• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির কবিতা

মেঘফুল ঝরে গেলে বৃষ্টি হয়

  মাহমুদ শাওন

১২ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৫১
কবিতা
প্রচ্ছদ : কাব্যগ্রন্থ ‘শেষ দেখায় জল গড়ায়’

তিতির এখন কেমন আছো

তিতির। এই তিতির। শুনতে পাচ্ছো। আমি বলছি। কেমন আছো। কেমন কাটছে তোমার সুদিন। তোমার রাতগুলো কেমন আছে। কেমন আছে তোমার শুক্রবার। ভেজা চুল। কেমন আছে চুড়ি। টিপ। নীল শাড়ি। কেমন আছে আলমারির সব কাপড়। কেমন আছো তুমি?

কেমন আছে তোমার হাতের রেখাগুলো। তোমার ক্যাকটাস। তোমার বারান্দা। তোমার আঙুলগুলো কেমন আছে। আমার স্পর্শ না পেয়ে চুপসে যায় নি তো। তোমার গাল, ঠোঁট, গলা কেমন আছে। জিজ্ঞেস করেছে কখনো? ওরা তৃষ্ণার্ত কি না। তোমার নাভিমৃগের ব্যালকনি কেমন আছে। রুক্ষতা ভর করে নি তো। তোমার পাহাড় কেমন আছে। চাঁদের আলো আছড়ে পড়ে ওখানে? তোমার পিঠ, মেরুদণ্ড কেমন আছে। আমার বুকে লেপটে থাকতে ইচ্ছে করেনা ওদের। তোমার শরীরের পশম কেমন আছে। ওরা চিৎকার করে? আর্তনাদ শুনতে পাও?

হাহাকার করে? শুনতে পাওনা নাকি শুনার চেষ্টা করোনা। মনোযোগ নেই বুঝি! তোমার চুলগুলো কেমন আছে। স্নিগ্ধ গন্ধটা কে নেয় ভোর হলে। নাক গুঁজে থাকে কে। তুমি আস্কারা দাও তো? বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে তোমার তিলগুলো কেমন আছে। মাঝ রাত হলে কে অধর ছোঁয়। কার স্পর্শে উজ্জীবিত হয় দৃশ্যমান সব তিল।

তিতির! তোমার চোখগুলো কেমন আছে। আমাকে খোঁজে? নাকি রাত হলে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভেসে যায় স্মৃতির সৈকতে। যেখানে আমার সৎকার করে গেলে। আমার এপিটাফে এই চিঠি লিখেছি তোমার জন্য। সময় হলে এসে পড়ে নিও।

মেঘফুল ঝরে গেলে বৃষ্টি হয় তোমার সাথে উড়বো ভেবে ঈশ্বরের কাছ থেকে দুটো ডানা নিয়েছি, হাওয়াই ডানা, পাহাড়ের বুকে হাত মেলে দাঁড়ালে ডানা খুলে যাবে প্যারাসুটের মতন। তুমি উড়তে শেখাবে আমায়, আমি পাহাড়ের বুকে আজি দাঁড়িয়ে আছি উদাম শরীরে, গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত যায়, বেলফুল, শিউলিফুল, কদম ঝরে যায়, মরে যায় বকুলতলার কাঠবাদাম, কাঠগোলাপি শুকিয়ে গেছে সেই কবে! তুমি বর্ষার প্রথমে গিয়েছিলে, বর্ষা আসে বর্ষা যায়, তবুও তোমার আসার সময়ের ডাল ঝরে পড়েনা, মৌমাছি মধু রেখে যায়, নিয়ে যায়; ডালিম গাছের হলুদ পাখিটা ঠাঁয় বসে থাকে তোমার আসার পথ চেয়ে, তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে চেনা সব পথ, যে পথে আমাদের পায়ের ছাপ আজও বর্তমান, শুধু তোমার আসার সময় হয়না, আমার ডানায় ভর করেছে তোমার নামের অসড়তা, আর কদিন গেলেই ঝরে যাবে, যেমন আকাশ থেকে ঝরে যায় মেঘফুল।

বিষাদের বেহালা বাদক

পরাজিত সময়ের অস্থিরতায় চাঁদ থেকে খসে পড়ে কান্নার রঙ, তুমি তখন বসে থাকো তোমার ড্রেসিং টেবিলে, চেনা আয়নায় নিজ চোখে দ্যাখো তোমার তলিয়ে যাওয়া, চেনা মানুষ হারিয়ে গেলে কিভাবে বুকের ভেতর ক্ষত হয়! তুমি জানো? সূচালো চিরুনির দাঁতে লেগে যায় তোমার ছেঁড়া চুল, আয়নায় পড়ো আমার জীবনের সতের পৃষ্ঠা, যে পৃষ্ঠাগুলো তোমার নিজ হাতে লেখা, লিখেছো আমাদের জীবনের সচিত্র প্রতিবেদনের চিত্রনাট্য, পেন্সিল স্কেচে এঁকেছো তিপ্পান্নটি বসন্ত, কদম ফুলের নরম কাঁটার দুঃখে তুমি আমি একবৃন্তে বেঁচে থাকার শপথ করেছিলাম, সেই পৃষ্ঠা গ্যাছে ছিঁড়ে, দ্যাখো তিতির দ্যাখো! বুকের ইস্টিশনে অকেজো ট্রেন ঠায় দাঁড়িয়ে, যে ট্রেনে তুমি আসার কথা, এই অযাচিত সমাজের চৌকাঠ থেকে আমাদের পালাবার কথা ধূমকেতুর মত গ্রহ থেকে গৃহ, নক্ষত্র থেকে ক্ষুদ্র সমুদ্র, দৈন্যতা থেকে বন্যতায়, পশুত্ব থেকে শিশুত্ব পরে অমরত্ব; ঘড়ির কাঁটার মত ঘুরে ঘুরে তোমাকে আমি খুঁজি এই বিষাদের শহরে, জরাগ্রস্ত ভায়োলিনে বেজে উঠে তোমার নামের সুর, সময়ের আক্ষরিক অনুবাদের শিরোনামে তুমি সূচনার দুয়ার মেলে রাখো, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত তোমার শহরে আমি বিষাদের বেহালা বাজিয়ে আসবো, যদি কখনো তোমার বুকের কাঁপন জাগে, আমার নিম্ন-মধ্যবিত্ত ভালোবাসার স্মৃতি-বিস্মৃতির অতলে ডু্বে যেও, আমি করুণ বেহালা হাতে নিয়ে তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো, এই মুমূর্ষু আর্তনাদ থেকে মুক্তি দিতে তোমার শ্বাসনালীকে বেহালা ভেবে বসিয়ে দিবো জল্লাদের শাণিত ছুরি, আমার বেহালায় লেগে থাকা বিষাদ ধুয়ে নিবো তোমার উষ্ণ রক্তের প্রলেপে ভুলে ভরা সংশয়ের সংসার থেকে তোমাকে আজ মুক্তি দিলাম বিনিময়ে পুনর্জন্মে একটু ভালোবেসো।

দুঃখের কোরাস

বিকেলের সিম্ফনিতে আমি এঁকে ফেলি সাতরঙা জলছবি, কফির মগের চুমুকে ভেসে উঠে স্মৃতির জাহাজ। মহাপতঙ্গের ডানায় চড়ে চলে যায় দুঃখ জ্বরাক্রান্ত ভাসমান কফিন, সন্ধ্যার অসাধারণ কোরাস চলতে থাকে বুকের ধুলোপড়া হারমোনিকায়, নিতান্ত সব দুঃখ চিংড়ির পায়ে করে এসে আছড়ে পড়ে সেই কফিনের কাঠে, জোনাকির দল লাইটহাউজে ফিরে যায় অন্ধকারে নিমগ্ন জলাশয়ের পথ ধরে, সমুদ্র উত্তাল জলরাশিতে কেঁপে কেঁপে খঞ্জনীর সুরে তীরে এসে ভিড়ে, কোন মানবীর নূপুরে জলতরঙ্গ চুমু খায়, হিম শীতলতায় মানবীর প্রেমিকা মলিন ঠোঁট নিয়ে বাড়ি ফিরে, চোখে মুখে না পাওয়ার বেদনা, তবুও যুবক আশাহত হয়না, প্রেমিকার অপেক্ষায় ভালোবাসাদের গায়ে দেয় কোমল পরশের কম্বল, নকশী কাঁথা, শীতকালীন ওমে তুলতুলে আদরেরা উপুড় হয়ে ঘুমায় পরের সকালকে ধারণ করে।

কবিতার বিষণ্ণতা

বিশুদ্ধ সন্ধ্যায় অস্থির পায়ে বাড়ি ফিরে দেখি দরজা বন্ধ, জানালা বন্ধ, ক্যালেন্ডারে ঝুলে আছে বৈশ্বিক প্রেমের দলিল, বিপত্নীক জোনাকি পাহারা দিয়ে যাচ্ছে ঝুলন্ত দেয়ালিকা, স্থিরচিত্রে কবিতার আক্রোশে চোখে ফুটে আছে রক্তজবার ম্লান মুখ, মুখরোচক বাতচিতে চাঁদের খিড়কিতে চোখ রেখেছে মুগ্ধতা, দূর থেকে ভেসে আসছে অযাচিত ভায়োলিনের পুরনো কোন সুর, যে সুরের করুণে নন্দনকাননে আত্মহত্যা করেছে তেজোদীপ্ত সর্পরাণী, বিষাদের দহনে পুড়ে গেছে অমীমাংসিত খোলস।

রাত বাড়ছে, গভীর থেকে গভীরে, মূল থেকে শিখরে, আরো দূরে, আলো নিভে গেছে বহুত আগেই, একাকীত্বের দ্রোহে ভস্মীভূত হচ্ছে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ।

ক্ষত হওয়া ভঙ্গুর পা নিয়ে আবারো ফিরে গেছে কবিতার দল, হুডখোলা রিক্সা থেকে প্রেমিকার চুলের গন্ধে বায়ু মাতাল, আমি আজ বহু ক্রোশ দূরে, দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির মত পালিয়ে বাঁচি শহরের অলি-গলিতে, একটা কবিতা লেখা হয়নি বলে বিশ্রাম আজ মুক বধির।

কয়েক শব্দ অনুযোগ রেখে গেছে নীলান্তিক সরস মেঘফুল, এই উঠোনে মিশে আছে কয়েক জন্ম পুরনো পদচিহ্ন; যেখানে কোন আবেগ নেই। তবুও এই শিথিলতায় আমি মগজে কবিতা বুনি, ছন্দপতনের বিচারে কবিতা লেখা হয়তো হয়না, কিন্তু কবিতা আমি ছাড়িনি।

আরও পড়ুন- তান্ত্রিকের আখড়ায় আসর জমায় হুতুম পেঁচা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড