• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাহাড়ের পাদদেশে আখ চাষে কৃষিতে অপার সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা 

  মো. কবির হোসেন, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি)

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬
পাহাড়ের পাদদেশে আখ চাষে কৃষিতে অপার সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা 

দেশের প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আখ। বিশেষ করে দেশে চিনি ও গুড় তৈরিতে আখের ভূমিকা অন্যতম। উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে আখের যথেষ্ট সুনামও রয়েছে। সেই উন্নত জাতের আখ চাষ করেই লাভবান হচ্ছেন রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা।

কাপ্তাইয়ের ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নস্থ বারঘোনা তনচংগ্যার পাড়ায় সরজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে একের পর এক আখের ক্ষেত। যেখানে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা আখ গুলো নজর কাড়ছে পথচারীদের। এছাড়া বর্তমানে ওখানকার প্রায় প্রতিটি আখ ক্ষেতের আখগুলো বেশ পরিপক্ব হওয়ার ফলে দেখতেও বেশ ভালো লাগছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পাইকার ক্রেতারাও আখ ক্ষেত গুলো কিনে নিতে ছুটে যাচ্ছেন চাষিদের দ্বারে দ্বারে।

প্রায় ৪০ শতক জমিতে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত আখ চাষ করে আসছেন বারঘোনার স্থানীয় বাসিন্দা রাশিয়া তনচংগ্যা। তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আখ চাষ শুরু করেছেন তিনি। বিশেষ করে পূর্বে তার পিতা ও দাদারাও এক সময় এই আখ চাষে করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি প্রথম দিকে নিজস্ব অর্থায়নে বাজার থেকে ২০৮ জাতের আখের চাষ শুরু করেন এবং তাতে খুব ভালো সফলতা পান। পরবর্তীকলে গত অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রজেক্ট এর সহযোগিতায় আখের উন্নত জাত রঙবিলাশ এর চাষ শুরু করেছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রায় তার ক্ষেতের আখ গুলো যথেষ্ট পরিপক্ব হয়েছে। ইতিমধ্যে আখগুলো তোলা শুরু করেছেন। প্রতিবছর আখ চাষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করলেও দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন।

বারঘোনার স্থানীয় আরেকজন সফল চাষি মৃণাল তনচংগ্যা। তিনি অন্যান্য ফসল চাষ করলেও বর্তমানে আখ চাষে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। তারও প্রায় ৩৩ শতক জমিতে সরকারী সহযোগিতা এবং নিজস্ব চেষ্টায় তিনি আখ চাষ শুরু করে সফলতা পাচ্ছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতেরও আখগুলো প্রায় পরিপক্ব হওয়ায় অনেক আনন্দিত হয়েছেন তিনি। তাদের আখ চাষের সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক চাষিরাও আখ ক্ষেত করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তিনি জানান।

তবে এলাকায় পানির সমস্যার বিষয়টি তিনি তুলে ধরে বলেন, যদি এই বারঘোনা তনচংগ্যা পাড়ায় পানির সমস্যা দূর করা যায় এবং স্থানীয় চাষিদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় তবে তারা সকলেই উপকৃত হবেন বলে জানান।

আখ ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান, আব্দুর রহিমসহ কয়েকজন ক্রেতা তারা জানান, কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এসব আখের যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখানে আখের দামও অনেক সাশ্রয়ী। অন্য দিকে কাপ্তাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হওয়ার ফলে প্রতি বছরই আমাদের মতো পাইকার ক্রেতারা এই আখ ব্যবসা করে বেশ লাভবান হচ্ছে।

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, আখ আমাদের অর্থকরী ফসল। এক সময় দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য আখ চাষ কমে এসেছিল কিন্তু বর্তমানে আখ চাষে সুদিন ফিরে এসেছে। অনেক চাষিই বর্তমানে আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা কাপ্তাইয়ের আখ চাষিদের আখের ক্ষেতের মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে সরিষা বা অন্যান্য ফসল চাষাবাদে আগ্রহী করে আসছি। এছাড়া সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ের আখ চাষিদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এতে আখ চাষিরা অনেকটা উপকৃত হয়েছে।

সর্বোপরি বলা যায় যে, দেশে প্রয়োজনীয় চিনির চাহিদা মেটানোর জন্য আখ চাষের বিকল্প নেই। তাই কৃষকদের এই অর্থকরী ফসল আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড