• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুসলিম ও বাঙালি পরিচয়ের মাঝে কোনো সংঘর্ষ নেই

  মুনশি আমিনুল ইসলাম

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৩০
ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ধর্মীয় পরিচয়ে আমরা মুসলিম। আল্লাহ পাকের অপার করুণা, আমাদের তিনি মুসলিম হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন। অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমরা তাঁর শোকর আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَی اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ

অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির চেয়ে ভালো কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং ভালো কাজ করে। আর বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের একজন। (সুরা হা-মীম সিজদাহ :৩৩)

মুসলিম মানে- আনুগত্য স্বীকারকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করে, তাঁর দ্বীন ও শরিয়তকে সমর্পিতচিত্তে গ্রহণ করে সেই মুসলিম। তাই মুসলিম নামটি হচ্ছে আদর্শভিত্তিক নাম। এ আদর্শ এসেছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে, সকল মানুষের জন্য। সব যুগের, সব দেশের, সব শ্রেণির মানুষের জন্য। ইসলাম কবুলের ক্ষেত্রে যেমন জবরদস্তি নেই; তেমনি কোনো বাধাও নেই। যে ইচ্ছে করবে ইসলাম কবুল করতে পারবে। আর যে ইসলাম কবুল করবে তার জন্যে আছে ইসলামের জ্ঞানার্জনের এবং নিজ কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ। আল্লাহর কালাম আল-কুরআন সবার জন্য। সবার আছে আল-কুরআন পড়ার ও বোঝার সুযোগ। আছে হাদিস-সুন্নাহ, ফিকহ পড়ার ও জানার সুযোগ। আমলে সালিহের সুযোগ। এক কথায়, জ্ঞান ও কর্ম সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার ও চিরস্থায়ী শান্তির জান্নাত লাভের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত।

এই সুযোগ ও সৌভাগ্য ইসলাম মুসলমানের বিশেষ কোনো বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেনি। আসলে ইসলামে বর্ণবাদ ও বর্ণভেদ বলতে কিছুই নেই; বরং ইসলামের বিধানেই আছে এর সবচেয়ে জোরালো ও কার্যকর প্রতিরোধ। জ্ঞানার্জনের ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ উন্মুক্ত করে ইসলাম একে যুক্ত করেছে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মের সাথে। যে ইসলাম কবুল করবে এবং চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সৌভাগ্য তার জন্য। কুরআন মাজিদের ইরশাদ-

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰی وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْیِیَنَّهٗ حَیٰوةً طَیِّبَةً وَ لَنَجْزِیَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ

অর্থাৎ মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে নিশ্চয়ই তাকে আমি দান করব পবিত্র জীবন এবং তাদের তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সুরা নাহল :৯৭)

কাজেই ইসলাম এক উন্মুক্ত আদর্শের নাম। যে আদর্শ আল্লাহ প্রদত্ত এবং যা মানবীয় দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাসহ সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত। তাই মুসলিম পরিচয়ের পরিচয়বাহীকে ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার চেতনা দান করে না, বরং উদারতা ও ন্যায়নিষ্ঠার চেতনা দান করে। মুসলিম পরিচয় মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সে মুক্ত-স্বাধীন নয়; আল্লাহর বিধানের অধীন। তাই তার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই। সে প্রবৃত্তির দাস নয়, আল্লাহর বান্দা। অতএব তার অনাচার-পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ও লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।

আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্যই প্রয়োজন আমাদের মুসলিম পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া। মুসলিম পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা বিস্তারকারীগণই হচ্ছেন ব্যক্তি ও সমাজের প্রকৃত বন্ধু। এরাই বার্তাবাহক শান্তি ও শৃঙ্খলার, প্রচারক উদারতা ও মানবতার। পক্ষান্তরে মুসলিমের মুসলিম-পরিচয় সম্পর্কে ভীতি ও সন্দেহ বিস্তারকারীরাই হচ্ছে মুসলিম সমাজের ঘরের শত্রু। শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য-উদারতা ও মানবতা-মহানুভবতার বিপক্ষ শক্তি। এই সত্য আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

এই শ্রেণিটির নানামুখী কপট প্রচারণার প্রভাবে এই প্রশ্ন কারও মনে বড় হয়ে উঠতে পারে যে, মুসলিম পরিচয় ছাড়াও তো আমাদের আরও পরিচয় আছে। শিক্ষাগত পরিচয়, পেশাগত পরিচয়, ভাষা ও ভূখণ্ডগত পরিচয় ইত্যাদি। ঠিক কথা। কিন্তু এতে তো কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের সকল স্বাভাবিক পরিচয় স্বস্থানে সঠিক। এক পরিচয়ের সঙ্গে আরেক পরিচয়ের কোনো সংঘর্ষ নেই। সংঘর্ষটা অনেক ক্ষেত্রেই কল্পিত কিংবা আরোপিত। কে না বুঝবেন যে, একজন বাঙালি মুসলিম চিকিৎসক একই সঙ্গে বাঙালিও, মুসলিমও, চিকিৎসকও। মুসলিম তার ধর্মীয় ও আদর্শগত পরিচয়, চিকিৎসক তার পেশাগত পরিচয়, আর বাঙালি তার ভাষা ও ভূখণ্ডগত পরিচয়। এসব পরিচয়ের মধ্যে তো আসলে কোনো সংঘর্ষ নেই।

সংঘর্ষ তখনই তৈরি হয় যখন এসব পরিচয়ের কোনোটির স্বাভাবিক প্রশস্ততার ওপর সংকীর্ণতা আরোপ করা হয়। যেমন ‘বাঙালি’ পরিচয়টির প্রশস্ততায় মুসলিম-অমুসলিম উভয়ই রয়েছে। কারণ যেই বাংলা অঞ্চলের অধিবাসী এবং বাংলায় কথা বলে সেই বাঙালি; সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম। এখন কেউ যদি বাঙালি পরিচয়টি বিশেষ কোনো অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয় কিংবা সীমাবদ্ধ করার মতো শর্ত, লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যারোপ করে তাহলে তো মুসলিম পরিচয়ের সাথে তা সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াবেই। কিন্তু বলাই বাহুল্য যে, সেটা হবে সম্পূর্ণ আরোপিত। বাস্তবে মুসলিম ও বাঙালি- এ দুই পরিচয়ে কোনো সংঘর্ষ নেই।

যাহোক, আমরা মুসলিম এবং বাঙালি মুসলিম। এই আমাদের পরিচয়। আমাদের এই পরিচয়টুকু যে কত মূল্যবান তার প্রমাণ বর্তমান সময়ের ধর্মবিদ্বেষী ও জাতিবিদ্বেষী নানামুখী প্রচার-প্রচারণা। আমাদের কর্তব্য এই পরিচয় হৃদয় ও বিশ্বাসে সযত্নে লালন করা। জীবন ও কর্মে তার যথার্থ প্রতিফলনে প্রয়াসী হওয়া। এতেই কল্যাণ আমাদের, কল্যাণ দেশ, জাতি ও সমাজের। আমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার দুয়ারে। তিনিই আমাদের মাওলা, তিনিই আমাদের অভিভাবক।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড