সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
প্রতিনিয়ত স্থূলতা আমাদের জন্য বেশ ভয়ংকর একটি সমস্যা হয়ে পড়ছে। একটা সময় স্থূলতা নিয়ে এতোটা চিন্তা করার দরকার পড়েনি। তবে বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম স্থূলতার দ্বারা অনেক বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছে। কারও শরীরের গড় ভর যদি ২৫ এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে তার ওজন বেশি বলে ধরে নেওয়া যায়। আর এই পরিমাণ যদি ৩৫ হয়ে যায়, তাহলে তাকে স্থূল বলা যায়। তবে এশিয়ার এই অঞ্চলের সবার শারীরিক গঠন খানিকটা ছোট হওয়ায়, আমাদের ক্ষেত্রে স্থূলতার জন্য বিএমআই ধরা হয় ৩২ দশমিক ৫।
স্থূলতার ক্ষতিকর দিকগুলো কী?
স্থূলতার বেশিরভাগ ফলাফলই নেতিবাচক। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপারলিপিডেমিয়ার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো বড় রকমের ব্যাপারের পেছনে স্থূলতা বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অনেক সময় মেরুদণ্ডের ব্যথা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদির কারণ হিসেবেও স্থূলতা কাজ করে।
স্থূলতার ভুক্তভোগীরা অনেকসময় হতাশায় ভোগেন এবং তাদের আয়ু কম হয়। স্থূলতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়াটা বেশ কষ্টকর ও দীর্ঘমেয়াদী একটি কাজ। তবে স্থূলতার পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেলে এবং খানিকটা আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে সার্জারির মাধ্যমেও এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
স্থূলতা কমানোর সার্জারি : সাধারণ রকমভেদ
স্থূলতা কমানোর জন্য বর্তমানে সবচাইতে দ্রুত এবং কার্যকরী উপায়টি হচ্ছে সার্জারি। এই সার্জারিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাডজাস্টেবল গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ডিং, ল্যাপারোস্কোপিক স্লিভ গ্যাস্ট্রোক্টোমি এবং ল্যাপারোস্কোপিক রোক্স-এন-ই গ্যাস্ট্রিক বাইপাস। এই সবগুলো সার্জারিই ল্যাপাস্কোপিকালি করা হয়।
এর অর্থ, অপারেশনগুলো করার সময় খুব ছোট ক্ষত তৈরি করা হয়। তাই এটি মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি নামেও পরিচিত। এই পদ্ধতিতে ব্যথা অনেক কম বোধ হয় এবং খুব দ্রুত হাসপাতাল থেকেও ছাড়া পাওয়া যায়। অতীতে যে পদ্ধতিতে এই কাজটি করা হতো, তার তুলনায় বর্তমান সার্জারি পদ্ধতি অনেক সুবিধাজনক। কোনোরকম ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনাও এক্ষেত্রে অনেক কম।
ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাডজাস্টেবল গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ডিং-
ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাডজাস্টেবল গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ডিং-এর ক্ষেত্রে পেটের উপরের অংশে ব্যান্ড প্রবেশ করানো হয়। এতে করে ব্যক্তি কম খাবার গ্রহণ করেন এবং কার্যকরীভাবে চিকন হয়ে যান। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম এবং ইচ্ছা করলেই ব্যান্ড সরিয়ে ফেলা যায়।
ল্যাপারোস্কোপিক স্লিভ গ্যাস্ট্রোক্টোমি-
ল্যাপারোস্কোপিক স্লিভ গ্যাস্ট্রোক্টোমির ক্ষেত্রে পেটে হালকা কেটে, সেখান থেকে পাকস্থলীর প্রায় ৭৫ শতাংশ অংশ বের করে আনা হয়। এই সার্জারির পর পাকস্থলীর আকৃতি দেখতে অনেকটা শার্টের হাতার মতো হয়ে যায়। আর সেজন্যই এই সার্জারির নাম ল্যাপারোস্কোপিক স্লিভ গ্যাস্ট্রোক্টোমি।
পেটের আকৃতি কম করে দেওয়ায় রোগী এক্ষেত্রে বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারেন না এবং ধীরে ধীরে চিকন হয়ে যান। অবশ্য, একটা সময় গিয়ে পেট নিজ থেকে আবার আকৃতি বাড়িয়ে ফেলে। এই সার্জারির ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম ঘটে থাকে।
ল্যাপারোস্কোপিক রোক্স-এন-ই গ্যাস্ট্রিক বাইপাস-
এক্ষেত্রে রোগীর পেটে একটি বাড়তি অন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। ফলে খাবার গ্রহণ ও হজমের একটি অংশ থেকে রোগীর স্বাভাবিক অন্ত্র রেহাই পায়। অন্যান্য সার্জারির তুলনায় নেতিবাচক ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও এই সার্জারি ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার ভুক্তভোগীদের জন্য বেশি কার্যকরী।
সার্জারি বাদে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়?
অনেকসময় শারীরিক নানা সমস্যার কারণে অনেক স্থূল মানুষ সার্জারি করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অবশ্য আপনি ইন্ট্রাগ্যাস্টিক বেলুন ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত, ইন্ট্রাগ্যাস্টিক বেলুন শরীরে গ্যাস্ট্রোস্কোপির মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এ সময় ব্যথারোধক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
এই বেলুন একজন স্থূল ব্যক্তিকে খাবার কম গ্রহণ করতে সাহায্য করে। ফলে ধীরে ধীরে ব্যক্তির স্থূলতা কমে আসে। এতে করে ব্যক্তির পেটে কোনোরকম ক্ষত তৈরি হয় না।
সাধারণত, বেলুন প্রবেশ করানোর ছয় মাস পর সেটি শরীর থেকে বের করে আনা যায়। এর ভেতরেই নিজের ১৫ শতাংশ স্থূলতা কমিয়ে আনতে পারেন যে কেউ। একদিনের মধ্যেই এই সার্জারি করে বাসায় চলে যেতে পারেন রোগী।
তাই, স্থূলতা নিয়ে ভোগান্তি না বাড়িয়ে এখন বেছে নিন যেকোনো একটি সার্জারি এবং হয়ে যান পুরোপুরি সুস্থ।
মূল লেখক- গণেশ রামালিঙ্গাম, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড