে অস্থির থাকেন অনেকেই। মুখ ধোয়া, মাস্কের ব্যবহার, কোনো কিছুতেই এই অ্যালার্জি থামানো যায় না। তাদের জন্য দাড়ি বেশ উপকারী। দাড়ির কারণে মুখের ত্বক সরাসরি ধুলোবালি এবং রোদের সংস্পর্শে আসে না এতে অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

স্কিন ক্যানসারের প্রবণতা কমায়

দাড়ি রাখলে ত্বকে সরাসরি রোদ লাগে না। শেভ করার সময় ও পরে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করা দীর্ঘ সময় পরে ত্বকে সমস্যার সৃষ্টি করে। এই সমস্যা পরবর্তীতে প্রাণঘাতি ক্যানসারে পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু দাড়ি রাখলে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। কারণ এতে একদিকে ধুলোবালি থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকে অন্যদিকে শেভিংয়ের ঝামেলা না থাকায় ত্বকে কোনো কেমিক্যালের ব্যবহার করতে হয় ।

ব্রণ থেকে রক্ষা

সময়ের সাথে সাথে ব্রণের সমস্যা এখন পুরুষদেরও মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ। শেভিং ফোম, ক্রিম ও আফটার শেভ লোশনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল প্রসাধনী ও ধুলোবালি এই সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দাড়ি রাখলে এই সমস্যা থেকে সমাধান মেলে। তবে নিজের ত্বকের যত্নে পরিচর্যার বাইরে আর কিছু নেই।

বয়সের ছাপ

দাড়ি রাখলে ত্বকে বয়সের ছাপ ধীরে ধীরে পড়ে। মার্কিন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা ড. অ্যাডাম ফ্রাইডম্যান জানান, দাড়ি দিয়ে মুখের ত্বক ঢাকা থাকার ফলে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায়। এতে ত্বকে কম ক্ষতি হয়। দেরিতে রিংকেল পড়ে ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে দেরিতে।

হাঁপানির সমস্যা কমায়

দাড়ি নাকে মুখে ক্ষতিকর ধুলো-বালি ঢুকতে বাধা দেয় ফলে হাঁপানির সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে।

দাড়ি রাখার উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন সময় হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা। ত্বকের জন্য দাড়ি উপকারী কি না সে বিষয়ে ২০১৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড-এর একদল গবেষক একটি গবেষণা করেন। সে গবেষণার প্রধান লেখক পারিসি ব্যাখ্যা করে বলেন, মুখের দাড়ি সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। আর তাই সুরক্ষিত থাকে মুখমণ্ডল। এছাড়াও ত্বক সজীব রাখতে আর ত্বকের ভাঁজ হওয়ার হাত থেকেও দাড়ি রক্ষা করে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

বরঞ্চ মুখে দাড়ি না রাখার ফলে ছেলেরা সম্মুখীন হতে পারেন বেশ কিছু সমস্যার। চলুন জেনে নিই কেমন হতে পারে সেগুলো:

- ত্বক যদি একদম ক্লিন হয় তাহলে বাইরের ধূলাবালি অথবা সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি সরাসরি লেগে ত্বক নোংরা হতে পারে অথবা পুড়ে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে ক্ষত। আর সে জায়গাতে নিজের অজান্তেই বারবার চুলকালে ক্ষতের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এ দিক থেকে যে ব্যক্তির মুখে দাড়ি আছে তিনি এই সমস্যার মুখোমুখি কম হন। কারণ মুখের দাড়ি ভেদ করে ধূলাবালি বা বেগুনী রশ্মি সহজে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে না।

- যারা নিয়মিত শেভ করেন তাদের চামড়া তুলনামূলকভাবে পুরু হয়ে যায়, ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করে। এছাড়া প্রতিনিয়ত শেভের ফলে মুখে অনেক সময় কেটে যায়, দাগ পড়ে যায়। আর এ কারণে কমে যেতে পারে মুখের সৌন্দর্য।

- শহরে মানুষ আগের থেকে কিছুটা সচেতন হলেও মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে এখনও সেলুনগুলোতে শেভ করানোর সময় পুরোনো ব্লেড বদলানো হয় না। একজনের ব্লেড দিয়েই অনেককে শেভ করানো হচ্ছে। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে ছোঁয়াচে রোগ। ছড়াতে পারে এইচআইভি ভাইরাসের মত ভয়ঙ্কর রোগও।

- এছাড়াও প্রতিনিয়ত শেভের কারণে মানুষের দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই তথ্যগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে জানানো হলো সুবিধা আর অসুবিধার ক্ষেত্রে। শুধু বৈজ্ঞানিকভাবেই নয়, ইসলামেও দাড়ি রাখার উপকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। একজন মুমিন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। আর প্রতি ওয়াক্তেই তাকে ওজু করতে হয়। সে হিসেবে দিনে পাঁচবার ওজু করলে প্রতিদিন পনেরো বার তার মুখ ধৌত করতে হয়। আর এমনটি করলে দাড়িতে কোনো ধরনের ময়লা বা ব্যাকটেরিয়া থাকবে না। মুমিন মুসলিম পবিত্র থাকেন, তাই তাদের দাড়ি থাকে জীবাণুমুক্ত।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড