• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চিপস ঝুলানোয় মামলার ভয়

স্যারকে ম্যানেজ করলে সমাধান হবে, বললেন পুলিশ সদস্য 

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:২১
পুলিশ
ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর কাফরুলে ময়না জেনারেল স্টোর নামের এক দোকানের সামনে চিপস ঝুলানোয় মামলার ভয় দেখিয়ে দোকানির কাছ থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করেছেন কাফরুল থানা পুলিশ। এমন অভিযোগ দোকান মালিকের।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) কাফরুল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী রায়হান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রেজাউল ও কনস্টেবল শহিদুল ওই দোকানিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেন।

ময়না জেনারেল স্টোরের দোকানি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সেদিন (বৃহস্পতিবার) সকালে ১০/১২ জন পুলিশ এসে দোকানের সামনে থাকা জিনিসগুলো ভেতরে সরিয়ে নিতে বলে। কিন্তু দোকানের একটা সীমানা দেয়া আছে। সেই সীমানার বাইরে দোকানের কোনও মালামাল নেই। বিকালে পুলিশ আবারও এসে অনেক গালাগালি করে। নাম-ঠিকানা নিয়ে মামলার ভয় দেখায়। পাশে থাকা এক পুলিশ সদস্য তখন বলে- ‘স্যার আছে। স্যারের সঙ্গে কথা বলে ম্যানেজ করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে’। পরে অনেক চেষ্টার পর দুই হাজার টাকা নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’

স্থানীয় আরও একাধিক দোকানিও কাফরুল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন। বিভিন্ন সময় মামলার ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছ থেকেও পুলিশ টাকা দাবি করে বলেও জানান আশপাশের দোকানিরা।

এ বিষয়ে কাফরুল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী রায়হান বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) ভাই-ব্রাদার মানুষ। দুই-চার-পাঁচ হাজার টাকার যদি কোনও ঘটনা ঘটে আপনি আমার সঙ্গে সরাসরি এসে চা খেলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। একজনের দোকানের সামনে পুলিশ যেতেই পারে। এর মানে এই না যে আমি টাকা নিয়েছি। যেহেতু আমার টিমের প্রশ্ন তাই ব্যর্থতা বা এর দায়ভারও আমার ঘাড়েই নিচ্ছি। দোকানদারকে পাঠিয়ে দিয়েন। আমার কাছ থেকে এসে টাকা নিয়ে যাবে।’

কাফরুল থানা পুলিশের আরেক উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রেজাউল চ্যালেঞ্জ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি টাকা নিইনি। থানায় এসে দোকানদারকে প্রমাণ করতে বলুন।’

এ ব্যাপারে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় বাংলাদেশ পুলিশের এটা নিত্যদিনের চিত্র। যেকোনোভাবে মানুষকে নাজেহাল করে, ভয় দেখিয়ে, বিপদ্গ্রস্ত করে পুলিশের কতিপয় সদস্য এ ধরনের চাঁদাবাজি চালায়। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেও এটা শুরু করতে হবে পুলিশের মধ্যে থেকেই। সাধারণ মানুষ ক্রমান্বয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সুযোগ পেলে প্রায় সবাইকেই এমন ঘটনার সম্মুখিন করায়। সবাইকেই তারা টার্গেট করে। কিন্তু গরিব-হতদরিদ্র মানুষ যারা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকার চেষ্টা করে তাদের ওপরে জুলুমটা খুব সহজে করা যায় এবং সেই সুযোগটাই নেয় পুলিশ। আর যারা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্ট্রং (শক্তিশালী) তাদের কাছ থেকে পুলিশ সুযোগ সৃষ্টি করে একই কাজ করে। কিন্তু সেটা একজন কনেস্টেবলের পক্ষে সম্ভব না। এ কাজ সাধারণত ঊর্ধ্বতন পুলিশেরাই করে থাকে।’

ওডি/ এজেড

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড